chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

সাতকানিয়ায় নির্বাচনে সহিংসতা – গ্রেফতার ৮

ডেস্ক নিউজঃ চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় ইউপি নির্বাচনে সহিংসতার ঘটনায় জড়িত ৮ জনকে আগ্নেয়াস্ত্রসহ গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। এসময় তাদের কাছ থেকে ৫টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ৪২ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়।

 

চট্টগ্রাম মহানগরী, চন্দনাইশ, সাতকানিয়া, বান্দরবন সদর ও ঢাকা মহানগরীর তেজকুনীপাড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করে র‌্যাব।

 

১৫ ফেব্রুয়ারী মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকায় অবস্থিত র‌্যাব হেড কোয়াটারের মিডিয়ে সেলে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিং এসব তথ্য জানান তিনি।

 

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, মো.কায়েস (২১), নাছির উদ্দিন(৩১),মো. নুরুল আবছার (৩৩), মো. মোরশেদ (২৬),মো. জসিম(২৪), মোহাম্মদ মিন্টু (২৬), কোরবান আলী (৩৭) ও মো. ইমাঈল (৫৫)।

 

র‌্যাবের লিগ্যাল এন্ড মিডিয়া উইংয়ের সহকারী পরিচালক ইমরান খান জানান, সাতকানিয়ার খাগরিয়ায় ইউপি নির্বাচনে ২টি কেন্দ্রে দেশীয় আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে অস্ত্রবাজী করেছে। তারা নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট করেছে। তাদের বিরুদ্ধে সাতকানিয়া থানায় মামলাও দায়ের করা হয়। সাতকানিয়ায় অস্ত্রবাজীতে জড়িতদের বিভিন্ন ছবি সংবাদপত্রেও প্রকাশিত হলে ব্যাপক আলোচনায় আসে বিষয়টি। পরে আমরা ঐ ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতারে গোয়েন্দা কার্যক্রম শুরু করি। তাদের দেয়া তথ্যমতে র‌্যাব-১৫ এর একটি দল বান্দরবান থেকে নাছির উদ্দিনকে গ্রেফতার করে। পরে তার দেয়া তথ্যমতে, ঢাকার তেজতুরী বাজার এলাকায় আত্মগোপনে থাকা কায়েসকে গ্রেপ্তার করা হয়। কায়েস মূলত খাগরিয়ায় নির্বাচনী সহিংসতায় অস্ত্রের যোগানদাতা।

 

গ্রেফতারকৃত মোঃ কায়েস গত দুই বছর যাবত চট্টগ্রামে একটি কোম্পানীতে চাকুরী করে আসছে। পাশাপাশি সাতকানিয়া উপজেলায় বিভিন্ন সময়ে সংঘটিত সহিংসতা ও হামলার ঘটনায় নেতৃত্ব প্রদান করে থাকে। সে এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের জন্য ৩০-৪০ জনের একটি সন্ত্রাসী দল পরিচালনা করতো। সে বিভিন্ন মাধ্যম থেকে আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশীয় অস্ত্র সংগ্রহ করে তার দলের সদস্যদের সরবরাহ করত বলে জানা যায়। সহিংসতার ঘটনায় তার নেতৃত্বে জসিম, মোর্শেদ, মিন্টু, আবছারসহ আরো শতাধিক সশস্ত্র সন্ত্রাসী সাতকানিয়ার খাগরিয়া ইউনিয়নে বিভিন্ন স্থানে সহিংসতা চালায়।

সহিংসতা পরে সে ঢাকায় আত্মগোপন করে। সহিংসতার ঘটনায় সাতকানিয়া থানায় বিস্ফোরকদ্রব্য আইনে দায়েরকৃত মামলায় এজাহারভুক্ত আসামী।

 

গ্রেফতারকৃত নাসির একটি কোম্পানীর চট্টগ্রাম বন্দর শাখার কর্মচারী। সে ২০১১-১৩ সাল পর্যন্ত মধ্যপ্রাচ্যে প্রবাসী ছিল। পরবর্তীতে দেশে এসে ঢাকার শাহবাগে ফুল বিক্রি করত। সে ওই সহিংসতায় সশস্ত্র দলের নেতৃত্ব প্রদান করেছে বলে জানা যায়। সহিংসতা চলাকালীন নাসিরকে মেরুন রংয়ের মাফলার ও মুখে লাল-সবুজ রং এর মাস্ক পরা অবস্থায় একটি একনলা বন্দুক হাতে দেখা যায়। পরবর্তীতে সে বান্দরবনের গহীন জঙ্গলে আত্মগোপন করে। সহিংসতার ঘটনায় সাতকানিয়া থানায় বিস্ফোরকদ্রব্য আইনে দায়েরকৃত মামলায় এজাহারভুক্ত আসামী নাসির।

 

গ্রেফতারকৃত আবছার ঢাকায় একটি কাভার্ড ভ্যান সমিতির ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে। যখনই সাতকানিয়ায় কোন সহিংসতার সম্ভাবনা দেখা দেয় তখন সে এলাকায় চলে আসে।সে নির্বাচনের আগে ঢাকা থেকে সাতকানিয়াতে যায় করে এবং কায়েসের নির্দেশে সাতকানিয়ার খাগরিয়াতে সহিংসতা চলাকালীন সন্ত্রাসীদের বিভিন্ন দিক নির্দেশনা ও নেতৃত্ব প্রদান করে। পরবর্তীতে সে ঢাকায় চলে আসে ও আত্মগোপন করে। আসামী  কায়েসকেও আত্মগোপনে থাকতে সহায়তা করে আবছার।

 

গ্রেফতারকৃত মোরশেদ কায়েসের গ্রুপের একজন অন্যতম সক্রিয় সদস্য। সে পেশায় একজন সিএনজি চালক। তাকে ঘটনার দিনে একটি একনলা বন্দুক হাতে সহিংসতা ও নাশকতা চালাতে দেখা যায়। সহিংসতার পর সে সাতকানিয়াতে আত্মগোপনে থাকে।

 

গ্রেফতারকৃত জসিম খাগরিয়ার বাসিন্দা ও পেশায় রাজমিস্ত্রী হলেও চুরি, ছিনতাই এবং ডাকাতিসহ বিভিন্ন সহিংসতায় বিভিন্ন সময়ে অংশ নেয়। সহিংসতা চলাকালীন একটি ছবিতে লাল জ্যাকেট পরিহিত অবস্থায় তাকে কার্তুজ/এ্যামোনিশনের একটি বস্তাসহ গ্রেফতারকৃত মোরশেদের পাশে দেখা যায়। সহিংসতার পর সে চট্টগ্রাম নগরীতে আত্মগোপন করে।

 

গ্রেফতারকৃত মিন্টু পেশায় গাড়ি চালক। সে বিগত ১৩-১৪ বছর যাবত চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় ভাড়ায় মাইক্রোবাস চালিয়ে আসছে। কায়েসের নির্দেশে সে সহিংসতার উদ্দেশ্যে বাহির থেকে অস্ত্র পরিবহণ করে। এছাড়াও তার তত্ত্বাবধানে সহিংসতার উদ্দেশ্যে ৩০-৩৫ জন বহিরাগত’কে বিভিন্ন পরিবহনের মাধ্যমে নিয়ে আসা হয়। সহিংসতা চলাকালীন তাকে ১টি আগ্নেয়াস্ত্রসহ হামলায় অংশ নিতে দেখা যায়। তার বিরুদ্ধে চান্দনাইশ থানায় দস্যুতা সংক্রান্ত মামলা রয়েছে।

 

গ্রেফতারকৃত কোরবান আলী পেশায় একজন নিরাপত্তাকর্মী। সে লাঠিসোঠা ও অন্যান্য দেশীয় অস্ত্র সরবরাহ করার মাধ্যমে সহিংসতায় প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ করে। সহিংসতার পরবর্তীতে সে সাতকানিয়াতে আত্মগোপনে থাকে। তার বাসা থেকে দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়।

 

গ্রেফতারকৃত ইসমাঈল পেশায় একজন জমির দালাল। আগে রংপুর থেমে তামাক সংগ্রহ করে সাতকানিয়ার বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করত। সে সাতকানিয়ার খাগরিয়া ইউনিয়নে সহিংসতায় লাঠিসোঠা ও অন্যান্য দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রের মাধ্যমে সক্রিয়ভাবে অংশ নেয়। সহিংসতার পরে সে সাতকানিয়াতে আত্মগোপনে থাকে।

 

জিজ্ঞাসাবাদে  কায়েস বেশ কয়েকজন ব্যক্তির কাছ থেকে ভাড়ায় অস্ত্র সংগ্রহ করত বলে তথ্য পাওয়া যায়। অস্ত্র সংগ্রহ করে কায়েস তার বিশ্বস্ত সদস্যদেরকে অস্ত্র সরবরাহের দায়িত্ব দিত। তারা গ্রুপের অন্যান্য সদস্যদেরকে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সহিংসতায় অস্ত্র সরবরাহ করত। কাজ শেষে অস্ত্র ফেরত দিলে তারা স্থানীয় কবরস্থান ও পুকুরপাড় সহ বিভিন্ন স্থানে সেসব অস্ত্র লুকিয়ে রাখত।

 

গ্রেফতারকৃত আসামীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলে জানায় র‍্যাব।

কেএম/চখ

এই বিভাগের আরও খবর