chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

চট্টগ্রামের চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে ব্যবসায়ীদের আতঙ্ক জলাবদ্ধতা

বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার কারণের কর্ণফুলির তীরে খাতুনগঞ্জ, আসাদগঞ্জ, চাক্তাই, কোম্পানিগঞ্জ, টেরিবাজার এলাকা জুড়ে গড়ে উঠেছে দেশের বৃহত্তম পাইকারী বাজার। নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য সহ প্রয়োজনীয় সকল কিছু পাওয়া যায় এ বাজারে। দেশের শীর্ষ স্থানীয় ব্যবসায়ীদের শিল্প-বাণিজ্য শুরু এখান থেকে। এখানকার বিভিন্ন পণ্য-সামগ্রী দেশের সকল স্থানের সরবরাহ করা হয়। দেশের সকল আর্থিক প্রতিষ্ঠান ব্যাংক-বীমা এখানে শাখা আছে। এসব ব্যাংকগুলো প্রতি কার্যদিবসে হাজার কোটি টাকা লেনদেন হয়। অথচ সময়ের প্রয়োজনের এ পাইকারী বাজারের কোনো ধরণের অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়নি। ফলে এক পশলা বৃষ্টিতে এখানকার অবস্থা খুব খারাপ হয়। আর গত কয়েকদিনের টানা বর্ষণে স্থবির হয়ে পড়ে দেশে ভোগ্যপণ্যের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জের ব্যবসা-বাণিজ্য।

এখনকার ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, টানা বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে ডুবে ছিল মধ্যম চাক্তাই, নতুন চাক্তাই, চর চাক্তাই, পুরাতন চাক্তাই, মকবুল সওদাগর রোড ও আসাদগঞ্জের প্রতিটি সড়ক। এছাড়া খাতুনগঞ্জ সড়কের পাশে হামিদুল্লাহ মার্কেটে বর্ষায় পানি ছিল হাঁটু সমান। পাশাপাশি চান্দমিয়া গলি, ইলিয়াছ মার্কেট, বাদশা মার্কেট, সোনা মিয়া মার্কেট, নবী মার্কেট, মাল্লা মার্কেট, চাক্তাই মসজিদ গলি, ড্রাম পট্টি, চাল পট্টি ও এজাজ মার্কেটসহ বেশির ভাগ মার্কেটেই পানি ঢুকে পড়ে। চাক্তাই এলাকার চাল পট্টিতে কয়েকশ চালের দোকানে পানি উঠে প্রচুর চাল নষ্ট হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন চাল বিক্রেতারা। তারা আরো বলেন, গত কয়েকদিনের জলাবদ্ধতা ও জোয়ারের কারণে প্রায় ৬০ শতাংশ দোকান ও আড়তে পানি ঢুকে পড়ে। এজন্য তারা চাক্তাই-রাজাখালী খালসহ গুরুত্বপূর্ণ খালের মুখগুলো বন্ধ করে রাখাকে দায়ী করেছেন। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, পাঁচদিনের জলাবদ্ধতায় কোটি কোটি টাকার পণ্য নষ্ট হয়েছে।

ট্রেডবলিও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মতে, দেশের মোট ভোগ্যপণ্যের ৪০-৫০ শতাংশ খাতুনগঞ্জে বিকিকিনি হয়। প্রতিদিন গড়ে ৮০০ থেকে ১ হাজার কোটি টাকার লেনদেন হয় এ বাজারে। কিন্তু অবকাঠামো উন্নয়নের অভাবে এখানকার ব্যবসায়ীরা প্রাকৃতিক দুর্যোগে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েন। জনপ্রতিনিধিদের এসব সমস্যা জানানো হলেও কোনো প্রতিকার হয়নি। অথচ ভোগ্যপণ্য আমদানিকারকদের জন্য বর্ষাকাল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এ সময় ব্যবসায়ীরা চাহিদার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে পণ্য আমদানি করেন। বর্ষা ও জলাবদ্ধতার কারণে প্রতিবারের ভেঙে পড়ে পণ্য পরিবহন ব্যবস্থা। ফলে পণ্যচাহিদা কমে যাওয়ায় ব্যাংকঋণ সহ প্রয়োজনীয় খরচ পরিশোধে লোকসানে পণ্য বিক্রি করতে বাধ্য হন অনেক ব্যবসায়ী।

এ প্রসঙ্গে ব্যবসায়ী নেতারা বলেন, আমাদের আতংকের নাম জলাবদ্ধতা। এবার বাজারের ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ দোকান ও গুদামে পানি ঢুকে কাঁচা ও ভোগ্যপণ্যসহ প্রায় শতকোটি টাকার মালপত্র নষ্ট হয়ে গেছে। তারা বলেন, চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের প্রায় প্রতিটি সড়কে চার-পাঁচ ফুট পানি জমে। যা গত ২৪ বছরে এটা বাজারে সর্বোচ্চ পানি। এর আগে ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ে এখানে এ পরিমাণ পানি উঠেছিল।

খাতুনগঞ্জ ব্যবসায়ী সমিতির তথ্যমতে, দেশের বৃহৎ এ পাইকারি বাজারে স্বাভাবিক সময়ে ৮০০ থেকে ১ হাজার কোটি টাকার লেনদেন হয়। কিন্তু বর্ষায় টানা বৃষ্টিপাত ও জলাবদ্ধতায় পণ্য সরবরাহ বিঘ্নিত হওয়ায় লেনদেনের পরিমাণ অর্ধেকে নেমে এসেছে। ব্যবসায়ীরা জলাবদ্ধতার কারণে লোকসানে রয়েছে।

বন্দর সুবিধা ও নদীতীরবর্তী বাজার হওয়ায় খাতুনগঞ্জের জৌলুস দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়লেও বর্তমানে নদীর জোয়ার ও অল্প বৃষ্টিতে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে যাওয়ার কারণেই বর্ষা মৌসুমে পণ্য নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে সেখানে। কয়েক বছর ধরে ভারি বর্ষায় সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় পণ্য নষ্ট হওয়া নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়েছে। এক্ষেত্রে ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন ছাড়া প্রতি বছরের ভোগ্যপণ্য বাণিজ্যের ব্যবসায়িক ক্ষতি রোধ করা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা।

খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দরা বলেন, নগরীর চাক্তাই-রাজাখালী খালসহ গুরুত্বপূর্ণ খালের মুখগুলো নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্যে রয়েছে। এতে বৃষ্টি ও জোয়ারের পানি খাল দিয়ে স্বাভাবিকভাবে প্রবাহিত হতে না পেরে আবারো পাড় উপচে বাজারের দিকে ঢুকে পড়ে। আর কয়েক ঘন্টা বৃদ্ধি হলে তো রক্ষা নাই। এতে লোকসান গুণতে হয় ব্যবসায়ীদের।

এই বিভাগের আরও খবর