chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

সচেতনতায় কমেছে অ্যাসিড সহিংসতা,বেড়েছে অন্য নির্যাতন

দেশে অ্যাসিড সন্ত্রাসের ঘটনা নাটকীয়ভাবে কমে গেছে। তবে বেড়েছে নারীর উপর অন্যান্য ধরণের সহিংসতা । বিশেষ করে অনলাইনে নির্যাতনের ঘটনা অনেক বেশি বাড়ছে। অ্যাসিড সহিংসতা বৃদ্ধির হার আগের অবস্থায় না পৌঁছালেও নিরুদ্বিগ্ন থাকার সুযোগ নেই। এটি এমন ভয়াবহ অপরাধ যে এর শিকার মানুষগুলো প্রাণে বেঁচে গেলেও বাকি সময়টা দুর্বিষহ জীবন যাপন করতে হয়। অনেকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেন না। পরিবারের সদস্যদের কাছেও তাঁরা বোঝা হয়ে পড়েন। অ্যাসিড সহিংসতা কমে গেছে বলে তৃপ্তির ঢেকুর না তুলে আমাদের সকলের উচিৎ হবে নারীর প্রতি সহিংসতা কমাতে আরও বেশি করে সচেতনতা বাড়ানো মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। গত কয়েক বছর ধরে স্বামী-স্ত্রীর মনোমালিন্য ও সম্পত্তির বিরোধের জের ধরে অ্যাসিড সন্ত্রাসের ঘটনা ঘটছে। আশার কথা হচ্ছে, চট্টগ্রামে অ্যাসিড সহিংসতা গত কয়েক বছর ধরে নাই বললেই চলে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রেম সংক্রান্ত কারণ ছাড়িয়ে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনে বাধা দেওয়া, যৌতুক, জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে অ্যাসিড হামলা হয়েছে। আবার ধরনও পাল্টেছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই জমি, সম্পত্তি ও অর্থনৈতিক বিরোধের জেরে হামলা হয়েছে। কয়েক বছরের ঘটনা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, সম্পত্তি নিয়ে বিরোধের কারণে সবচেয়ে বেশি অ্যাসিড সহিংসতার ঘটনা ঘটে। এছাড়াও স্বামী-স্ত্রীর বিরোধ, প্রতিবেশীর অনৈতিক প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করা,  সাবেক স্বামীর মাধ্যমে, শ্বশুরবাড়ির লোকজনের মাধ্যমে, সাবেক প্রেমিকের মাধ্যমে এবং স্বজন, পারিবারিক বন্ধু, পরিচিত ব্যক্তির মাধ্যমে অ্যাসিড সহিংসতা ঘটছে। আইনের প্রয়োগ ও নজরদারি দুর্বল হওয়ায় অনেক সময় অ্যাসিড দমন আইনের মামলায় দ্রুত ব্যবস্থা নেয় না পুলিশ। অভিযুক্ত ব্যক্তিদের হাতে কীভাবে অ্যাসিড যাচ্ছে, তা অনুসন্ধানের বাইরে থেকে যাচ্ছে।

বিশ্লেষকেরা মনে করেন, দুর্বল নজরদারি ও অপরাধীদের শাস্তির আওতায় আনতে না পারলে অ্যাসিড সহিংসতা বেড়ে যাবে। অ্যাসিড সহিংসতা হওয়ার কারণ ও বৃদ্ধির কারণগুলো খুঁজে বের করতে হবে। অ্যাসিড সহিংসতা কমে গেছে, এ ধারণা পোষণ করে দিয়ে চুপচাপ বসে থাকা কিংবা আত্মসন্তুষ্টির সুযোগ নেই। অ্যাসিড সহিংসতার মতো ভয়ংকর অপরাধ কমিয়ে আনতে হলে আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করা জরুরি। সে ক্ষেত্রে কোথায় কী সমস্যা আছে, সেটা চিহ্নিত করে প্রতিকার করতে হবে। অ্যাসিড কেনাবেচার ক্ষেত্রে আইনে যেসব শর্ত আছে, সেগুলো প্রতিপালিত হচ্ছে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখতে হবে। অনেক সময়ই দুর্বল ও ত্রুটিপূর্ণ তদন্তের কারণে অপরাধীরা পার পেয়ে যান। অ্যাসিড সহিংসতা তখনই কমবে, যখন প্রতিটি অপরাধীর শাস্তি নিশ্চিত করা যাবে।

অ্যাসিড সারভাইভারস ফাউন্ডেশনের (এএসএফ) তথ্যমতে,  ১৯৯৯ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত  হামলার ঘটনা বেড়ে যায়। ২০২২ সালে অ্যাসিড সহিংসতার ১৭টি ঘটনায় ২৭ জন দগ্ধ হন। এর মধ্যে ১৬ জন নারী, ৯ জন পুরুষ এবং দুই শিশু রয়েছে। ২০২২ সালে চট্টগ্রামে অ্যাসিড হামলার কোনও ঘটনা ঘটেনি। এছাড়া গত কয়েক বছরে চট্টগ্রাম থেকে কোনও অ্যাসিড হামলার ঘটনা নেই। চট্টগ্রাম চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কার্যালয়ের তথ্যমতে, ২০২১ ও ২০২২ সালে অ্যাসিড সহিংসতার কোনও মামলা হয়নি। তবে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের ১৬ থানায় ২০২২ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনে গত জুন মাসে অ্যাসিড সহিংসতার একটি মামলা হয়েছে। এছাড়া ২০২১ সালে অ্যাসিড সহিংসতার কোনও মামলা হয়নি।

অ্যাসিড সারভাইভারস ফাউন্ডেশনের প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর তাহমিনা ইসলাম জানান, এক দশক আগেও সারাদেশে অ্যাসিড সহিংতার ঘটনা অনেক বেশি থাকলেও বর্তমানে তা অনেকাংশে কমে গেছে। সামাজিকভাবে আন্দোলন, সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন এবং আইনের কড়াকড়িতে কমে আসতে থাকে ঘটনার সংখ্যা। এরপরও এ নিষ্ঠুরতা ঘটে চলেছে, যার প্রধান শিকার হচ্ছেন নারী ও শিশু। অ্যাসিড সহিংসতা অনেক কমে গেলেও অন্যান্য ক্ষেত্রে নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা বহুগুণ বেড়ে গেছে। সাইবার ক্রাইম বেড়েছে অনেক বেশি।

তিনি আরও বলেন, ১৯৯৯ সালে অধিকাংশ অ্যাসিড সহিংসতা ছিল প্রেম সংক্রান্ত ও বিয়ে নিয়ে ঝামেলায়। পরবর্তীতে জায়গা-জমি ও স্বামী-স্ত্রী এবং পারিবারিক বিরোধের কারণে এমন ঘটনা ঘটতে দেখা গেছে। গত কয়েক বছর করোনার কারণে বেকারত্ব বেড়ে গেছে, পারিবারিক মনোমালিন্য থেকে অ্যাসিড সহিংসতা হয়েছে। চট্টগ্রামে গত কয়েক বছর ধরে অ্যাসিড সহিংসতার কোন ঘটনাও ঘটেনি। সবার সহযোগিতা ও উদ্যোগে অ্যাসিড সহিংসতা শূন্যে নামিয়ে আনার ব্যাপারে আমরা আশাবাদী।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি ও পুলিশ সায়েন্স বিভাগের চেয়ারম্যান সহকারী অধ্যাপক মো. সাখাওয়াত হোসেন জানান, অ্যাসিড সহিংসতার বিরুদ্ধে গণসচেতনতা তৈরি করার ক্ষেত্রে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর সম্মিলিত ও সর্বাত্মক উদ্যোগ ছিল। চট্টগ্রামে অ্যাসিড সহিংসতা গত কয়েক বছরে কমে গেছে-এটাকে সহজভাবে দেখার সুযোগ নেই। অতীতে অ্যাসিড সহিংসতা কেন ঘটেছিল, তা থেকে উত্তরণের উপায় খুঁজতে হবে পরিবার থেকেই। সমাজের সমন্বিত প্রচেষ্টায় অ্যাসিড সহিংসতা রুখতে প্রতিরোধ গড়তে হবে। পাশাপাশি নজরদারি, আইনের যথাযথ প্রয়োগের  উদ্যোগও জারি রাখতে হবে।

এই বিভাগের আরও খবর