chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

 বছরের শুরুতে বড় পতনে জ্বালানি তেল

২০২৩ সালের প্রথম সপ্তাহে বিশ্ববাজারে বড় পতন হয়েছে জ্বালানি তেলের দামে । এক সপ্তাহেই ৮ শতাংশের ওপরে কমে গেছে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম । পাশাপাশি ব্রেন্ট ক্রুড অয়েলের দামেও বড় পতন হয়েছে।

নতুন বছরে বিশ্ববাজারে লেনদেনের শুরুতে প্রতি ব্যারেল  ৮০ দশমিক ২৬ ডলার অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম ছিল । ৩ জানুয়ারি লেনদেনের একপর্যায়ে তা বেড়ে ৮০ দশমিক ৯৫ ডলারে উঠে যায়। এরপর থেকেই কমতে শুরু করে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম

ধারাবাহিকভাবে সপ্তাহ শেষে দাম কমতে কমতে প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম দাঁড়িয়েছে ৭৩ দশমিক ৭৭ ডলার। গত এক সপ্তাহে প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম কমেছে ৬ দশমিক ৭৩ ডলার বা ৮ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ।

অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের পাশাপাশি গত সপ্তাহে বড় দরপতন হয়েছে ব্রেন্ট ক্রুড অয়েলের। সপ্তাহের ব্যবধানে ব্রেন্ট ক্রুড অয়েলের দাম কমেছে ৮ দশমিক ৫৬ শতাংশ। এতে বর্তমানে প্রতি ব্যারেল ব্রেন্ট ক্রুড অয়েলের দাম দাঁড়িয়েছে ৭৮ দশমিক ৫৬ ডলার।

রেকর্ড এ দরপতনের পরেই অবশ্যই তেলের দাম বাড়তে থাকে। এতে রেকর্ড দরপতনের ধকল সামলে ২০২০ সালের বেশিরভাগ সময় প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত তেলের দাম ৪০ ডলারে আশেপাশে ঘুরপাক খাচ্ছিল।

বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম পর্যালোচনায় দেখা যায়, বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া মহামারি করোনাভাইরাসের প্রকোপ ভয়াবহ রূপ নিলে ২০২০ সালের ২০ এপ্রিল বিশ্ববাজারে ইতিহাসের সর্বোচ্চ দরপতনের মধ্যে পড়ে জ্বালানি তেল। সেদিন প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত তেলের দাম ঋণাত্মক ৩৭ ডলারের নিচে নেমে যায়।

কিন্তু বিশ্বজুড়ে মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নতুন করে বৃদ্ধি পাওয়া এবং লিবিয়ার তেল উত্তোলন বৃদ্ধি পাওয়ায় মাঝে বিশ্ববাজারে তেলের বড় দরপতন হয়। ২০২০ সালের অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে অপরিশোধিত ও ব্রেন্ট ক্রুড অয়েলের দাম প্রায় ১০ শতাংশ কমে যায়।

তবে এ পতনের ধকল কাটিয়ে ওই বছরের নভেম্বর থেকে আবার তেলের দাম বাড়তে শুরু করে। তারপরও প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত তেলের দাম ৫০ ডলারের নিচে থেকেই ২০২০ সাল শেষ হয়।

আর ২০২১ সালের শুরুতে তেলের দাম বৃদ্ধির প্রবণতা দেখা যায়। কয়েক দফা দাম বেড়ে করোনার মধ্যে প্রথমবার ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত তেলের দাম ৬০ ডলারে উঠে আসে। এর মাধ্যমে মহামারি শুরু হওয়ার আগের দামে ফিরে যায় তেল।

২০২১ সালের জুন থেকে তেলের দাম বৃদ্ধির প্রবণতায় নতুন হাওয়া লাগে। ২০১৮ সালের অক্টোবরের পর গত বছরের জুনে করোনার প্রকোপের মধ্যে প্রথমবারের মতো অপরিশোধিত তেলের ব্যারেল ৭৫ ডলারে উঠে আসে। জ্বালানি তেলের এ দাম বাড়ার প্রবণতা অব্যাহত থাকে পরের কয়েক মাস।

এতে ২০২১ সালের অক্টোবরে প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত তেলের দাম ৮০ ডলার স্পর্শ করে। যার মাধ্যমে ২০১৪ সালের নভেম্বরের পর আবারও অপরিশোধিত তেলের ব্যারেল ৮০ ডলারের দেখা পায়। অবশ্য প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত তেল ৭৫ ডলারে থেকে ২০২১ সাল শেষ হয়।

আর ২০২২ সালের শুরু থেকেই জ্বালানি তেলের দামে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা যায়। সদ্য সমাপ্ত বছরটির প্রথম মাস জানুয়ারিতে অপরিশোধিত তেলের দাম বাড়ে ১৬ শতাংশের বেশি। ব্রেন্ট ক্রুড অয়েল দাম বাড়ে প্রায় সাড়ে ১৫ শতাংশ।

নিউইয়র্কভিত্তিক ফরেন এক্সচেঞ্জ কোম্পানি ওনাডার বিশ্লেষক এডওয়ার্ড মোয়া ফেব্রয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময়ে বলেন, ইউক্রেনে আক্রমণ হলে ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ১০০ ডলার ছাড়াতে কোনো বাধা থাকবে না।

জানুয়ারির মতো ফেব্রুয়ারিতেও জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার প্রবণতা দেখা দেয়। এর মধ্যেই রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করলে জ্বালানি তেলের দাম ১০০ ডলার ছাড়িয়ে যাবে এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেন বাজার বিশেষজ্ঞরা।

দফায় দফায় দাম বেড়ে ৮ মার্চ প্রতি ব্যারেল ব্রেন্ট ক্রুড অয়েলের দাম রেকর্ড ১২৩ দশমিক ৪৮ ডলারে উঠে যায়। আর প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম ওঠে ১১৯ দশমিক ৬৫ ডলারে।

তার এ অভিমত সত্য প্রমাণিত হয় গত বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া ইউক্রেনে আগ্রাসন শুরু করার পরপরই। রাশিয়া ইউক্রেনে আগ্রাসন শুরু করতেই আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম ১০০ ডলারে উঠে যায়।

তবে জুনের পর থেকে কমতে শুরু করে জ্বালানি তেলের দাম। দফায় দফায় দাম কমে গত বছরের ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত তেলের দাম ৭১ দশমিক ২১ ডলারে নেমে যায়।

কিন্তু ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে দাম আবার কিছুটা বাড়ে। এতে ২০২২ সাল শেষে প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত জ্বলানি তেলের দাম ৮০ দশমিক ২৬ ডলারে দাঁড়ায়।

 

সাআ / চখ

 

এই বিভাগের আরও খবর