chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

উপমহাদেশের প্রধান আধ্যাত্মিক চর্চার প্রাণকেন্দ্র মাইজভান্ডার দরবার

ধর্ম ডেস্ক : গাউসুল আজম শাহ সুফী হযরত মাওলানা সৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভান্ডারী (ক.) প্রবর্তিত একমাত্র তরিকা হচ্ছে মাইজভান্ডারী দর্শন।

মহান আল্লাহ প্রেরিত পবিত্র কোরআন এবং প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর জীবনাদর্শের অমূল্য অনুষঙ্গগুলোকে যথার্থ ধারণ–অনুসরণ–পরিচর্যার মাধ্যমে স্রষ্টার সন্তুষ্টি অর্জন মাইজভান্ডারী দর্শনের মৌলিক ভিত্তি। উপমহাদেশের প্রধান আধ্যাত্মিক চর্চার প্রাণকেন্দ্র মাইজভান্ডার দরবার শরীফ।

চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির হারুয়ালছড়িতে শোকর এ মওলা মঞ্জিলে মাইজভান্ডারী দর্শন শীর্ষক আলোচনা সভা ও মিলাদ মাহফিলে বক্তারা এসব কথা বলেন।

গতকাল শুক্রবার (২৫ মার্চ) রাতে ‘আশেকানে হক ভাণ্ডারি’ সংগঠন কতৃক আয়োজিত এ সভায় সভাপতিত্ব করেন বিশিষ্ট মাইজভান্ডারি গবেষক ও লেখক ‘শোকর এ মওলা মঞ্জিল’র প্রতিষ্ঠাতা শাহেদ আলী চৌধুরী।

আলোচক হিসাবে উপস্থিত ছিলেন মাইজভান্ডার দরবার শরীফের উম্মুল আশেকিন মুনাওয়ারা বেগম এতিমখানা ও হেফজখানার সিনিয়র শিক্ষক হাফেজ মাওলানা আবুল কালাম, বাংলাদেশ -ভারত মৈত্রী সমিতির সাধারণ সম্পাদক বিশিষ্ট তথ্য প্রযুক্তিবিদ ড. ফয়সাল কামাল চৌধুরী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবী বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মুহাম্মদ নুর হোসাইন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্ব বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন চৌধুরী। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেছেন নেওয়াজ শাহরিয়ার আসিফ।

স্বাগত বক্তব্য দেন জয়নাল আবেদিন তাওরাত। সভায় কৃতি শিক্ষার্থীদের পুরস্কার, দুস্থদের মাঝে আথিক অনুদানের চেক ও সেলাই মেশিন বিতরণ করা হয়।

বক্তারা বলেন, মাইজভান্ডার দরবার শরীফ কেবল একটি দর্শন, পারলৌকিক সাধনা কিংবা চেতনার নাম নয় বরং একটি মানবতাবাদী, অসাম্প্রদায়িক এবং বিচারসাম্য মূলক সমাজ বিনির্মাণের সংগ্রাম।

এই দর্শন সব ধরনের গোঁড়ামি ও মানবতাবিরোধী অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে সামাজিক–রাজনৈতিক–ধর্মীয় এবং অর্থনৈতিক বিপ্লব।”

সভাপতির বক্তব্যে শাহেদ আলী চৌধুরী বলেন, “মাইজভান্ডার দরবার খোদায়ি শক্তির কেন্দ্রবিন্দু। এটি কেবল আল্লাহর অলীদের দরবার নয়। এটি অলী তৈরির কারখানা।

মানবতার চেতনায় উজ্জীবিত ব্যক্তিত্ব তৈরি করাই মাইজভান্ডারি দর্শনের লক্ষ্য। এই দর্শন মানুষকে সত্য উপলব্ধির দিকে আহবান করে। মানুষকে আল্লাহর স্মরণ করতে, অন্যকে স্মরণ করাতে এবং নিজে স্মরণে থাকতে শিক্ষা দেয়। আমাদের বিশ্বাস যত দৃঢ় হবে ততই বিশ্বাস জেগে উঠবে।

বিশ্বাসে যখন পূর্ণতা এসে যাবে তখন আল্লাহর ইচ্ছাশক্তি স্বয়ংক্রিয়ভাবে আমাদের মাঝে বিকশিত হবে। মানুষের নিজস্ব কোন ক্ষমতা নেই। মানুষ হচ্ছে সমাজের আয়না স্বরূপ।

মাইজভান্ডার দরবার দোহায় দেওয়ার বিষয় নয়। এটা কর্ম গুণে প্রকাশ হয়। মুসলমান শব্দের অর্থ মাহাত্মবাদ। যিনি মহান আল্লাহর মাঝে বিলীন হয়েছেন তিনিই প্রকৃত মুসলমান।”

‘বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় তাওহীদে আদিয়ানের গুরুত্ব’ শীর্ষক আলোচনায় অংশ নিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবী বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ নুর হোসাইন বলেন, “সুফি ঘরানার মানুষ প্রগতিশীল। সত্যিকার ইসলামও প্রগতিশীলতার কথা বলে। সুফিবাদ প্রগতিশীলতার কথা বলে।

তিনি বলেন, সুফিরা মাতৃভাষা নিয়ে কাজ করেন। দেশপ্রেমের কথা বলেন। সুফিরা স্বাধীনতার পক্ষে ছিলেন। তাওহীদে আদিয়ান মানে সব ধর্ম ও মানুষকে একত্রিত করা। মাইজভান্ডারকে বুঝতে হলে সুফিবাদ বুঝতে হবে। অনেক গভীরে যেতে হবে। সুফিবাদের শিক্ষা হলো-বিশ্বের সব মানুষকে নিয়ে একসাথে শান্তিতে থাকব।

কেউ যদি আমার ধর্ম বা আদর্শ গ্রহণ না করে তার ওপর আমি আক্রমণ করব না। তাকে ঠকাব না। তাকে বাংলাদেশের নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করব না।

প্রতিবেশী হিসেবে অন্য ধর্মের অনুসারীদের সাথে বিমাতাসূলভ আচরণ করব না। এটা যদি হয়ে থাকে আপনি প্রকৃত মুসলিম। যারা বিনিময় চায় না তারাই হেদায়েত প্রাপ্ত। আমরা তাদেরকেই অনুসরণ করব। আর তরিকত মানে হচ্ছে বিনয়।

তরিকতের অনুসারীরা বিদ্বেষ পোষণ করেন না। যদি রাজনৈতিক ও অথনৈতিক পরিমণ্ডলে যদি বিনয় চলে আসে তাহলে আমরা বিশ্বকে জয় করতে পারব। শান্তি প্রতিষ্ঠা হবে। আর এটাই হচ্ছে তাওহীদে আদিয়ানের শিক্ষা।”

সামাজিক ও বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সুফিবাদের গুরুত্ব শীর্ষক আলোচনায় অংশ নিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ব বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন চৌধুরী বলেন, “সুফিবাদ মানে সমাজের কল্যাণ আর কল্যাণ।সভায় ‘ধর্মীয় উগ্রবাদ রোধে সুফিবাদের গুরুত্ব’ শীর্ষক আলোচনায় অংশ নেন বাংলাদেশ ভারত মৈত্রী সমিতির সাধারণ সম্পাদক বিশিষ্ট তথ্য প্রযুক্তিবিদ ড. ফয়সাল কামাল চৌধুরী।

ড. ফয়সাল কামাল বলেন, বিশ্বঅলী শাহানশাহ জিয়াউল হক মাইজভান্ডারির বলেছেন “হালাল খাও, নামাজ পড়, আল্লাহ আল্লাহ জিকির কর, সব সমস্যা মিটে যাবে” তার এই বাণীতেই জীবনের সব ফিলোসপি বিদ্যমান। আর আল্লাহর মহান এ অলীর তিনটি কথাই সুফিবাদের মূলমন্ত্র।

সুফিবাদ আত্মাকেন্দ্রিক বিষয়। এটি চর্ম চক্ষু দিয়ে দেখার বিষয় নয়। এটা অনুধাবন ও অনুভূতির বিষয়। অনুধাবন ও অনুভূতি আসে চর্চা থেকে, মেডিটেশন থেকে। মেডিটেশন হচ্ছে আধ্যাত্মিক ধ্যান।

আমি নামাজ পড়ছি কিন্তু সাম্প্রদায়িক আচরণ করছি। আমি রোজা রাখছি কিন্তু হালাল- হারামের মধ্যে বিভেদ করছি না। আমি যাকাত দিচ্ছি কিন্তু অন্যায় উপায়ে টাকা ইনকাম করছি। তাহলে ইসলামের চর্চা আমাদের আত্মিক জগতে কি পরিবতন আনল, প্রশ্ন রাখেন ড. ফয়সাল।

সভায় ‘বেলায়েতে মোতলাকার আলোকে মাইজভান্ডারি দর্শন’ শীর্ষক আলোচনা করেন উম্মুল আশেকিন মুনাওয়ারা বেগম এতিমখানা ও হেফজখানার সিনিয়র শিক্ষক হাফেজ মাওলানা আবুল কালাম।

চখ/আর এস

এই বিভাগের আরও খবর