chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

অনলাইন শপিংএ প্রতারিত হলে মামলার পরামর্শ আইনজীবীর, সতর্কবার্তা পুলিশের

চট্টলার খবর স্পেশাল : মার্কেটে গিয়ে কেনাকাটার পাশাপাশি ঘরে বসে ইন্টারনেটভিত্তিক অনলাইন শপিং ব্যবসা আমাদের দেশেও এখন খুব পরিচিত হয়ে উঠেছে। দেশের অভিজাত থেকে মধ্যবৃত্ত এমনকি নিম্ন মধ্যবিত্তরা বর্তমানে অনলাইন শপিং মার্কেটপ্লেসগুলোয় ঝুঁকছেন।

সম্প্রতি বাহারি পণ্য একেবারে ঘরের দরজায় পৌঁছে দেওয়া ক্যাশ অন ডেলিভারি সিস্টেমের কারণে খুব দ্রুত অনলাইন কেনাকাটার গ্রাহক, বিশেষ করে তরুণ গ্রাহকের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমান সময়ে করোনা পরিস্থিতির কারণে দিন দিন এ ব্যবসা আরো বেড়েছে বহুগুন।

আবার অনলাইনে শপিং করতে গিয়ে নানাভাবে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন অনেকে। প্রতিনিয়ত বাড়ছে ভুক্তভোগীর সংখ্যাও। অনলাইনে পণ্য কিনে ক্রেতাদের কাছ থেকে সবচেয়ে যে অভিযোগটি বেশি আসছে সেটি হলো ওয়েবসাইটে প্রদর্শিত ছবির সঙ্গে পণ্যের কোন মিল নেই।

অনেক অনলাইন ক্রেতাই অভিযোগ করেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিভিন্ন পেইজ, গ্রুপ ও ওয়েভসাইটে চটকদার বিজ্ঞাপনে যেসব পণ্য দেখানো হয়,অর্ডার করার পর ডেলিভারি করার সময় ক্রেতাদের হাতে পৌছানো হয় নিম্নমানের আরেক পণ্য।

আবার বিভিন্ন অনলাইন পেজে পণ্যের জন্য অগ্রিম টাকা প্রেরণ করে পণ্য না পাওয়ার ঘটনাও ঘটছে অহরহ। এ ধরনের অভিযোগ বেশি আসছে মোবাইল হ্যান্ডসেট, হাতঘড়ি, ব্লেজার, শাড়ি প্রভৃতি পণ্য নিয়ে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যথাযথ তদারকি না থাকায় এমন প্রতারণার সুযোগ নিচ্ছে কিছু ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান।

কেউ যদি অনলাইনে পণ্য কিনে প্রতারিত হয় সেক্ষেত্রে দেশের প্রচলিত আইন অনুসারে ব্যবস্থা নিতে পারবেন বলে মন্তব্য করেছেন কয়েকজন আইনজীবী।

চট্টগ্রাম জজ কোর্টের আইনজীবী তপন দাশ বলেন, পণ্য কিনে প্রতারিত হলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণ চেয়েও দেওয়ানি আদালতে এবং প্রতারণার অভিযোগে ফৌজদারি আদালতে মামলা করতে পারবেন।

প্রতারিত হলে কিভাবে মামলা করবেন সে বিষয়েও ধারণা দিয়েছেন আরো কয়েকজন আইজীবীর। তারা গণমাধ্যমকে জানিয়েছে অনলাইনে প্রতারণার শিকার হলে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সাইট এবং কী ধরনের প্রতারণার শিকার হলেন তা সুনির্দিষ্টভাবে তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করতে হবে।

পরবর্তী সময়ে পণ্য কেনা বা হাতে পাওয়ার পর সেটার রশিদ বা ক্যাশমেমো দিয়ে জেলা জজ আদালতে অথবা মুখ্য বিচারিক হাকিমের আদালতে মামলা করতে পারবেন।

আদালত আপনার অভিযোগ যাচাই-বাচাই করবেন। এবং অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানকে নোটিশ দিবেন। যদি আদালতে আপনার অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হয় তাহলে আদালত অর্থদণ্ড বা কারাদণ্ড দিতে পারেন অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানকে।

এ ছাড়া অনলাইনে পণ্য ক্রয়ের তারিখ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে সুনির্দিষ্টভাবে ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরে অভিযোগ করা যাবে। অনলাইনে প্রতারিত হওয়ার পর ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরে অভিযোগ করাটা সবচেয়ে কার্যকর পদক্ষেপ।

সেক্ষেত্রে আপনি ভোক্তা অধিকারের কার্যালয়ে গিয়ে অথবা ওয়েবসাইটে দেওয়া মেইলের মাধ্যমে অভিযোগ করতে পারবেন। সেই অভিযোগের পরে ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তর অনলাইন প্রতিষ্ঠান ও অভিযোগকারীর কাছে পোস্টাল রশিদের মাধ্যমে চিঠি পাঠাবেন।

দুই পক্ষ থেকে শুনানি শেষে অধিদপ্তর ঘটনার সত্যতার প্রমাণ পেলে অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা প্রদানের আদেশ দেবে। এ ক্ষেত্রে জরিমানা হিসেবে যে টাকা আদায় করা হবে তার ২৫ শতাংশ টাকা ক্ষতিগ্রস্ত ভোক্তাকে দেওয়া হবে।

এদিকে অনলাইন প্রতারণায় করণীয় সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে সচেতন করার লক্ষ্যে পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন গণমাধ্যমে একটি বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়েছে।

এতে উল্লেখ করা হয়, ফেসবুকে অসংখ্য অনলাইন শপিং পেজ রয়েছে, যেগুলো নানা রকমের চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে লোকজনকে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করে থাকে।

এর মধ্যে কিছু পেজ পাওয়া যায় যেগুলো কখনো কখনো এক ধরনের প্রোডাক্ট দেখিয়ে অন্য ধরনের প্রোডাক্ট বা নিম্নমানের প্রোডাক্ট ডেলিভারি দিয়ে থাকে। আবার, কিছু কিছু পেজ পাওয়া যায় যেগুলো প্রোডাক্ট অর্ডারের জন্য অগ্রীম মূল্য পরিশোধ করার পরও কোনো প্রোডাক্টই ডেলিভারি দেয় না।

এক্ষেত্রে, আপনি যদি তাদের চ্যালেঞ্জ করেন তারা আপনার নম্বর বা অ্যাকাউন্ট ব্লক করে দেবে। এ ধরনের পেজগুলো সাধারণত চালু হওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই অসংখ্য মানুষের কাছ থেকে বিভিন্ন পরিমাণের টাকা হাতিয়ে নিয়ে অ্যাকাউন্টটি হঠাৎ করে ডিঅ্যাকটিভেট করে দেয়।

এক্ষেত্রে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের পরামর্শ : সুপরিচিত বা সুপ্রতিষ্ঠিত অনলাইন শপ ছাড়া অন্য কোন অনলাইন শপ থেকে কেনাকাটার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকুন। এক্ষেত্রে তাদের কাস্টমার রিভিউগুলো ভালভাবে পর্যবেক্ষণ করে নিতে পারেন। প্রতারণার শিকার হলে বিলম্ব না করে পুলিশকে অবগত করুন।

প্রতারণার শিকার হলে বিলম্ব না করে পুলিশকে অবগত করার জন্যও বলা হয় বিজ্ঞপ্তিতে।

চখ/রাজীব

এই বিভাগের আরও খবর