chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

তাপদাহে চট্টগ্রামে পানির জন্য হাহাকার

তীব্র তাপদাহে চট্টগ্রামে দেখা দিয়েছে সুপেয় পানির সংকট। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে নগরবাসী।

গরমে পানির চাহিদা বাড়লেও তার জোগান দিতে পারছে না সেবাদানকারী সংস্থা চট্টগ্রাম ওয়াসা। খেতে হচ্ছে লবণপানি। কারণ কাপ্তাই হ্রদে পানির পরিমাণ কমে যাওয়ায় বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ছাড়া হচ্ছে তেমন পানি। যা কর্ণফুলী ও হালদা নদী দিয়ে সাগরের পানি উজানের দিকে যেতে না পারায় লবণাক্ততা থেকে রক্ষা পায় এবং এ পানি পরিশোধন করে নগরবাসীর মধ্যে সরবরাহ করে চট্টগ্রাম ওয়াসা। নেই তেমন বৃষ্টিপাতও। এতে সাগরের পানি উজানে উঠে আসায় লবণাক্ত হয়ে পড়েছে নদীর পানি। যার ফলে ওয়াসা যে পানি সরবরাহ করছে সে পানিতে লবণাক্ততা থেকেই যাচ্ছে। এছাড়া নদীর পানিতে লবণাক্ততার মাত্রা বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি শ্যাওলা জন্মেছে।

কাপ্তাইয়ের কর্ণফুলী জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক এটিএম আব্দুজ্জাহের বলেন, পর্যাপ্ত পানির অভাবে কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের পাঁচটি ইউনিটের মধ্যে চারটিই বর্তমানে বন্ধ। ২৩০ মেগাওয়াটের পাঁচটি ইউনিটের ৫০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার একটি ইউনিট চালু থাকলেও তা থেকে পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। কেবল বৃষ্টি হলেই এ সমস্যার সমাধান হবে বলে মনে করছেন তারা। পানির লেভেল ৬৮ এমএসএল-এ নেমে গেলে পানি ছাড়া এবং বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। পানি যেভাবে কমে যাচ্ছে, তাতে বাকি এক ইউনিটের বিদ্যুৎ উৎপাদনও বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এমনটি হলে নদীতে লবণাক্ততার মাত্রা আরো বৃদ্ধি পাবে।

ওয়াসা কর্তৃপক্ষ জানায়, নগরবাসীর চাহিদামতো পানি তারা উৎপাদন করতে পারছে না। যার কারণে এলাকাভেদে ‘রেশনিং’ করে পানি সরবরাহ করছে তারা। জোয়ারের সময় সাগরের পানি ঢুকে পড়ার ফলে ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা বন্ধ রাখতে হয় ওয়াসার পানি উৎপাদন। এতে করে উৎপাদন কমে যায়। বিভিন্ন শোধনাগার ও গভীর নলকূপ থেকে ওয়াসার পানির উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় ৫০ কোটি লিটার। কিন্তু বর্তমানে ৪০ কোটি লিটারের বেশি পানি উৎপাদন করা যাচ্ছে না। ফলে নগরের অনেক এলাকায় লেগে আছে পানির সংকট। দুর্ভোগ পোহাচ্ছে সেসব এলাকার মানুষ। এ অবস্থায় পরিস্থিতি সামাল দিতে বিভিন্ন এলাকায় রেশনিং করা হচ্ছে। বৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত এ ধরনের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে না।

চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদুল আলম বলেন, নগরীতে যেখানে দৈনিক ৫০ কোটি লিটার পানির চাহিদা থাকে সেখানে তারা উৎপাদন করতে পারছে ৩৫ কোটি লিটার। এ পানি সংকটের কারণ নদীর পানিতে লবণাক্ততার মাত্রা বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি শ্যাওলা জন্মেছে। পুকুরের পানিতে যে ধরনের শ্যাওলা জন্মায়, এবছর নদীর পানিতেও একই ধরনের শ্যাওলা জন্মেছে। সে কারণে আমাদের ফিল্টার মেশিনে ময়লা ধরে যাচ্ছে। সেটা আবার পরিষ্কার করতে হচ্ছে। যার কারণে প্রতিদিনই ১০-১৫ কোটি লিটার পানির অপচয় হচ্ছে। চাহিদা অনুযায়ী পানি না পাওয়ায় আগে যেখানে ২৪ ঘণ্টা পানি যেত, সেসব এলাকায় রেশনিং করে পানি দিতে হচ্ছে। যাতে সবাই পানি পায়। বৃষ্টি না হওয়ায় ওয়াসা কর্তৃপক্ষ ‘কেমিকেল ট্রিটমেন্ট’ পদ্ধতিতে পানির উৎপাদন বাড়ানোর চেষ্টা করছে। এ প্রক্রিয়ায় তারা সফল হলে পানির ঘাটতি কমানো সম্ভবপর হবে।

চট্টগ্রাম ওয়াসার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম বলেন, কাপ্তাই হ্রদের পানি কমে যাওয়ায় পর্যাপ্ত পানি ছাড়া হচ্ছে না। ফলে সাগরের পানি উঠে আসছে উজানে। তবে বৃষ্টিপাত হলে এবং হ্রদে পানি বাড়লে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে। রিভার্স অসমোসিস প্রক্রিয়ায় পানি লবণমুক্ত করা যায়। যা খুব ব্যয়বহুল প্রক্রিয়া। প্রতি লিটার পানি রিভার্স অসমোসিস করতে খরচ পড়ে ৮০ থেকে ৯০ টাকা। সেদিকে না গিয়ে গভীর নলকূপ থেকে পাওয়া পানি কর্ণফুলীর পানির সঙ্গে ‘ব্লেন্ড’ করে লবণের মাত্রা কিছুটা সহনীয় পর্যায়ে রেখে সরবরাহ করা হচ্ছে।

চট্টগ্রাম নাগরিক উদ্যোগের প্রধান উপদেষ্টা ও সিটি কর্পোরেশনের সাবেক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন বলেন, ওয়াসার কর্মকর্তাদের ব্যর্থতার কারণে নগরবাসীকে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী পানি সরবরাহ করতে পারছে না ওয়াসা। যে পানি সরবরাহ করছে, তাও লবণাক্ত। প্রধানমন্ত্রীর আগ্রহে বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। ফলে পানির সংকট থাকার কথা নয়।

অতিরিক্ত লবণ পানি পানের ফলে মানুষের শরীরে দেখা গেছে উচ্চ রক্তচাপসহ নানা সমস্যা। এছাড়া যাদের কিডনি রোগের উপসর্গ দেখা দিচ্ছে। এছাড়া লবণ পানি পানের ফলে দ্রুত কিডনি নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করছেন চিকিৎসকরা।

চট্টগ্রামের বেসরকারি ন্যাশনাল হাসপাতালের পরিচালক ডা. আমজাদ হোসেন বলেন, অতিরিক্ত লবণ পানি মানুষের উচ্চ রক্তচাপ সৃষ্টির পাশাপাশি কিডনি নষ্ট করে দেয়। যেসব মানুষের কিডনি রোগের উপসর্গ রয়েছে, তারা যদি এ ধরনের পানি পান করেন, তাদের দ্রুত কিডনি নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। শুধু তাই নয় লবণাক্ত পানি অব্যাহত ভাবে পান করলে রক্তনালি অকেজো হয়ে যেতে পারে। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য লবণাক্ত পানি সাংঘাতিক ক্ষতিকর।

 

মুন/চখ

এই বিভাগের আরও খবর