chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

চট্টগ্রামে চুক্তি করেও সরকারি গুদামে চাল দিচ্ছে না মিলাররা

ধান-চাল সংগ্রহের তিন মাস আগে বাজার যাচাই করে এবং মিলারদের সঙ্গে কথা বলে সরকারি ক্রয় মূল্য নির্ধারণ করেছিল চট্টগ্রাম জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক। তবে এখন কেউ গুদামে চুক্তি অনুযায়ি চাল দিচ্ছে না মিলাররা।

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সুমাইয়্যা নাজনীন বলেন, গুদামে চাল না দেওয়া ও চালের বাজারে অস্থিরতার কারণ খোঁজা হচ্ছে। এই অস্থিরতার পেছনে কারা জড়িত, তাদের খুঁজে বের করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

চট্টগ্রামে এবার বিভাগের ১১ জেলায় ২৭ হাজার ৭৩৫ মেট্রিক টন আমন সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। বিপরীতে গত দেড় মাসে মাত্র ১২০০ মেট্রিক টন আমন ধান সংগ্রহ হয়েছে।

সংশ্লিষ্টদের ধারণা, সরকার আমন ধান সংগ্রহের যে মূল্য নির্ধারণ করেছে, কৃষকেরা সেই মূল্যে ধান বিক্রি করতে আগ্রহী নন।

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের দফতর সূত্র জানায়, সারা দেশে গত ২৩ নভেম্বর থেকে ২০২৩-২৪ সালের আমন সংগ্রহ শুরু হয়েছে। এবার সাত লাখ টন চাল ও ধান কিনবে সরকার। এর মধ্যে দুই লাখ টন ধান ও পাঁচ লাখ টন চাল।

তারমধ্যে চার লাখ মেট্রিক টন সেদ্ধ চাল ৪৪ টাকা কেজি দরে ও এক লাখ মেট্রিক টন আতপ চাল ৪৩ টাকা কেজি দরে কেনা হবে। আর দুই লাখ টন ধান কেনা হবে ৩০ টাকা কেজি দরে। বর্তমানে সরকারি গুদামে খাদ্যশস্য মজুত আছে ১৭ লাখ ৭৩ হাজার মেট্রিক টন।

সূত্র আরও জানায়, আপৎকালীন খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত ও গরিব মানুষদের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি আওতায় খাদ্যপণ্য দেওয়ার জন্য এই ধান-চাল সংগ্রহ করছে সরকার।

চট্টগ্রাম বিভাগের ১১ জেলার ৩ সিএসডি গুদাম ও ১০৫টি উপজেলায় ১১০টি গুদামে চলতি আমন মৌসুমের ধান-চাল সংগ্রহ কার্যক্রম শুরু হয়েছে দেড় মাস আগে। ২৭ হাজার ৭৩৫ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহের বিপরীতে সংগ্রহ হয়েছে মাত্র ১২০০ মেট্রিক টন। আর ৫৭ হাজার ২৮ মেট্রিক টন আতপ চাল সংগ্রহের বিপরীতে ৪ হাজার ৮০০ মেট্রিক টন এবং ৪৫ হাজার ৬৪৬ মেট্রিক টন সিদ্ধ চাল সংগ্রহের বিপরীতে ২৯ হাজার ২০০ মেট্রিক টন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চলমান ধান-চাল সংগ্রহ অভিযানে জেলায় দুটি সিএসডি ও ১৬টি এলএসডি সরকারি গুদামে ৬ হাজার ১৪৬ মেট্রিক আমন টন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে দুটি গুদামে ধান সংগ্রহ হয়েছে মাত্র ৫৬ মেট্রিক টন। জেলার নাজিরহাট এলএসডিতে ৩০ মেট্রিক টন ও বোয়ালখালী এলএসডিতে ২৬ মেট্রিক টন।

এ ছাড়া জেলায় আরও ১৫ হাজার ৮০৭ মেট্রিক টন আতপ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। বিপরীতে একই সময়ে মাত্র ৬২ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহ হয়েছে। একইভাবে ৮০৬ মেট্রিক টন সিদ্ধ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও এই পর্যন্ত ৫১১ মেট্রিক টন সিদ্ধ চাল সংগ্রহ হয়েছে।

চট্টগ্রাম বিভাগীয় খাদ্য নিয়ন্ত্রকের দপ্তরের সহকারী উপ নিয়ন্ত্রক (এডিডি) দোলন দেব বলেন, ‘ধানের বাজার বেশি থাকায় কৃষকেরা সরকারি দামে ধান বিক্রি করতে চান না।’

অভিযোগ রয়েছে, পুরো চালের বাজারই সিন্ডিকেটের কবলে। প্রতিটি গুদামেই সরকারের নিয়মনীতি লঙ্ঘন করে চাল গুদামজাত করে রাখা হয়েছে। কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির কারণে চালের দাম লাগামহীন বাড়ছে।

নির্বাচনের পরের দিন থেকে উত্তরবঙ্গের মোকামগুলো চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। একদিকে দাম বাড়িয়ে অন্যদিকে চালের সরবরাহ কমিয়ে দেওয়া হয়। ফলে বাজারে চালের কৃত্রিম সংকট হচ্ছে। সরকারি পর্যায়ে রেকর্ড মজুতের পাশাপাশি আমনের ভরা মৌসুমে সংকট না থাকলেও কারসাজির মাধ্যমে চালের বাজার অস্থির করে তোলা হয়েছে।

নির্বাচনের পর গত দেড় সপ্তাহে প্রকারভেদে প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) চালের দাম বেড়েছে ২০০-৩৫০ টাকা। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঠিক আগের মুহূর্ত পর্যন্ত পুরোপুরি স্থিতিশীল ছিল দাম। কিন্তু নির্বাচন শেষ হওয়ার পর থেকে চালের বাজার আবারও অস্থির হয়ে ওঠে। বিশেষ করে ৫০ কেজির প্রতি বস্তা নূরজাহান ২০০ টাকা, সিদ্ধ মিনিকেট আড়াইশ টাকা এবং দেশি বেথির দাম ৩৫০ টাকা বেড়েছে।

ফখ|চখ

এই বিভাগের আরও খবর