chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

শেষ ১০ রোজায় ‘ভয়াবহ’ হতে পারে চট্টগ্রামের যানজট

রমজান মাস এলেই বাড়ে যানবাহনের চাপ, বাড়ে মানুষের চলাচল। তাতে নির্দিষ্ট মাপের সড়কের ওপর পড়ে বাড়তি চাপ। ফলে যানজট কিংবা যানবাহনের ধীর গতিতে রুদ্ধ হয় রাজপথ। তাতে ইফতার কেন্দ্রীক যানজটে নাকাল হয় নগরবাসী। প্রতি বছরের চিত্র এমন হলেও এবার সামনের অবস্থা আরও ভয়াবহ হওয়ার আশঙ্কা খোদ সিএমপির ট্রাফিক বিভাগেরই। ইতোমধ্যে ট্রাফিক বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তা থেকে শুরু করে কনস্টেবল পর্যন্ত রাতদিন পালা করে সড়কে নিরলস কাজ করছেন ট্রাফিক জ্যাম নিরসনে। এরপরও কোথাও কোথাও সকালে, দুপুরে কিংবা ইফতারের সময় যানজট হচ্ছেই হচ্ছে। 

নগরী নিউমাকেট মোড় রমজানের প্রথম দিন থেকে চট্টগ্রাম নগরের প্রধান সড়কগুলোর মোড়ে মোড়ে কিছুক্ষণের জন্য হলেও যানজটে জনজীবন স্থবির হয়ে পডছে। বিশেষ করে যানবাহনের বাড়তি চাপের কারণে সিগন্যাল পার হতে ১০ থেকে ৩০ মিনিট পর্যন্ত সময় লাগছে। এই চাপ অনেক দূর পর্যন্ত গিয়ে ঠেকছে। ফলে রমজান আর চৈত্রের তীব্র গরমে যানজটে আটকা পড়ে নাকাল হচ্ছে মানুষ। এই চাপটা দশ রমজানের পর আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা ট্রাফিক বিভাগের। সেজন্য তারা বেশ কিছু উদ্যোগের পাশাপাশি বাড়তি ফোর্সও মোতায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতো কিছুর পরও নির্দিষ্ট পরিমাণ সড়কে বাড়তি যানবাহনের পাশাপাশি নগরমুখী বাড়তি মানুষের চাপ সামলাতে পারবে কিনা সেটাই এখন দেখার বিষয়।

ট্রাফিক পুলিশের সরল বলছে — রমজান মাসে সাধারণ যানবাহন ও মানুষের চাপ বেশি থাকে অন্য সময়ের তুলনায়। এবার তাদের সামনে চ্যালেঞ্জ হয়ে দাড়িয়েছে নতুন দুটি জিনিস। প্রথমত, আগের রমজান মাসে স্কুল কলেজ বন্ধ থাকলেও এবার ২০ এপ্রিল পর্যন্ত এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো খোলা থাকছে। ফলে সকালে ও দুপুরের দিকে স্কুল-কলেজ কেন্দ্রীক যানজটটা নতুন করে সৃষ্টি হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, সিটি করপোরেশন ও সিডিএ’র নানা উন্নয়নমূলক প্রকল্পের কাজ চলমান থাকায় সড়ক অনেকটাই সংকীর্ণ হয়ে পড়েছে। ফলে এসব কারণে কোথাও কোথাও তীব্র যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।

শেষ ১০ রোজায় ‘ভয়াবহ’ হতে পারে চট্টগ্রামের যানজট 1এরআগে থেকেও রমজান এলেই ফুটপাতজুড়ে এমনকি সড়কেই হকাররা পণ্যের পসরা নিয়ে বসে যাওয়া, মার্কেট কেন্দ্রীক সড়কে পার্কিং ছিল যানজটের অন্যতম কারণ। এবার নতুন দুটি কারণ ভাবাচ্ছে ট্রাফিক বিভাগকে। সেকারণে আগামী ১০ রমজানের পর যানজট আরও বাড়ার আশঙ্কাকে উড়িয়ে দিচ্ছেন না সিএমপির ট্রাফিক বিভাগের কর্মকর্তারা। 

সরেজমিনে গত তিন দিন নগরের বিভিন্ন সড়ক ঘুরে দেখা যায়, কাপ্তাই রাস্তার মাথা, বহদ্দারহাট মোড়, নতুন ব্রিজ, বকশিরহাট মোড়, নিউ মার্কেট, আমতল, ২ নম্বর গেট, জিইসি মোড়, টাইগারপাস মোড়, আগ্রাবাদ, বড়পোল, বারিক বিল্ডিং মোড়, ইপিজেড, ও কাটগড় এলাকায় রোজা রেখে মিনিটের পর মিনিট বসে থাকছে হচ্ছে যানজটে আটকা পড়ে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েন অফিসগামী মানুষ ও শিক্ষার্থী।

শেষ ১০ রোজায় ‘ভয়াবহ’ হতে পারে চট্টগ্রামের যানজট 2সিএমপির ট্রাফিক উত্তর বিভাগের কনস্টেবল নজরুল নাসিরবাদ উইম্যান কলেজ মোড়ে দায়িত্ব পালকালীন সময়ে যানজট প্রসঙ্গে বলেন, ‘যানবাহনের যে চাপ তাতে সীমিত জনবল দিয়ে সামলানো কঠিন হয়ে পড়ে আমাদের। রোজা রেখে সারাক্ষণ এই তপ্ত রোদে দাঁড়িয়ে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ কষ্টকর। এমনকি সময়মত ইফতারও করার সুযোগ হয়ে উঠে না। এই সমস্যাটি উত্তরণ হতো যদি ম্যানুয়েলের বদলে অটো ট্রাফিক সিস্টেম ব্যবস্থা কার্যকর থাকতো।’ 

এ ট্রাফিক কনস্টেবলের কথার সত্যতা মিলে সিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) শ্যামল কুমার নাথের কথাতেও। তিনি বলেন, ‘আমাদের চার জোনে প্রায় সাড়ে ছয়শ জনবল দুই শিফটে যানজট নিরসনে কাজ করছে। এমনকি আমাদের সিনিয়র অফিসাররাও মাঠে মনিটরিং কাজ করছেন। আমি নিজেও ইফতারের আগ মুহুর্তে মাঠে রয়েছি। আমরা সাধ্যের মধ্যে চেষ্টা চালিয়ে গেলেও ঈদ যতই ঘনিয়ে আসবে ততই চাপ বাড়বে। মার্কেট কেন্দ্রীক যানজটের পাশাপাশি নগরের বিভিন্নস্থানে যে উন্নয়ন কাজ হচ্ছে তার প্রভাব সরাসরি সড়কে পড়ছে। ফলে গাড়ি চলাচলের গতি কমছে, তৈরি হচ্ছে যানজট।’

একই প্রসঙ্গে সিএমপির ট্রাফিক উত্তর বিভাগের উপ-কমিশনার জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘আমাদের সীমিত জনবল দিয়ে দুই শিফটে পালা করে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার কাজ করে যাচ্ছি। আমি নিজেও মাঠে থেকে মনিটরিং করছি। দশ রমজান থেকে যানবাহনের চাপ বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। সেকারণে সেসময় বাড়তি জনবল চেয়ে ইতোমধ্যে সিএমপিতে আবেদন করা হয়েছে। তাছাড়া মাকের্ট কেন্দ্রীক যানজট নিরসনে তাদের নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তবে এবার রমজানে স্কুল কলেজ খোলার থাকার কারণে একটি নির্দিষ্ট সময়ে যেমন যানজট হচ্ছে তেমনি সড়কে খোড়াখোড়ির কারণেও যানজট হচ্ছে।’ 

একই কথা জানিয়ে সিএমপির ট্রাফিক দক্ষিণ বিভাগের উপ কমিশনার এন এম নাসিরুদ্দীন বলেন, ‘মার্কেট কেন্দ্রীক যানজট নিরসনে পালা করে ট্রাফিক পুলিশ মোতায়নের পাশাপাশি বাড়তি ফোর্স ইতোমধ্যে মোতায়ন করা হয়েছে। সামনে আরও মোতায়ন করা হবে। বিশেষ করে রিয়াজুদ্দীন বাজার, বকশিরহাট কেন্দ্রীক যানজট নিরসনে ব্যবসায়ী সমিতির সহযোগিতায় কাজ করা হচ্ছে। অন্যদিকে চাক্তাই খাতুনগঞ্জে কোন গাড়ি বকশিরহাট দিয়ে প্রবেশের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না, এসব গাড়ি জেল রোড দিয়ে প্রবেশ করছে।’

নগরের প্রধান সড়ক বিমান বন্দর সড়কের দেওয়ানহাট থেকে কাটগড় পর্যন্ত সিডিএর এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের র‍্যাপের   কাজের কারণে ওই সড়কে কিছুটা যানজট আছে । এখন রমজান মাসে তার চাপ আরও বেড়েছে। যা সিএমপির বন্দর বিভাগের আওতাধীন।

কীভাবে যানজট নিয়ন্ত্রণে কাজ করা হচ্ছে জানতে চাইলে বন্দর বিভাগের উপ কমিশনার শাকিলা সোলতানা বলেন, ‘প্রথমত বন্দর বিভাগে এলিভেটেডে এক্সপ্রেসওয়ের কারণে সড়ক সংকীর্ণ হওয়ায় যানজট হতো আগে থেকেই। এখন রমজানে সেটা স্বাভাবিকভাবেই বাড়ার কথা। তবে আমরা পালা করে পরিকল্পনামাফিক কাজ করছি। এ পর্যন্ত দীর্ঘ কোন যানজট হয়নি। সামনেরটা এখনও বলতে পারছি না। তাছাড়া পণ্যবাহী ভারী যানবাহনগুলো দুপুর তিনটার পর থেকে ইফতারের আগ পর্যন্ত নগরে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। ফলে আশা করি যানজটে এতো ভোগাবে না নতুন করে।’

চখ/জুইম

এই বিভাগের আরও খবর