নগরীর বাংলাবাজার সাম্পানঘাট এখনো অরক্ষিত, করোনা ভাইরাস দ্রুত ছড়ানোর আশংকা
এম.এ.মতিন (বিশেষ প্রতিনিধি) :করোনাভাইরাস জ্বরে কাপছে দেশ। প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের সংক্রম ঠেকাতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। গণজমায়েত এবং মানুষের ঘরে থাকা নিশ্চিত করতে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে যাত্রীবাহী নৌযান, সড়ক পরিবহন এমনকি রেল যোগাযোগও।
কিন্তু চলমান সংকটের মধ্যেও থেমে নেই নগরীর বাংলাবাজার সাম্পান ঘাট, অভয়মিত্র ঘাট, সদরঘাট খেয়া পারাপার। ফলে গণজমায়েত ঘটছে ট্রলার কিংবা খেয়া পারাপারে। এমনকি সংকটময় পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে বাড়তি ভাড়া আদায় করছেন খেয়াঘাটের ইজারাদার সভাপতি লোকমান তাঁর সিন্ডিকেট বাহিনী।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, করোনাভাইরাসের প্রাদূর্ভাব ঠেকাতে অভ্যন্তরিণ রুটে সকল ধরনের যাত্রীবাহী লঞ্চ ও নৌ চলাচল ২৫ মার্চ থেকে অনির্দিষ্টকারের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এর ফলে নদীবন্দর থেকে শুরু করে ছোট-বড় সকল লঞ্চঘাটে যাত্রীদের উপস্থিতিও কম লক্ষ্যে করা গেছে। তবে থেমে নেই তাদের গণযাত্রা। বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে ছোট মাঝারি নৌকাতে অবাধে যাত্রা করছেন তারা।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, আগত বিদেশি জাহাজগুলোতে প্রচুর বিদেশী নাগরিক রয়েছে কেউ শ্রমিক, অফিসার কিংবা ইঞ্জিনিয়ার এরাও বাংলাদেশীর সাথে মিষে অবাধ যাতায়াত করছে নদীর এপার ওপার। এসব বিদেশী নাগরিকরা প্রয়োজনীয় কাজ সেরে চলে যাচ্ছেন সংশ্লিষ্ট বার্থিং করা জাহাজে। নদীর ওপারে তথা ইছানগর এলাকায় গড়ে উঠেছে কয়েকটি দেশীয় কলকারখানা তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে এসআলম সিমেন্ট ফ্যাক্টরী, ডায়মন্ড সিমেন্ট ফ্যাক্টরী ও মাসুদ ফিস সহ আরও অনেক। গড়ে উঠা কারখানাগুলোতে তবে কি এসব বিদেশী নাগরিকরা প্রকাশ্যে যাতায়াত করছে? এ প্রশ্ন স্থানীয় ও সচেতনমহলের।
বাংলাবাজার খেয়াঘাটে দেখা যায় প্রতিদিন ভোর ৬টা হতে গভীর রাত পর্যন্ত নৌ চলাচল অব্যাহত রয়েছে। প্রতি ৫-১০ মিনিট পর পর ছেড়ে যাচ্ছে বড় ইঞ্জিন চালিত নৌকাসমূহ। প্রতিটি নৌকাতেই গাধাগাধি করে ১০-১৫ জন করে যাত্রী পারাপার করছে প্রতিবার। প্রতি ৩ফিট অন্তর অন্তর সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য প্রশাসন থেকে বলা হলেও সাম্পানঘাটে দায়িত্বরত সদস্যরা এবং নৌকার চালকরা তা মোটেই কর্ণপাত করছেননা। ইঞ্জিন চালিত নৌকা পার হচ্ছেন ইছানগর সাম্পানঘাটসহ কর্ণফুলী ব্রীজঘাটসহ বিভিন্নস্থান হতে কর্মমুখী ফেরা মানুষ। এদের মধ্যে কে করোনা আক্রান্ত সেটা বোঝার উপায় নেই কারোর। যার কারণে শুধু যাত্রীরাই করোনা ভাইরাস নিয়ে আতঙ্কিত সংশ্লিষ্ট মহলের ও স্থানীয় বাসিন্দাদের।
যদিও এমন পরিস্থিতিতে খেয়া পারাপার তুলনামূলক কম যাত্রী যাতায়াত রয়েছেন বলে দাবি ঘাটের ইজারাদার সদস্যেদের। ঘাটগুলো লকডাউনের দাবি জানানো সত্যেও নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ তাদের সেই সিদ্ধান্তে একমত হয়নি বলে অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের।
তবে সদরঘাট নৌ থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকতা মিজানুর রহমান চট্টলার খবরের বিশেষ প্রতিবেদককে মুঠোফোনে জানান, বর্তমান সংক্রামক করোনা ঠেকাতে নৌ চলাচলে পুলিশ সদস্যরা নিয়মিত টহল অব্যাহত রয়েছে এমনকি ইজারাদারকে যাত্রী পারাপারসহ নৌ চলাচল বন্ধ করতে কঠোর নির্দেশ দেন এবং চলমান আইন মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবে বলে জানান।
স্থানীয় কাউন্সিলর ২৮নং ওয়ার্ডের প্রতিনিধি আবদুল কাদেরকে মুঠোফোনে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি বলেন যেহেতু বাংলাবাজার সাম্পানঘাট চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের অধীনে সেহেতু দেখভাল সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্ব এবং এ ঘাট যাত্রী পারাপার বন্ধ করতে সিটি কর্পোরেমনের ভূমিকা অন্যতম। তারপরও কাউন্সিলর বলেন যেহেতু উক্ত ঘাটটি আমার ওয়ার্ডের অধীনে তাই ঘাটের ইজারাদার সভাপতি লোকমানসহ আরও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের যাত্রী পারাপারে প্রয়োজনীয় কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্দেশ দিবেন।
এদিকে নৌ যাত্রী পারাপার কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল মনছুর আলী বাপ্পি চট্টলার খবরের প্রতিবেদককে মুঠোফোনে জানান বিশ্বব্যাপী মহামারী করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে সরকার নানা জনসচেতনামূলক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে দিক নির্দেশনা দিচ্ছেন সেখানে উভয় দিকের নদী পারাপারের যাত্রীরা সুরক্ষামূলক কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। দেখা গেছে বার্থিং করা বিদেশি জাহাজগুলো থেকে ছোট নৌকা দিয়ে নিয়মিত শ্রমিকরা বিরতিহীনভাবে সাম্পানঘাটে যাওয়া আসা করছে তাদেরই নেই কোন সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা এমনকি সাধারণ মাস্কও ব্যবহার বিধি মানছেন না। আগত বিদেশি জাহাজগুলোর মধ্যে যথেষ্ট বিদেশি শ্রমিক রয়েছেন সেখানে আমাদের দেশীয় শ্রমিকরা তাদের সংস্পর্শে মেলামেশার কারণে সংক্রামক করোনা ভাইরাস যেকোন মুহুর্তেই ছড়াতে পারে সেই আশংকাই করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এর প্রতিরোধ অচিরেই ঠেকাতে না পারলেই মহামারী করোনা ভাইরাস নগরজুড়ে ছড়িয়ে পড়বে।
সংশ্লিষ্ঠ সচেতন মহলের দাবি এমন পরিস্থিতিতে গণজমায়েত এড়াতে খেয়াঘাট বন্ধ রাখা জরুরী।