chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

টাকার বদলে ‘মানুষ’ বন্ধক, ইয়াবার চালানের টাকা শোধ না হলে চলতো নির্যাতন

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ অর্থের বিনিময়ে জমিজমা বন্ধক রাখে মানুষ।তবে অবিশ্বাস্য হলেও সত্য দেশে ইয়াবা আনতে মিয়ানমারে মানুষকে বন্ধক রাখছেন কক্সবাজারের মাদক ব্যবসায়ীরা।যতদিন ইয়াবার চালানের টাকা শোধ না হয়, ততদিন টর্চারসেলে বন্দির করে নির্যাতন চালানো হতো ।

এদিকে, খবর পেয়ে (২৭ আগস্ট) রাতে উখিয়া উপজেলার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অভিযান চালিয়ে নবী হোসেন গ্রুপের পাঁচ সদস্যকে গ্রেফতার করে র‍্যাব। তাদের কাছ থেকে চার লাখ ১০ হাজার ইয়াবা, একটি বিদেশি একে-২২ রাইফেল, একটি বিদেশি পিস্তল, একটি এসবিবিএল ও ১৭ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়।

জানা যায়, ২০২০ সালের শেষের দিকে মানুষ বন্ধক রেখে ইয়াবা লেনদেনের প্রথা চালু করেন আলোচিত রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী নবী হোসেন। পাঁচদিন আগে অস্ত্র-ইয়াবাসহ নবী হোসেন গ্রুপের পাঁচ সদস্যকে গ্রেফতার করে র‍্যাব ১৫। গ্রেফতারের পর মানুষ বন্ধক রেখে ইয়াবার কারবার ও টাকা না পেলে বন্দিদের ওপর নির্যাতনের বিষয়টি স্বীকার করেন তারা।

র‍্যাব-১৫ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল খায়রুল ইসলাম সরকার বলেন, গোপন সংবাদের ভিক্তিতে অভিযান চালিয়ে নবী হোসেন গ্রুপের এসব সদস্যকে অস্ত্র ও ইয়াবাসহ গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানান- নবী হোসেনের ডেরায় মানুষ বন্ধক রেখে ইয়াবার ব্যবসা হয়। তার ডেরায় অনেকেই বন্ধক রয়েছেন। এরই মধ্যে টাকা শোধ করতে না পারায় বন্ধক থাকা অনেক ব্যক্তিকে হত্যা করেছেন নবী গ্রুপের সদস্যরা। নবী হোসেনকে ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

মিয়ানমারের টর্চারসেলে নির্যাতনের শিকার হওয়াদের একজন নুরুল আমিন। তিনি কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের চকিদারপাড়া এলাকার আবদুর রাজ্জাকের ছেলে। তাকে বন্ধক রেখে মিয়ানমার থেকে ইয়াবার চালান নিয়ে আসেন এপারের ইয়াবা ব্যবসায়ীরা। পরে টাকা শোধ না করে বন্ধ করে দেন যোগাযোগও। ফলে নুরুল আমিনের ওপর নেমে আসে নির্যাতন।

নুরুল আমিনকে বন্ধক রেখে ৫০ হাজার ইয়াবা নিয়ে আসেন শহিদুল্লাহ ও মনসুর। যার মূল্য প্রায় ১১ লাখ টাকা। কিন্তু এখনো সেই টাকা দিতে না পারায় সেখানে আটকে আছেন নুরুল আমিন।

নুরুল আমিন পেশায় জেলে। স্থানীয় আলী হোসেনের ট্রলারে কাজ করতেন তিনি। গত ২৭ জুলাই জাল কেনার কথা বলে নুরুল আমিনকে টেকনাফ নিয়ে যান আলী হোসেনের ছেলে শহিদুল্লাহ ও তার সহযোগী মনছুর। সেখান থেকে মিয়ানমারের আকিয়াব শহরের কাছে যান তারা। এরপর সেখানেই নুরুল আমিনকে রেখে উধাও হয়ে যান দুজন।

নুরুল আমিনের স্বজনদের দাবি, টাকা দিয়ে নুরুল আমিনকে ফিরিয়ে আনার আশ্বাস দিয়েছিলেন শহিদুল্লাহ ও মনছুর। কিন্তু তারা তা না করায় জীবন নিয়ে শঙ্কায় পড়েছেন নুরুল আমিন। তবে এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত শহিদুল্লাহ ও মনছুরের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব হয়নি।

সম্প্রতি মিয়ানমারে বন্ধক রাখা আরো একজনের নির্যাতনের ভিডিও ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। যেটিতে দেখা যাচ্ছে- নির্ধারিত সময়ে টাকা শোধ না করায় শিকলে বেঁধে রড দিয়ে পেটানো হচ্ছে তাকে। নির্যাতনের শিকার ওই ব্যক্তির নাম আলী হোসেন। তিনিও বাহারছড়া এলাকার বাসিন্দা। নির্যাতনের ভিডিওটি তার পরিবারের কাছে পাঠান মাদক ব্যবসায়ীরা।

মানুষ বন্ধক রেখে ইয়াবা ব্যবসার বিষয়ে কথা বললে টেকনাফ মডেল থানার ওসি মো. হাফিজুর রহমান বলেন, একটি নির্যাতনের ভিডিওর বিষয়ে শুনেছি। কিন্তু কেউ অভিযোগ করেননি। তবু ঘটনাটি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

প্রেস বিজ্ঞপ্তি /জুইম/এমআর

এই বিভাগের আরও খবর