chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

শেষ মুহূর্তের সমীকরণ মেলাতে দৌড়ঝাপ পদ প্রত্যার্শীদের

যুবলীগের সম্মেলন

নিজস্ব প্রতিবেদক: সময় যতই ঘনিয়ে আসছে, চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের সম্মেলনের দিনক্ষণ ঘিরে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা বিরাজ করছে। শেষ মুহূর্তের সমীকরণ মেলাতে গিয়ে দৌড়ঝাঁপের সঙ্গে ভিন্ন মাত্রা নিয়ে মাঠে সরব থাকছেন নেতাকর্মীরা। একই সঙ্গে নতুন করে কাউন্সিলর ভোটাভুটি ও সমঝোতার বিষয়টি আলোচনা আসছে। সেক্ষেত্রে সম্মেলনে দু একদিন পর এমনকি দীর্ঘ সময়ের পর নাম ঘোষণা নিয়েও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন অনেকে।

আগামী ৩০ মে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন। সম্মেলনকে সামনে রেখে নগরীতে পদ প্রত্যাশী, যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতৃত্ব এবং সম্মেলনে আসা অথিতিদের স্বাগত জানিয়ে ব্যানার, ফেস্টুন তোরণে ছেয়ে গেছে।

তবে চট্টগ্রামে আওয়ামী রাজনীতির রেওয়াজ অনুযায়ী শীর্ষ পদে পেতে পদপ্রত্যার্শীরা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে জোর তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন। তদবির চালাতে পড়ে আছেন ঢাকায়। এই বলয়ের একটি পক্ষে রয়েছেন সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র চট্টলবীর এবিএম মহিউদ্দীন চৌধুরী। মহিউদ্দীনের প্রয়াণে তার ছেলে শিক্ষা-উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল এই বলয় দেখভাল করছেন। অন্য পক্ষটি সাবেক সিটি মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের।

সদ্য ঘোষিত হওয়া নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটির দুই শীর্ষ পদে চমক দেখিয়েছেন শিক্ষা-উপমন্ত্রীর অনুসারীরা। অপরদিকে সহসভাপতিসহ বেশ কয়েকটি পদ নাছিরের অনুসারীদের অনুকূলে গিয়েছে।

মহানগর যুবলীগের শীর্ষ দুই পদেও আসতে ইচ্ছুক এমন ছয় জনের সঙ্গে কথা হয়েছে চট্টলার খবরের। যদিও শীর্ষ দুই পদের জন্য কেন্দ্রে ১০৮ জনের জীবনবৃত্তান্ত জমা পড়েছে। এর মধ্যে সভাপতি পদে ৩৫ জন এবং সাধারণ সম্পাদক পদে আবেদন পড়েছে ৭৩ জনের।

পদপ্রত্যাশীরা বলছেন, আ. লীগের অন্যান্য সহযোগী সংগঠনের কমিটিতে অনেক সময় বিতর্কিত, অনুপ্রবেশকারী, মাদকাসক্ত ও অর্থের লেনদেনের অভিযোগ এলেও, যুবলীগের কমিটির ক্ষেত্রে স্বচ্ছতার রক্ষা করা হবে। এক্ষেত্রে অতীতের কর্মকাণ্ড, গোয়েন্দা প্রতিবেদন এবং স্থানীয় আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা ত্রাতা হয়ে ভূমিকা রাখবেন।

চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটিতে সভাপতি পদে প্রার্থী হয়েছেন করোনা আইসোলেশন সেন্টার করে আলোচনায় আসা কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সদস্য মুহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন। জানতে চাইলে তিনি বলেন, আওয়ামী রাজনীতিতে দুই ধারার বিষয়টি অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই। অনেকে উনাদের হাত ধরে রাজনীতি শিখেছেন, জনগণের ভালোবাসা পেয়েছেন। শিক্ষা উপমন্ত্রী আমাদের সমবয়সী। উনার বয়সের চেয়ে বড় কেউ পদে আসলে তাকে ভাই বলে ডাকতে হবে। এ বিষয়ে উনি অস্বস্তিতে পড়তে পারেন। তিনি চাইবেন তার চেয়ে কম বয়সী কেউ পদে আসুক। তেমনিভাবে নাছির ভাই চাইবেন যোগ্য কোনো নেতৃত্বে পদে আসুক।

এক প্রশ্নে ছাত্রলীগের সাবেক এই নেতা বলেন, অনেকে কারখানার শ্রমিক এবং বহিরাগত দিয়ে মিছিল শোডাউন করে কেন্দ্রীয় নেতাদের আর্কষণ করছে। কেন্দ্রীয় নেতারা যে হোটেলে উঠছেন তার আশেপাশ থেকে শুরু করে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার স্থান পর্যন্ত ব্যানার, ফেস্টুন করেছে। কিন্তু আমি ঘোষণা দিয়েছি শহরের কোথাও কোনো ব্যানার, ফেস্টুন করবো না। এই টাকায় আজ রাতে সিলেটে গিয়ে বন্যার্তদের প্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রী দিব। সদ্য ঘোষিত হওয়া নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটিতে অর্থের লেনদেন হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন সাজ্জাদ।

আসন্ন কমিটিতে দুই বলয়ের বাইরে বাকশালপন্থী সাবেক ছাত্র নেতা হিসেবে পরিচিত দেবাশীষ পাল দেবু সাধারণ সম্পাদক পদে জীবনবৃত্তান্ত দিয়েছেন। কমিটির বিষয়ে তিনি বলেন, পদ-পদবি ছাড়াই দীর্ঘদিন ধরে দল ও জনগণের পাশে থেকেছি। করোনা সংকটের সময় নগরীর ৪১ টি ওয়ার্ডে ফি চিকিৎসা সেবা দিয়েছি। কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের নির্দেশে নগরীর পতেঙ্গা ও হালিশহরে দুটি গৃহায়ণ প্রকল্পে কাজ সম্পন্ন করেছি। হঠাৎ করে পদ-পদবী চাইনি। কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ অবশ্যই পরিচ্ছন্ন, ত্যাগী ও মেধার মূল্যায়ন করবে।

আরেক সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যার্শী ওয়াহিদুল আলম শিমুল সঠিক নেতৃত্ব বাছাইয়ে ডোপ টেস্টের ওপর জোর দিয়েছেন। যদিও এখন পর্যন্ত যুবলীগের কমিটিতে ডোপ টেস্টের কোনো নজির নেই। শিমুল বলেন, অনেক ফেসবুক সেলিব্রেটি মদ, ইয়াবা খেয়ে বুদ হয়ে থাকছে এমন তথ্য আমাদের সবার জানা রয়েছে। যারা শীর্ষ পদে আসছেন তাদের ডোপ টেস্ট করা উচিত। এতে অনকে বিব্রত হলেও, একটি নির্দিষ্ট জায়গায় এটি পরীক্ষা করা যেতে পারে। কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ বিষয়টি ভেবে দেখতে পারে।

যুবলীগের সম্মেলন

এদিকে নগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. নুরুল আজিম রনি পছন্দের পদ টানতে ঢাকায় কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে সাক্ষাত করেছেন। এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, ছাত্রলীগের রাজনীতি ছেড়ে দেওয়ার পর যুব সমাজের সঙ্গে মানুষের কল্যাণে রাজনীতি করেছি। দলের বাইরে যুব সমাজের আস্থা অর্জনে কাজ করেছি। কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে দেখা করেছি। পদের ব্যাপারে আমি আশাবাদী।

সম্মেলনে নেতৃত্ব বাছাইয়ের ক্ষেত্রে কাউন্সিলর ভোট ও সমঝোতার বিষয়ে জানতে চাইলে রনি বলেন, বর্তমানে যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটি নগরীর চারটির ওয়ার্ডে সম্মেলন করেছে। সেক্ষেত্রে কাউন্সিলর ভোটাভুটির করা প্রায় অসম্ভব। আর সমঝোতা করে কোনো কমিটি দিলে অনেকে অসুন্তষ্ট হতে পারে। এটি দু-একদিন পেছাতে পারে। এমনকি নাম ঘোষণার ক্ষেত্রে দীর্ঘ বিলম্বও হতে পারে। আমরা কেন্দ্রকে বিষয়টি জানিয়েছি।

আরেক সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী এম আর আজিমও কাউন্সিলর ভোটের বিষয়টি সম্ভব নয় বলে জানান। তিনি বলেন, এটি কীভাবে সম্ভব। আহ্বায়ক কমিটি গত সাত বছরেও কোনো ওয়ার্ডে কাউন্সিল করেনি। আর ভোটাভুটিতে কতোটা স্বচ্ছ হবে তাও চিন্তা করতে হবে।

সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাসান মুরাদ বিপ্লব সভাপতি পদের জন্য চেষ্টা-তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, সবাই সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন। আশা করছি সভাপতি পদে পেলে সকলের সহযোগিতা নিয়ে নগরীর সব কয়টি ওয়ার্ডের কমিটি উপহার দিতে পারব।

এছাড়া নগর যুবলীগের বর্তমান কমিটির যুগ্ম-আহ্বায়ক মাহবুবুল হক সুমন, দিদারুল আলম, মো. সালাউদ্দীন, ওয়ার্ড কাউন্সিলর ওয়াসিম উদ্দীন, আরশেদুল আলম বাচ্চু, লিটর রায় চৌধুরী, সুমন দেবনাধ, সুরঞ্জিত বড়ুয়া লাভু শীর্ষ পদের জন্য শক্তি প্রতিদ্বন্দ্বী।

সম্মেলনের সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে যুবলীগের বর্তমান কমিটির যুগ্ম-আহায়ক বলেন, কেন্দ্রীয় নেতবৃন্দের সঙ্গে আলোচনা করেই সম্মেলনের যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হচ্ছে। সম্মেলন কীভাবে হবে, কী কী বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হবে এসব বিষয়ে কাজ করা হচ্ছে।

সূত্র জানায়, সম্মেলনে উদ্বোধন করবেন যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ। এছাড়া প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সংসদ সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম।

আরকে/নচ/চখ

এই বিভাগের আরও খবর