chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

অনেক বড় শিক্ষা হয়েছে: জিকো

ঢাকা থেকে কক্সবাজার কত দূর? দূরত্বটা যতটুকই হোক, একবার কথায় কথায় গোলরক্ষক আনিসুর রহমান জিকো বলেছিলেন, তার বাসা কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে, চকোরিয়ায়। ডুলাহাজারা, বালুচর গ্রামে জিকোর বাসা। মাদককাণ্ডে অভিযুক্ত হয়ে এখন সেখানেই অবস্থান করছেন তিনি।

শাস্তির মেয়াদ শেষ হবে ৩১ মার্চ। আরো চার মাস বাকি রয়েছে। শাস্তি শুরু হয়েছে প্রায় দুই মাস। এক জন ক্রীড়াবিদ এক দিন অনুশীলন না করলে তিনি পিছিয়ে যান। খেলা থেকে একজন ফুটবলার এত দিন দূরে থাকলে তার কী অবস্থা হতে পারে? ক্যারিয়ারের কিছুই থাকবে না।

১৯৮৭ সালে লিগের তুচ্ছ কারণে আবাহনীর অধিনায়ক শেখ মো. আসলাম এবং মোহামেডানের অধিনায়ক রণজিতকে এক বছরের জন্য লিগ থেকে সাসপেন্ড করেছিল বাফুফে। সেবার লিগই হয়নি। আর মাদককাণ্ডে অভিযুক্তদের ক্লাব, বসুন্ধরা কিংস নিজেরাই শাস্তি দিয়েছে। তাদের খেলা চলছে, জাতীয় দলের খেলাও চলছে।

জাতীয় দলের জন্য সাসপেন্ড করা হয়নি বলে জানিয়েছেন বাফুফের সাধারণ সম্পাদক ইমরান তুষার। রাষ্ট্রীয় আইনে দণ্ড হয়নি, শৃঙ্খলা ভঙ্গের আইনে শাস্তি দিয়েছে ক্লাব। দলের অন্য খেলোয়াড়েরা মনে করছেন, এত লম্বা শাস্তি না দিলেও হতো। যেহেতু সবাই ফুটবলার। ভুল হোক, অন্যায় হোক, শাস্তি হতেই পারে। কিন্তু ক্যারিয়ার নষ্ট করে দিয়ে শাস্তি দেওয়াটা হচ্ছে ফাঁসি দেওয়ার শামিল।

জিকো স্বীকার করে নিয়েছেন, বন্ধুদের প্ররোচনায় তার ব্যাগে রাখা হয়েছিল। তদন্ত কমিটির কাছে ভুল স্বীকার করে অভিযুক্তরা ক্ষমা চেয়েছিলেন, কিন্তু ক্লাব ক্ষমা করেনি। এমনকি দলের সঙ্গে অনুশীলনেও রাখা হয়নি। খেলোয়াড়েরা ক্লাবের ক্যাম্পে গিয়েছিলেন, অনুশীলনের মধ্যে থাকতে চেয়েছিলেন। রাখা হয়নি। ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। শৃঙ্খলা ভঙ্গে শাস্তি হতেই পারে। কিন্তু মানবিক দিকটার গুরুত্ব বিবেচ্য কি না, সেটা অনুধাবন করেনি ক্লাব। জিকোকে জাতীয় দলে ফেরানো যায় কি না, তার জন্য একটা উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বাফুফে থেকে। ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে তপু বর্মনকেও। তার শাস্তির মেয়াদ শেষ হবে ৩১ ডিসেম্বর।

জিকো এখন তার গ্রামের বাড়িতে। ডুলাহাজারা ফুটবল একাডেমিতে অনুশীলন করছেন। এখান থেকেই তিনি ফুটবল ক্যারিয়ার শুরু করেন। আবার সেখানেই ফিরে গেছেন। সারা দিন বাসায় থাকবেন। বিকেলে মাঠে যান। এলাকার লোকজন নানা প্রশ্ন করে, কজনের মুখ বন্ধ করবেন? কৌতূহল, জিকোর কী হয়েছে? কেন এ ধরনের ঘটনায় জড়ালেন এলাকার ছেলে জিকো?

সাফের সেরা গোলরক্ষকের পুরস্কার পাওয়া ছেলেটা এলাকার মানুষের মুখ উজ্জ্বল করেছিলেন। সেই ছেলের জীবনে হঠাৎ অন্ধকার নেমে এলো। ‘এলাকার লোকজন প্রশ্ন করে, বারবার জবাব দিতে হয়। বললেন জিকো। রাতে ঘুম নেই চোখে। মনের মধ্যে বারবার ফিরে আসে কেন এমনটা হলো। অকপটে স্বীকার করলেন জিকো, ‘অনেক বড় শিক্ষা হয়েছে।’

এলাকায় গিয়ে প্রথম প্রথম নিজেকে আড়ালে রেখেছিলেন জিকো। এখন কিছুটা স্বাভাবিক হলেও মনের মধ্যে সেই উচ্ছ্বাস নেই তার। মা দিলারা বেগম, বাবা মঞ্জুর আলমও ছেলের ঘটনায় বিব্রত। অপেক্ষায় আছেন, ছেলে তার কবে আবার গোলপোস্টের নিচে দাঁড়াবেন। ছেলে যখন ভালো খেলতেন, তখন বাবা-মায়ের রাস্তায় চলাচলটা ছিল এক করম। এখন যেন নিজেরাও বিব্রত। ক্লাব কোচ অস্কার ব্রুজনও খোঁজ-খবর নেন না।

এএফসি কাপে মোহন বাগানের বিপক্ষে কিংসের ম্যাচ, বিশ্বকাপ বাছাইয়ে রাউন্ড ওয়ান পর্বে মালদ্বীপের বিপক্ষে বাংলাদেশের ম্যাচ, রাউন্ড টু পর্বে অস্ট্রেলিয়া, লেবাননের বিপক্ষে ম্যাচ দেখেছেন জিকো। ‘মোবাইল ফোনে দেখেছি। ভালো খেলেছে সবাই।’ বললেন জিকো। লেবাননের বিপক্ষে গোলরক্ষক মেহেদী হাসান শ্রাবণ খেলেছেন, গোল হজম করেছেন। সেই গোল নিয়ে জিকো বললেন, ‘শ্রাবণ শিখছে সময় দিতে হবে।’

বিশ্বকাপ বাছাইয়ে বাংলাদেশের আরো চারটা ম্যাচ রয়েছে। চারটা ম্যাচই গুরুত্বপূর্ণ। এরপর এশিয়ান কাপেরও খেলা রয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের ফুটবল দেশগুলোর বিপক্ষে বাংলাদেশকে লড়াই করতে হবে। গোলরক্ষক আনিসুর রহমান জিকো কিংবা ডিফেন্ডার তপু বর্মনকে যদি দেশের জাতীয় দলে প্রয়োজন হয়, বাফুফে সেটা নিয়ে উদ্যোগ নিতে পারে, দেশের স্বার্থে।

 

 

জয়/চখ

এই বিভাগের আরও খবর