চট্টগ্রাম কক্সবাজার মহাসড়কের কর্ণফুলীতে ঝুঁকি নিয়ে সড়ক পার
ফুটওভার ব্রিজ স্থাপনের দাবি
কিছুতেই থামানো যাচ্ছে না সড়ক দুর্ঘটনা। ট্রাফিক আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগের অভাবে লাফিয়ে বাড়ছে কর্ণফুলীকে সড়ক দুর্ঘটনা। অদক্ষ ও লাইসেন্সবিহীন চালকের দাপটে দুর্ঘটনায় লাগাম টানা যাচ্ছে না। প্রতিদিনই ঘটছে কোন না কোন দুর্ঘটনা। সড়কে ঝরছে প্রাণ। দীর্ঘ হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল। কলেজ বাজার এলাকায় শিক্ষার্থীরা দাবি তুলেছেন ফুটওভার ব্রিজ স্থাপনের। সাধারণ পথচারিরা চান চৌরাস্তার মোড় মইজ্জ্যারটেকে চতুর্মুখ ফুটওভার ব্রিজ।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, ২০১৯ সালের ৬ এপ্রিল সকালে আহত নাজমা আক্তার মুন্নি নামে এ জে চৌধুরী বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীকে বাস চাপে দিলে স্কুল কলেজের সামনে শত শত শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে ফুটওভার ব্রিজের দাবি তুললেও ৫ বছরেও কোন পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষকে।
এছাড়াও গত ৫ ফেব্রুয়ারি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে যাওয়ার সময় পঞ্চাশোর্ধ্ব জয়নাব বেগমকে দ্রুতগতির একটি জীপ গাড়ী ধাক্কা দিলে ঘটনাস্থলেই মারা যান তিনি। ঘটনাটি ছিলো বড়উঠানের পিএবি সড়কে। নিহত জয়নাব বেগম (৫৫) কর্ণফুলী উপজেলা বড়উঠান (৮ নম্বর ওয়ার্ড) বালির বাপের বাড়ির আইয়ুব আলীর স্ত্রী।
২১ জানুয়ারি রাত সাড়ে ৯টার দিকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের কর্ণফুলী কলেজবাজারে ট্রাকের ধাক্কায় মো. জিহাদ (২২) নামে এক সাইকেল আরোহী নিহত হয়েছেন। নিহত যুবক বাঁশখালী উপজেলার হারুন বাজার এলাকার জহির উদ্দীন হেলালের ছেলে।
গত বছরের ১৮ জুন বিকেল ৩ টার দিকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের মইজ্জ্যারটেক এলাকায় যাত্রীবাহী দুটি বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে ঘটনাস্থলে ৫ জন নিহত হন। আহত হন ২০ জনের অধিক।
গত ২৯ মার্চ কর্ণফুলী উপজেলার শিকলবাহা কলেজবাজার টেম্পু থেকে নামার সময় ড্রাম ট্রাকের চাপায় আবদুল হান্নান (৩০) নামে আরেক যাত্রী নিহত হন। নিহত আবদুল হান্নান কর্ণফুলী উপজেলার আকবর হোসেনের ছেলে।
এভাবেই সদক দুর্ঘটনায় প্রাণ যাচ্ছে অনেকের তবুও কলেজ বাজার ও মইজ্জ্যারটেক মোড় এলাকায় ব্যস্ততম চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের আরাকান এ সড়কে প্রতিনিয়ত ঝুঁকি নিয়ে পথ চলছে পথচারীরা। অনেকে চলন্ত গাড়িকে হাতের ইশারায় থামিয়ে ঝুঁকি নিয়ে পার হতে দেখা গেছে।
পথচারীরা বলছেন, মইজ্জ্যারটেকে একটা ফুটওভার ব্রিজ না থাকায় প্রতিনিয়ত ঝুঁকি নিতে হচ্ছে। কলেজবাজারে টেকসই রঙ দিয়ে চিহ্নিত স্পীড ব্রেকার না থাকায় জীবন হাতে নিয়ে রাস্তা পার হতে হচ্ছে। অনেক সময় স্কুলগামী ছেলেরা দুর্ঘটনায় পড়ে নিহত ও আহত হবার খবরও কম না।
কলেজ বাজারের ব্যবসায়ী মোক্তার হোসেন বলেন, ‘প্রতিদিন শত শত, হাজার হাজার মানুষ এ রাস্তা পারাপার হয়। ওভারব্রিজ না থাকায় এদিক সেদিক দিয়ে সবাই ঝুঁকি নিয়ে পার হচ্ছে। বিশেষ করে বাচ্চা নিয়ে যখন নারীরা পার হন, তখন আমার কাছে খুবই ভয় লাগে। এখানে একটা ওভারব্রিজ দরকার। নাহয় স্পীড ব্রেকার বা টেকসই ব্যবস্থা।’
মইজ্জ্যারটেক মোড় এলাকার ব্যবসায়ি মোহাম্মদ মিরাজ বলেন,‘বাধ্য হয়ে ঝুঁকি নিয়েই আমাদেরও রাস্তা পার হতে হয়। তা না হলে উপায় নেই। কারণ নেই স্পীড ব্রেকার, নেই জেব্রা ক্রসিং। এ সুযোগে গাড়িগুলোও অতিরিক্ত বেপরোয়া।’
মইজ্জ্যারটেক মোড়ে দায়িত্বরত ট্রাফিক কনস্টেবল আলামিন বলেন, ‘নিয়মিতই ডিউটি করি। মানুষ খুব কষ্ট করে রাস্তা পার হয়। এটা কোনো নির্দিষ্ট সিগন্যালের জায়গা নয়। এ কারণে গাড়ি থামিয়ে পার করাও সম্ভব নয়। কিন্তু মানুষের চাপও তো অনেক। একটা ওভারব্রিজ না হলে সমাধান সম্ভব নয়।’
কর্ণফুলী এলাকার জনপ্রতিনিধি আবদুন নুর ও ফরিদ জুয়েল বলেন, ‘মহাসড়ক পারাপারে নির্দিষ্ট জেব্রা ক্রসিং, ফুটওভার ব্রিজ, আন্ডারপাস সুবিধার কথা থাকলেও কলেজবাজার ও মইজ্জ্যারটেকে নেই কোনো সঠিক ব্যবস্থাপনা। রাস্তা পারাপারে পথচারীরা মানছেন না নিয়ম। দেখা যায় চলন্ত গাড়ির ফাঁকেই পার হন লোকজন।’
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রামের দোহাজারী সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী প্রকৌশলী সুমন সিংহ বলেন, ‘মহাসড়কে স্পীড ব্রেকার দেওয়া সম্ভব না। কলেজ বাজার ও মইজ্জ্যারটেক মোড়ে কোনো ওভারব্রিজ নির্মাণের পরিকল্পনা আপাতত নেই। ওভারব্রিজ নির্মাণ যুক্তিসঙ্গত হবে বলে মনে হয় না। নির্দিষ্ট লোকেশনে জেব্রা ক্রসিং তৈরি করে দেওয়া যেতে পারে। সবচেয়ে বড় কথা জনগণকে সচেতন হতে হবে। এটার কোন বিকল্প নেই।’
- ফখ|চখ