chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

চট্টগ্রামে সহসা কমছে না চালের দাম

নিজস্ব প্রতিবেদক : গেল দুইমাসে দফায় দফায় বেড়ে এখন সেই বাড়তি দামে স্থিতিশীল রয়েছে চালের বাজার। পর্যাপ্ত আমদানী ও মজুদ থাকার পরও ব্যবসায়ীরা দাম কমার কোন সুখবরে দিতে পারছে না।

তারা জানিয়েছেন, চট্টগ্রামে সহসা কমছে না চালের দাম। চালের দাম কমতে আরও কয়েক মাস সময় লাগতে পারে। এখনো বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে সব রকমের চাল। দীর্ঘদিন চালের দাম না কমায় খুচরা ব্যবসায়ীরাও বাড়তি দামে বিক্রি করছে চাল। এতে ভোক্তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

রবিবার (২৪ অক্টোবর) নগরীর পাহাড়তলী পাইকারী চালের আড়ত ও চাক্তাই চালপট্টি ঘুরে ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

পাইকারী বাজার ঘুরে দেখা যায়, বস্তা প্রতি (৫০ কেজি) চলতি মাসের শুরুতে ৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। ভালো মানের দেশি মিনিকেট চাউল (আতপ) ২৪৫০ থেকে ২৪৭০ টাকা (৫০ কেজি), সিদ্ধ চাল মোটা (৫০ কেজি বস্তা) বিক্রি হচ্ছে ১৮০০ থেকে মানভেদে ২১০০ টাকায়, যা গত সপ্তাহেও ছিল ১৭৫০ টাকা। ইন্ডিয়ান নাজিরশাইল চাল ২৫ কেজির বস্তা ১৪৫০ থেকে ১৫০০ টাকা, দেশি নাজিরাইশ বিক্রি হচ্ছে ১৪২০ থেকে ১৪৪০ টাকায়। ৫০ কেজি ওজনের জিরা চালের বস্তা বিক্রি হচ্ছে ২৮০০ টাকায়, মোটা নিম্ন মানের আতপ চাল বিক্রি হচ্ছে ১৭০০ থেকে ১৮০০ টাকায়। দেশি বিআর ২৮ ও বিআর ২৯ চাল বিক্রি হচ্ছে (৫০ কেজি) ২৪২০-২৪৫০ টাকা। ভালো মানের কাটাকারী চাল বিক্রি হচ্ছে ২৭০০ থেকে ২৮০০ টাকায়। নবানি কাটারিভোগ ৩৪০০ টাকা, অঞ্জন কাটারিভোগ ৩৮৫০ টাকা, চিনিগুড়া চাল বিক্রি হচ্ছে ৪২০০ টাকায়।

আড়তদাররা জানিয়েছেন, পাইকারীতে চালের দাম কমার কোন সম্ভাবনা নেই। তবে পৌষ মাসের শুরুতে দেশি আমন ধানের মৌসুম শুরু হলে তখন কিছুটা কমতে পারে। পর্যাপ্ত সরবরাহের পর নতুন করে শুল্ক হার কমানোর সুবিধায় দেশের বাজারে প্রবেশ করেছে আমদানি করা চাল। কিন্তু গ্রাহক পর্যায়ে কোনো ভাবেই এর সুফল মিলছে না। দফায় দফায় বেড়ে নির্দিষ্ট দরেই ঘুরপাক খাচ্ছে দেশিয় চালের খুচরা বাজার। ফলে বাড়তি দামে চাল কিনতে নাভিশ্বাস সাধারণ ক্রেতাদের। পাইকারীতে সহনীয় মাত্রার চাল খুচরায় এসে পকেট কাটছে সাধারণ মানুষের। সরকারি উদ্যোগকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে খুচরা পর্যায়ে চালের দাম বৃদ্ধির কারণ খুঁজতে বাজার তদারকির ওপর জোর দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

পাইকারী ও খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, দেশে চালের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। এরপরও একশ্রেণির সিন্ডিকেট চক্র চাল মজুদ করে রেখেছে। ইচ্ছে মতো তারা চালের দাম নির্ধারণ করে বাড়তি দামে বাজারে ছাড়ছে। এতে খুচরা বিক্রেতাদের বেশি দামে কিনে বিক্রি করতে হচ্ছে বাড়তি দামে।

ভালো মানের চাল কিনতে ক্রেতাদের এখন গুনতে হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা। খুচরা ব্যবসায়ীদের দৌরাত্মে বাজারে স্থিতিশীল হচ্ছে না বলে দাবি করছে চাল ব্যবসায়ীরা।

ব্যবসায়ীরা জানিয়েছে, শুল্ক হার কমানোর সিদ্ধান্তের পর ভারতে চালের দাম বেড়েছে। দেশেও পর্যাপ্ত চালেল মজুদ আছে কিন্তু পাইকারী পর্যায়ে কমছে না।

নগরীর চাক্তাই চালপট্টির পাইকারী চালের দোকান মেসার্স আবদুল মন্নান এন্ড সন্স এর প্রোপাইর মো. মাহাবুল আলম বলেন, চালের দাম গত দুই মাসে কয়েক দফায় বেড়ে এখনো বাড়তি দামে স্থিতিশীল রয়েছে। পাইকারী পর্যায়ে করার সম্ভবনা দেখছি না। তবে আমন ধান বাজারে আসলে তখন কিছুটা কমতে পারে।

চট্টগ্রামে চালের বৃহৎ আড়ত পাহাড়তলী চাল ব্যবসায়ী বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এসএম নিজাম উদ্দীন বলেন, দেশে পর্যাপ্ত চালেল মজুদ রয়েছে। ভারত থেকে বেসরকারিভাবে এলসি করা চালও দেশে আসছে। সরকারীভাবে ভিয়েতনাম থেকে আমদানী করা চালও দেশে এসেছে। তারপরও বাড়তি দামে স্থিতিশীল রয়েছে বর্তমান বাজার। ধারণা করছি আমন ধান বাজারে প্রবেশ করলে ও সরকারী বিভিন্ন খাদ্যবান্ধব কর্মসূচী কাজের বিনিময়ে খাদ্য চালুসহ ন্যায্যমূল্যে চাল বিক্রির পদক্ষেপ নিলে দাম কিছুটা কমবে।

সিন্ডিকেডের কারসাজি আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, অবশ্যই সিন্ডিকেডের কারসাজি আছে। না হয় পর্যাপ্ত আমদানী ও মজুদ থাকার পরও কেনো এত দামে চাল বিক্রি হচ্ছে।

তিনি বলেন, অনেকে ইন্ডাস্ট্রি বন্ধ করে দিয়ে নতুন ভাবে চালের ব্যবসা শুরু করেছে। ইচ্ছেমতো মজুদ করে দাম বাড়াচ্ছে। এটা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। চালের ব্যবসায়ীরা চাল আমদানী করবে। আমরা সরকারিভাবে বাজার তদারকির দাবি জানাচ্ছি। এদিকে নগরীর খুচরা পর্যায়ে মোটা চাল ৪৫ থেকে ৪৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া মাঝারি মানের বেতি চালের দাম ৫৫ থেকে ৫৮ টাকা, পাইজার ৬২ থেকে ৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। নগরীর মোমিন রোডের শরীফ স্টোরে ৫৫ টাকার নিচে আতপ চাল বিক্রি হচ্ছে। নগরীর রিয়াজুদ্দিন বাজার ও বহদ্দারহাট ঘুরে একই চিত্র দেখা গেছে চালের দামের। বেশ কয়েক মাস ধরে সাধারণ ক্রেতাদের এই দামে চাল কিনতে হচ্ছে।

এসএএস/জেএইচ/চখ

এই বিভাগের আরও খবর