chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

দৈনন্দিন ইসলামী প্রশ্ন-উত্তর

দৈনন্দিন বিভিন্ন প্রশ্নের শরিয়ত সম্মত উত্তর দিয়েছে ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।
প্রশ্ন : মৃত ব্যক্তির মাগফেরাতের আশায় লোক খাওয়ানো বা দরিদ্রকে খাওয়ানোর দ্বারা মৃত ব্যক্তির কোনো উপকার হবে কি?

উত্তর : আপনার প্রশ্নের মধ্যেই দু’টি বিষয় ভাগ করা আছে। একটি লোক খাওয়ানো, আরেকটি দরিদ্রকে খাওয়ানো। দরিদ্রকে খাওয়ানোর মধ্যে সওয়াব হওয়া ও মৃত ব্যক্তির উপকার হওয়ার মধ্যে কোনো সন্দেহ নেই। ইসলামে ক্ষুধার্তকে খাদ্য দান অন্যতম বিশেষ ইবাদত। মৃতের রূহে সওয়াব রেসানীর জন্য এটি একটি ভালো আমল। তবে ‘লোক খাওয়ানো’ নিয়ে একটু ব্যাখ্যার প্রয়োজন আছে। অন্য একটি ধর্মের বিশ্বাস যে, মৃত ব্যক্তির শ্রাদ্ধ না করলে তার আত্মা শান্তি পায় না। সেটি বাড়ির আশপাশে ঘুরে বেড়ায়, অনেক সময় জীবিতদের জ্বালাতন করে ইত্যাদি। ইসলামে এ ধারণা সম্পূর্ণ ভুল ও অমূলক। আমাদের সমাজে শ্রাদ্ধের অনুসরণে এক ধরনের লোক খাওয়ানো চালু ছিল। একে দোয়া দুরুদের মিশ্রণসহ একটি মেলা বা লোক খাওয়ানোর চাপিয়ে দেয়া অনুষ্ঠান বললেও ভুল হবে না। ঢাকা বিভাগে এ মেলার নাম, খরচা বা খরচ। বলা হয় তার বাবার মৃত্যুর খরচের খানা খেয়ে এলাম। অনেক অঞ্চলে বলে মেলা বা যিয়াফত, কোথাও বলে মেজবানী খানা। এসবে বাড়িওয়ালা ও ধনী-গরীব সবাই খানা খায়। সুতরাং একে সরাসরি সাদাকাহ বলা যায় না। এতে সওয়াব হওয়ার কথা নয়। এক্ষেত্রে মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি ভাগ না করে, অনেক নাবালক ওয়ারিশ থাকা সত্ত্বেও এমন কি তারা খুব গরীব হওয়া সত্ত্বেও সমাজের মানুষ মৃতের জন্য একটি বড় খরচে তাদের বাধ্য করে। ইচ্ছা বা সংগতি না থাকলেও তাদের বড় একটি যিয়াফত করতে হয়। এমনকি সমাজের চাপে এ পরিবারটি ঋণ করে হলেও এ রসম পূরণ করে। এরকম দাওয়াত ক্ষেত্র বিশেষে অবৈধ ও গোনাহের কাজ। কারণ এখানে জুলুম ও কুসংস্কার পাওয়া যায়। তবে যদি শ্রাদ্ধের বিকল্প বা সমাজের চাপ মনে না করে কেউ মন থেকেই সবার জন্য একটি উন্মুক্ত খানার আয়োজন করে এটি জায়েজ হতে পারে। সৌজন্যমূলক দাওয়াত হিসাবে আল্লাহ সওয়াবও দিতে পারেন। তবে মাগফেরাতের জন্য যে খানা তা শুধু দরিদ্রদের জন্যই হতে হবে। এতে ধনীরা শরীক হতে পারবে না।

খাঁচায় বন্দি করে পাখি পালন করা
প্রশ্ন : শখের বশে বা বাচ্চাদের বিনোদনের জন্য বাসা-বাড়িতে খাঁচায় বন্দি করে পাখি পোষা সম্পর্কে ইসলামের বিধান কী? এবং এ বিষয়ে কোরআন-হাদিসে উৎসাহ প্রদানের কথা আছে কি?

উত্তর : খাঁচায় বন্দি করে পাখি পোষা সম্পর্কে কোরআন-হাদিসে কোনো প্রকার উৎসাহ প্রদান করা হয়নি।

তবে তাকে কোনো কষ্ট না দেওয়া এবং খাবারদাবারের প্রতি যত্নবান হওয়ার শর্তে ইসলামী আইনজ্ঞরা জায়েজ বলেছেন। (বুখারি, হাদিস : ৬২০৩, ফাতহুল বারি : ১০/৭১৫, রদ্দুল মুহতার : ৬/৪০১)

মুসাফির অবস্থায় সুন্নত পড়া

প্রশ্ন : আমাকে প্রায় সময় সফরে থাকতে হয়।

মুসাফির সফর অবস্থায় কসর নামাজ পড়লে সুন্নত নামাজ পড়তে হবে কি?

উত্তর : মুসাফির নিরাপদে অবস্থান করলে এবং কোনো ধরনের তাড়াহুড়া না থাকলে, সুন্নতে মুয়াক্কাদা আদায় করবে।

অন্যথায় আদায় না করলেও সমস্যা নেই।

(আদ্দুররুল মুখতার : ১/১০৮, আল বাহরুর রায়েক : ২/২২৯, ফাতাওয়ায়ে রহিমিয়া : ৫/৪)

একাই মুরগি জবাই করা

প্রশ্ন : মুরগি একজনে ধরে জবাই করলে কি সহিহ হবে? মুরগি জবাই করার পর আমরা সাধারণ যেসব দোকানে সরু, চিকন কিছু স্ট্যান্ড দেখতে পাই সেগুলোতে মুরগি উপুড় করে রেখে দেওয়া হয়। এ রকম করলে কি সহিহ হবে?

উত্তর : একজনে ধরে মুরগি জবাই করা ও স্ট্যান্ডে মুরগিকে উপুড় করে রেখে দেওয়া জায়েজ। তবে প্রাণীকে অযথা কষ্ট দেওয়া মাকরুহ। (মুসলিম : ৩/৫৬১, রদ্দুল মুহতার : ৯/৪২৪, কেফায়াতুল মুফতি : ১১/৬৩৫)

স্বামী ফরজ হজে যেতে না দিলে

প্রশ্ন : এক নারীর ওপর হজ ফরজ হলে তিনি তাঁর স্বামীকে জানানোর পর স্বামী তাঁকে নিয়ে হজে যেতে নিষেধ করেন, অতঃপর স্ত্রী মাহরাম পাওয়ার পর যখন হজে যেতে চাইলেন তখন স্বামী কঠোরভাবে নিষেধ করলেন। এখন জানার বিষয় হলো, এ অবস্থায় স্ত্রী হজে যেতে পারবে কি? এ ক্ষেত্রে স্ত্রীর করণীয় কী?

উত্তর: স্ত্রীর ওপর হজ ফরজ হওয়ার পর স্বামীর কর্তব্য মাহরাম হিসেবে তাঁর সঙ্গে গিয়ে হজ আদায়ে সাহায্য করা। যদি নিজে যেতে অপারগ হয় তাহলে ইসলামসম্মত উপযুক্ত অন্য কোনো মাহরাম পাওয়া গেলে স্বামী তাঁকে বাধা দেওয়ার অধিকার রাখে না। তাই প্রশ্নোক্ত অবস্থায় স্ত্রীর কর্তব্য হলো প্রথমে স্বামীকে সঙ্গে যেতে রাজি করানো। অথবা তাঁর পছন্দের মাহরামের সঙ্গে যাওয়ার অনুমতি প্রদানের জন্য নিজে অথবা কারো মাধ্যমে বোঝানোর চেষ্টা করা। (আদ্দুররুল মুখতার : ৬/৪৬৫, রদ্দুল মুহতার : ৬/৪৬৫, আল বাহরুর রায়েক : ২/২৪৩)।