chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

হাসপাতালে সহজে মেলে না জলাতঙ্কের ব্যয়বহুল টিকা


জানা গেছে, প্রাণী কামড় দিলে ৩ ক্যাটাগরিতে চিকিৎসা দেওয়া হয়। ক্যাটাগরি ১ : যাদের কুকুর বা অন্য প্রাণী কেটেছে, কিন্ত কোনো ক্ষত বা রক্ত ঝরেনি, তারা ক্যাটাগরি ১-এর রোগী। তাদের কোনো টিকার প্রয়োজন নেই। শুধু সাবান দিয়ে ক্ষতস্থানটি ধুয়ে ফেলতে হবে কিংবা এন্টিসেপটিক দ্রবণ দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে।

ক্যাটাগরি ২ : পশুতে কাটার পর যাদের শরীরে আঁচড় বা কামড়ানোর দাগ দেখা দেয়, অথচ রক্তপাত হয়নি, তারা ক্যাটাগরি-২ এর রোগী। এসব রোগীর ক্ষতস্থান তৎক্ষণাৎ পরিষ্কার করার পাশাপাশি জলাতঙ্ক টিকা নিতে হবে। এ টিকা চামড়ার নিচে কিংবা মাংসে দেয়া হয়। কুকুর আঁচড়ে বা কামড়ে দেয়ার পর ৫ দিনের মধ্যে টিকাটি নিলে ভালো হয়। তা না হলে জলাতঙ্ক রোগ হওয়া হওয়ার ঝুঁকি থাকে।

ক্যাটাগরি ৩ : পশুর আঁচড় বা কামড়ে যদি রক্ত বের হয় এবং তা যদি বন্ধ না হয়, তারা ক্যাটাগরি-৩ এর রোগী। এসব রোগীদের ক্ষতস্থানটি দ্রুত পরিষ্কারের পাশাপাশি চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। এ ধরনের রোগীদের এআরভি ও ব্যয়বহুল ইআরআইজি টিকা নিতে হবে।

আর এই ব্যয় বহুল টিকাটির সংকট চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল। বিষয়টি নিশ্চিত করে হাসপাতালে মেডিকেল অফিসার ডা. মোর্শেদ আলী। তিনি বলেন, যেকোনো প্রাণী কামড়ালেই প্রথমে বাংলা সাবান দিয়ে ক্ষতস্থান ৩০ মিনিট ধরে ধুতে হবে। তারপর চিকিৎসকের কাছে নিয়ে আসতে হবে। আক্রান্তদের আমরা তিনভাবে চিকিৎসা দিই। ক্যাটাগরি- ৩ এর রোগীদের এই টিকাটি লাগে। এটা খুব কম পাওয়া যায়। আসলেও খুব অল্প পরিমাণে আসে।

চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত পশুর কামড়ে ৮ হাজার ৪২৮ জন চিকিৎসা নিয়েছেন। তার মধ্যে কুকুরের কামড়ে আহতের সংখ্যা ৪ হাজার ২৫ জন, অন্য পশুর কামড়ে আহতের সংখ্যা ৪ হাজার ৪০৩ জন। হাসপাতালটি চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত এআরভি টিকা বরাদ্দ পেয়েছে ৫ হাজার ২৩০টি, ইআরআইজি পেয়েছে মাত্র ৪৫০টি। জেনারেল হাসপাতাল ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস-এ (বিআইটিআইডি) এ রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হয়। অন্য কোনো সরকারি হাসপাতালে এ সেবা নেই। জেনারেল হাসপাতালে শুধু আউডডোর সেবা এবং টিকা দেয়া হয়। বিআইটিআইডিতে রোগীভর্তি করানো এবং একই সাথে টিকাও দেয়া হয়। বিআইটিআইডি সূত্রে জানা যায়, ২০২০ সালে ৬ জন, ২০২১ সালে ৩ জন এবং ২০২২ সালে ২ জলাতঙ্ক রোগী চিকিৎসা নেন।

গতকাল জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা নূরী বেগম বলেন, আমাকে সকালে কুকুর কেটেছে। কিছুতে রক্ত বন্ধ হচ্ছে না। ফটিকছড়ি থেকে হাসপাতালে আসলাম। কিন্ত এসে টিকাটি পেলাম না। বাইরে থেকে ১ হাজার টাকা দিয়ে কিনতে হয়েছে। এই টিকাটি আরও ৪ বার নিতে হবে। আমাদের মতো গরীব মানুষের এই টিকাটি কেনা কষ্টসাধ্য হয়ে যায়।

টিকার সংকট নিয়ে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সেখ ফজলে রাব্বী চট্টলার খবরকে বলেন, ‘এই টিকাটি শুধুমাত্র ক্যাটাগরি-৩ রোগীদের লাগে। এটি সরকারিভাবে মাঝমাঝে অল্প পাঠায়। এটি বেশির ভাগ বিশেষায়িত হাসপাতালে পাঠানো হয়। তবে চাহিদা থাকা সত্ত্বেও আমাদের প্রতিষ্ঠানে দেয়া হয় না। আমরা দেয়ার জন্য যোগাযোগ করি। টিকাটি ব্যয়বহুল হওয়ায় সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকেও অনেক গরিব রোগীকে দেয়া হয়। প্রায় ৮০ শতাংই রোগী এই টিকাটি পায়। সমাজসেবার রোগী কল্যাণ সমিতি থেকে সহোযোগিতা দেওয়া হয়।

উল্লেখ্য, আজ (২৮ সেপ্টেম্বর) বিশ্ব জলাতঙ্ক দিবস। এবারে এ দিবসের প্রতিপাদ্য ‘জলাতঙ্কের অবসান, সকলে মিলে সমাধান’। কিন্তু এ বছর একই দিনে কয়েকটি দিবস।

চখ/এআর

এই বিভাগের আরও খবর