chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

ধান চাষ বাদ দিয়ে ঘাস চাষের দিকে ঝুঁকছে কৃষকরা!

কর্ণফুলীর সংখ্যাগরিষ্ট কৃষকেরা ধান চাষ করা বাদ দিয়ে নেপিয়ার ঘাস চাষের দিকে ঝুঁকে পড়ছেন। বিগত কয়েক বছর ধরে কৃষকেরা নেপিয়ার ঘাস চাষে ধানের চেয়ে বেশি লাভবান হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন। যদিও যে জমিতে একবার ঘাস চাষ করা হয়। সে জমিতে পুনরায় ধান চাষ করা কঠিন হয়ে পড়ে। তিন বছর ধরে ঘাস উঠতে থাকে বলে মন্তব্য করেছেন কৃষিবিদরা।

এ উপজেলায় তিন শতাধিক গরুর খামারে গবাদিপশু রয়েছে। এসব গবাদি পশুর খামারগুলোতে গো-খাদ্যের চাহিদা নিশ্চিত করতে, উপজেলার বিঘা বিঘা জমিতে উন্নত জাতের নেপিয়ার ঘাসের চাষাবাদ করছে কৃষক ও খামারিরা।

দেখা যায়, কর্ণফুলীর চরলক্ষ্যা, শিকলবাহা, জুলধা, বড়উঠান ও চরপাথরঘাটা ইউনিয়নের বিভিন্ন জায়গায় ঘাসের ক্ষেত রয়েছে প্রচুর। যে খোলা মাঠে ধান চাষ দেখার কথা সেখানে সব ঘাসের বিচরণ। দুর থেকে দেখলে মনে হবে ধানের মাঠ। আসলে  সবই ঘাস। তবে এখনো বড়উঠানের কিছু জমিতে ধান চাষ হয় বলে ইউপি চেয়ারম্যান দিদারুল আলম জানান।

অপরদিকে, ঘাস চাষিদের দাবি এতে তাঁদের পরিবারে স্বচ্ছলতা আসছে। অন্যান্য ফসলের তুলনায় চাষাবাদে ঝামেলা কম। লাভ ও বেশি হওয়ায় তাঁরা ঘাসের চাষ করছেন। বিগত ৯ বছর ধরে শুধু এ ঘাসের চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন অনেকেই।

সূত্রে জানা গেছে, মিল্ক ভিটার কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর থেকে কর্ণফুলীতে গাভীর খামার স্থাপনে আগ্রহী হয়ে উঠছেন অনেকেই। দুধের মোটামুটি ভালো দাম পাওয়ার, নতুন নতুন খামার গড়ে তুলেছেন। এ কারণেই উপজেলায় ব্যাপকভাবে শুরু হয় নেপিয়ার ঘাসের চাষ। এছাড়াও ধানের দাম না পাওয়া ও একটা কারণ বলে উল্লেখ করেছেন চাষীরা।

তথ্য মতে, এখানে উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস না থাকলেও অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা পটিয়ার কৃষি অফিস সুত্রে জানা যায়, ‘চলতি বছরেও শুধু কর্ণফুলী উপজেলাতেই নেপিয়ার ঘাসের চাষ হয়েছে অধিকাংশ জমিতে। এখানকার কৃষকেরা বোরো ধানের জমিতে ঘাস চাষ করেছেন কয়েক বছর ধরে। দিন দিন মিলকারখানা ও নতুন আবাসস্থল তৈরী হওয়াতে যদিও কমে যাচ্ছে কৃষি জমি।’

উপজেলার শিকলবাহা ইউনিয়নের কৃষক শফিকুল আলম জানান, ‘প্রয়াত সংসদ বাবু মিয়ার আমলে এজে চৌধুরী কলেজে স্থানীয় কৃষকদের কৃষিকার্ড দেওয়া হয়েছিল। আমরা এরপর হতে কৃষি অফিস থেকে কোন ধরনের পরামর্শ ও সাহায্য সহযোগিতা পাইনি।

ফলে নিজেরাই নেপিয়ার ঘাসের চারা রোপণ করি এবং ঘাসের ফলন ভালো হচ্ছে দেখে ঘাস চাষ শুরু করি। তারচেয়ে বড় কথা আমাদের এখানে চারপাশে ঘাস চাষ হয়। ধান চাষ করলেও পোকায় নষ্ট হয়ে যায়।’

মো. হারুন নামে শিকলবাহার কৃষক বলেন, ‘আমরা গরু পালন করি তাই ঘাস চাষ করি। বহু বছর যাবত করতেছি। এক বিঘা জমিতে নেপিয়ার ঘাসের চারা রোপণ করে বেশ লাভবান হই। এরপর থেকে আস্তে আস্তে ১৫ বিঘা জমিতে নেপিয়ার ঘাসের চাষ করি। বছরে নেপিয়ার ঘাসের প্লট থেকে ৭-৮ বার ঘাস কাটা হয়।’

তিনি আরো জানান, ‘এক বিঘা জমিতে খরচ হয় ৬-৭ হাজার টাকা। খরচ বাদে প্রতি বিঘায় তিনি লাভ করেছেন ৩০-৩৫ হাজার টাকা। এ ঘাসের চাষে অন্যান্য ফসলের তুলনায় সার, কীটনাশক ও মজুরি কম লাগে, উৎপাদন করে লাভও বেশি হয়। তাই ধান বাদ দিয়ে ঘাস চাষের দিকে ঝুকছে স্থানীয় চাষীরা এমন মন্তব্য করেন তিনি।’

কর্ণফুলীর প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা রুম্মান তালুকতার জানান, ‘মায়ের দুধের যেমন কোনো বিকল্প নেই, তেমনি গবাদি প্রাণী পালনে উন্নত জাতের ঘাস চাষের কোনো বিকল্প নেই। ঘাস দুগ্ধ বৃদ্ধিসহ প্রাণীরোগ প্রতিরোধ ও প্রজনন ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়ক হিসেবে কাজ করে। সে সাথে আর্থিক লাভবান তো রয়েছেই।’

এ ব্যাপারে আরেক কৃষি কর্মকর্তা আদর্শ সরকার বলেন, ‘কর্ণফুলীতে যে পরিমাণ গরুর খামার রয়েছে এসব খামারীদের প্রয়োজনে তাঁরা নিজেরাই নেপিয়ার ঘাস চাষ করে। আবার অন্যের কাছে এ ঘাষ বিক্রি করে টাকা আয় করে। মাঝে মধ্যে আমরা তাঁদের ঘাস চাষের পদ্ধতি সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকি। প্রকৃতপক্ষে এ ঘাস একটি লাভজনক চাষাবাদ।’

  • ফখ|মআ|চখ
এই বিভাগের আরও খবর