chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

সিন্ডিকেটের কারণে ডিম,আলু,পেঁয়াজে অস্থিরতা

চাহিদার চেয়ে প্রতিদিন দেশে ডিম উৎপাদন হয় ৫০ লাখ পিস বেশি। বার্ষিক চাহিদার চেয়ে এবার আলুর উৎপাদন ২৬ লাখ টন, পেঁয়াজের উৎপাদন ১০ লাখ টন বেশি হয়েছে। তারপরেও আমদানি ছাড়া নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না এই তিন পণ্যের বাজার।

উৎপাদনকারীরা বলছেন, সিন্ডিকেট না ভেঙে উল্টো আমদানির সিদ্ধান্তে চরম ক্ষতিগ্রস্ত হবেন কৃষক আর খামারিরা।

প্রশ্ন উঠেছে— উদ্বৃত্ত থাকা ৫০ লাখ পিস ডিম, ২৬ লাখ টন আলু আর ১০ লাখ টন পেঁয়াজ চাহিদার বেশি উৎপাদন ডিম-আলু-পেঁয়াজ যাচ্ছে কোথায়?

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, দেশে আলুর বার্ষিক চাহিদা ৮৫ লাখ টন। তাদের হিসেবে ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশে আলুর উৎপাদন হয়েছে এক কোটি ১১ লাখ টন। অর্থাৎ বার্ষিক চাহিদার চেয়েও উৎপাদন হয়েছে ২৬ লাখ টন বেশি। দেশে বর্তমানে পেঁয়াজের বার্ষিক চাহিদা ২৬ লাখ টন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশে পেঁয়াজের উৎপাদন হয়েছে ৩৬ লাখ টন। অর্থাৎ চাহিদার বেশি উৎপাদন হয়েছে ১০ লাখ টন।

দেশে ডিমের উৎপাদন দিনে গড়ে সাড়ে চার কোটি পিস। সেখানে দৈনিকের চাহিদা চার কোটির মতো। অর্থাৎ প্রতিদিন ৫০ লাখ পিস ডিম উদ্বৃত্ত থাকে। ডিম-আলু-পেঁয়াজের উদ্বৃত্ত উৎপাদনের পরেও বাজার নিয়ন্ত্রণে এই তিন পণ্য আমদানি করতে বাধ্য হচ্ছে সরকার। যদিও উৎপাদনকারীদের দাবি- আমদানির দিকে মনোযোগ না দিয়ে সরকারের সিন্ডিকেট ভাঙা উচিত। এর সঙ্গে এক মত কৃষি অর্থনীতিবিদরাও।

বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুমন হাওলাদার বলেন, দেশে অতিরিক্ত ডিম অতিরিক্ত উৎপাদন হচ্ছে। সিন্ডিকেট ভাঙতে পারলে আমদানির প্রয়োজন নাই। সিন্ডিকেট উৎপাদন খরচ বাড়িয়ে দিচ্ছে, তাই দাম বাড়ছে। দাম বাড়ার কোনো কারণ নাই। একই সঙ্গে তারা মজুত করে ডিমের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে।

একাধিক অর্থনীতিবিদরা বলেন, দীর্ঘমেয়াদি উৎপাদন বাড়ানো এবং বাজার নিয়ন্ত্রণ করা, এটি মূল উদ্দেশ্য হওয়া উচিত। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে যখন ফসল নষ্ট হয়ে যায়, তখন বাধ্য হয়ে আমদানি করতে হয়। সেসব ক্ষেত্র ছাড়া আমদানি করার জরুরি না।

ক্যাবের সহ সভাপতি এস এম নাজের হোসন বলেন, ভোক্তা স্বার্থে সব পণ্যেরই আমদানি উন্মুক্ত থাকতে হবে। তাহলে সিন্ডিকেটের কারসাজি আর মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য কমবে।

তিনি বলেন, যদি আমদানির সুযোগ থাকে তাহলে আমাদের দেশের যারা উৎপাদক আছে তারা কীভাবে উৎপাদন সাশ্রয়ী হবে সেদিকে মনোযোগী হবে। যদি কোনো প্রতিযোগিতার ভয় না থাকে তাহলে কোনো পদক্ষেপ উৎপাদক সহজে নেবে না। মুক্তবাজার অর্থনীতিতে দাম বেঁধে দিয়ে আর অভিযান করে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয় বলেও মনে করেন তিনি।

বুধবার কৃষি মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়,সরকার গত দুই দিনে ৪৯ হাজার ৭৫৫ টন আলু আমদানির অনুমতি দিয়েছে। ৭৭টি আবেদনের বিপরীতে এ অনুমোদন দেয়া হয়েছে। আমদানি শুরুর পর থেকে পাইকারি বাজারে প্রতিদিনই আলুর দাম কমার খবর আসতে থাকে ।

ব্যবসায়ীরা জানান, আমদানিটা নিয়মিত হলে স্বাভাবিক হয়ে আসবে আলুর দাম। এর আগে ১৪ সেপ্টেম্বর আলুর দাম ঠিক করে দেয় সরকার। সে সময়ে উৎপাদক পর্যায়ে প্রতি কেজি আলুর যৌক্তিক দাম ১৪ টাকা ১৭ পয়সা, পাইকারি পর্যায়ে ২৭ টাকা ৬৩ পয়সা এবং খুচরা পর্যায়ে ৩৫ টাকা ৮৭ পয়সা ঠিক করা হয়। একই দিন ক্রমাগত দাম চড়তে থাকার মধ্যে দেশে প্রথমবারের মতো ডিম আমদানির অনুমতি দেয় সরকার। শুরুতে চার কোটি ডিম আমদানির অনুমোদন দেয়া হলেও পরে আরও আমদানির অনুমতি দেয়া হয়। সেদিন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি জানান, প্রথমে অল্প পরিমাণে ডিম আমদানি করা হবে। এরপরও যদি দাম না নিয়ন্ত্রণে থাকে তাহলে ব্যাপক আকারে আমদানি করা হবে।

 

 

 

তাসু/চখ

এই বিভাগের আরও খবর