chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

বেদনার নীল রঙে ছোপানো দিন

সম্পাদকীয়

যুদ্ধ জয়ে সব সময় অস্ত্রের প্রয়োজন হয় না। প্রয়োজন হয় সূক্ষ্ম বুদ্ধি আর দূরদর্শী পরিকল্পনারও। নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধ শেষে বাংলাদেশ নামের এই দেশটির অভ্যুদয় সহজ হয়েছিল— কারণ সঠিক পরিকল্পনার জন্য কিছু সূর্যসন্তান ছিল এদেশের। এ তথ্যটি বাংলাদেশের শত্রুশিবিরও জানত, যে কারণে যখন তারা বুঝে ফেলে বাংলাদেশের বিজয় আটকানো যাবে না তখন তারা যুদ্ধপরবর্তী বাংলাদেশের অগ্রগতি থামাতে জাতিকে মেধাশূন্য করে দিতে চেয়েছিল । কিন্তু তারা জানত না, বাঙালি বীরের জাতি এবং এদেশে একজন বঙ্গবন্ধু কন্যা রয়েছেন। বাংলাদেশ একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রে পরিণত হতে অনেক বেশি খেসারত দিয়েছে। লাখো মানুষের প্রাণ ও অগণিত মানুষের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জন করা এই দেশ।

কত মানুষের স্বজন হারানোর কান্না, কত মানুষের চাপা দীর্ঘশ্বাস মিশে আছে এই অর্জনে তা ইতিহাসের পাতার পরতে পরতে লেখা রয়েছে।

স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি প্রাণপণে চেয়েছে দেশটি স্বাধীন না হোক। তারা পশ্চিম পাকিস্তানিদের জুলুম, নির্যাতন, বঞ্চনা, অবিচার ধর্মের আবরণে আড়াল করতে চেয়েছে। ধর্মের দোহাই দিয়ে এই দেশের আলো-বাতাসে মাটিতে বেড়ে উঠেও এই দেশের সঙ্গে, এই দেশের মানুষের সঙ্গে বেইমানি করেছে। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে পুরো ৯টি মাস বিভিন্নভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করেছে। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ অবলম্বনকারীদের বাড়িঘর চিনিয়ে দিয়েছে লুট করতে, অগ্নিসংযোগ সাথে পারেনি। কিন্তু বঙ্গবন্ধু কন্যা করাতে ধরে নিয়ে পাকিস্তানি ক্যাম্পে তার দৃঢ়তা, বিচক্ষণতা, দূরদর্শিতা দিয়ে শত্রুর মুখে ঝামা ঘষে বাঙালির অনন্য বিজয় অর্জন।
আজ বাংলাদেশ যেখানে এসে দাঁড়িয়েছে তা উদ্দেশ্যই ছিল বাংলার মানুষের মনোবল ভেঙে দেয়া। কিন্তু বাংলার
মানুষ ছিল দুর্জয়। তারা বিজয় ছিনিয়ে আনতে ছিল দৃঢ়প্রত্যয়ী।
তাদের সঠিক দিকনির্দেশনা দিতে ছিলেন মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

শত্রুপক্ষ যখন বুঝে ফেলল, বাংলার মানুষকে আর দমায়ে রাখা সম্ভব না তখনই তারা ১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর থেকে ১৪
ডিসেম্বরের মধ্যে বাড়ি বাড়ি গিয়ে তুলে নিয়ে যায় দেশের বিশিষ্ট ও প্রতিভাবানদের। নিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে। এদের মধ্যে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী, মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, আনোয়ার পাশা, ইতিহাসের অধ্যাপক সন্তোষ চন্দ্র ভট্টাচার্য, গিয়াস উদ্দিন আহমদ ও ইংরেজির অধ্যাপক রাশিদুল হাসান। আরও ছিলেন প্রখ্যাত সাহিত্যিক সাংবাদিক শহীদুল্লা কায়সার, সাংবাদিক সিরাজউদ্দীন হোসেন, নিজামদ্দীন আহমদ, আ ন ম গোলাম মোস্তফা, খ্যাতনামা চিকিৎসক ফজলে রাব্বী, আব্দুল আলীম চৌধুরী, মোহাম্মদ মোর্তেজা, ডক্টর গোবিন্দ দেব, ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত, যোগেশ চন্দ্র ঘোষ, রণদা প্রসাদ সাহা, নতুন চন্দ্র সিংহ, প্রখ্যাত সুরসাধক ও সুরকার আলতাফ মাহমুদ, সম্পাদিকা সেলিনা পারভীন, প্রতিভাময়ী কবি মেহেরুন্নেসা পাকিস্তানিদের হাতে নির্মমভাবে শহিদ হন।

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর এদের ক্ষতবিক্ষত লাশ পাওয়া গিয়েছিল মিরপুর ও রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে। কারও কারও লাশও পাওয়া যায়নি। এই শোক, এই ক্ষতি পূরণ হওয়ার নয়। এই ঋণ শোধ হওয়ার নয়। বংশপরম্পরায় বাংলার মানুষ ১৪ ডিসেম্বর এলে এই কৃতিমান সন্তানদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে। মেধাশূন্য করে যারা এদেশের অগ্রগতির গতি রোধ করে দিতে চেয়েছিল তারা আজ আঁস্তাকুড়ে নিক্ষেপিত হয়েছে। অনেক ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ পথ অতিক্রম করে আজ বাংলাদেশ বিশ্বের কাছে উন্নয়নের রোল মডেল। আর এটাই হলো শত্রুর মুখে ঝামা ঘষে বাঙালির অনন্য বিজয় অর্জন। আজ বাংলাদেশ যেখানে এসে দাঁড়িয়েছে তা অনেকে কল্পনাই করতে পারেনি ।

কিন্তু বঙ্গবন্ধুকন্যা তার দৃঢ়তা, বিচক্ষণতা, দূরদর্শিতা দিয়ে বাংলাদেশকে এই উচ্চতায় নিয়ে শহিদদের ঋণ কিছুটা হলেও পরিশোধ করেছেন। শত্রুর মুখ বন্ধ করেছেন। বাংলাদেশকে এই উচ্চতায় নিয়ে শহিদদের ঋণ কিছুটা হলেও পরিশোধ করেছেন।

লেখক –ইব্রাহিম মুরাদ নির্বাহী সম্পাদক, চট্টলার খবর

ফখ|চখ

এই বিভাগের আরও খবর