chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

শব্দদূষণে বিপর্যস্ত চট্টগ্রাম নগরী

২০ টি পয়েন্টে শব্দদূষণ বেশি

যান্ত্রিক এই শহুরে জীবনে শব্দ দূষণ যেন আতঙ্ক। যানবাহনে কারণে অকারণে বেজে চলা শব্দ যাপিত জীবনে তিলে তিলে প্রভাব ফেলছে ।দিনের পর দিন শব্দ দূষণের এ অত্যাচার মানুষের মধ্যে বাড়াচ্ছে মানসিক রোগ। তবুও ভ্রুক্ষেপ নেই কারো।

সামনে সিগন্যাল পড়লেও চট্টগ্রাম প্রায় সব মোড়েই দেখা মিলবে অকারণে তীব্রস্বরে হর্ন দেয়ার প্রবণতা। গবেষকরা বলছেন, ব্যবহারকারীদের অসচেতনতা ও কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় পুরো নগরীই পরিণত হয়েছে আস্ত এক শব্দ বোমায়!

জানা গেছে, নগরের বিভিন্ন স্থানকে নীরব, আবাসিক, মিশ্র, বাণিজ্যিক ও শিল্প এলাকা নামে ভাগ করে শব্দদূষণ পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে নীরব এলাকা হিসেবে ধরা হয় হাসপাতাল, স্কুল, কলেজ ও আবাসিক এলাকাকে। এসব এলাকায় শব্দের সহনীয় মাত্রা হচ্ছে দিনে ৫০ ডেসিবেল ও রাতে ৪০।

পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম কার্যালয়ের জরিপে দেখা গেছে, পরিবেশ আইনে ‘নীরব এলাকা’ ঘোষণা করা হাসপাতালের আশপাশেও নির্ধারিতের চেয়ে বেশি মাত্রার শব্দে দূষণ ঘটছে।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল গেটে শব্দদূষণের মাত্রা ছিল ৭৭ ডেসিবেল। একইভাবে আন্দরকিল্লা জেনারেল হাসপাতালের সামনে পাওয়া গেছে ৭৭ দশমিক ১ ডেসিবেল।চেরাগিপাহাড় সেন্টার পয়েন্ট হাসপাতালের সামনে ৭৭ দশমিক ১ ডেসিবেল, পাহাড়তলী চক্ষু হাসপাতালের সামনে ৭৭ ডেসিবেল, গোলপাহাড় রয়েল হাসপাতালের সামনে ৭৮ ডেসিবেল মাত্রা পাওয়া যায়।

শব্দদূষণের কথা স্বীকার করে চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিবেশ অধিদপ্তরের প্রধান রসায়নবিদ মো. জমির উদ্দিন  বলেন, ‘শব্দদূষণ ভয়াবহ আকারে বাড়ছে। এটা নিয়ন্ত্রণের জন্য আমরা পরীক্ষার পাশাপাশি বিভিন্ন যানবাহনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও নিচ্ছি।’

অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, আবাসিক এলাকায় শব্দের সহনীয় মান দিনের বেলায় ৫০ ডেসিবেল, মিশ্র এলাকায় (আবাসিক, শিল্প ও বাণিজ্য) ৬০ ডেসিবেল ও শিল্প এলাকায় ৭৫ ডেসিবেল নির্ধারণ করা হয়েছে।
কিন্তু পরিবেশ অধিদপ্তরের সর্বশেষ পরীক্ষায় দেখা গেছে, খুলশী আবাসিক এলাকার সিএনজি স্টেশনের সামনে ৮১ দশমিক ৫ ডেসিবেল, নাসিরাবাদ শিল্প এলাকায় ৮০ দশমিক ৩ ডেসিবেল, সিডিএ অ্যাভেনিউতে ৮১ দশমিক ২ ডেসিবেল, বাদামতলী মোড়ে ৮০ দশমিক ৫ ডেসিবেল, নগরের বহদ্দারহাটে ৮১ ডেসিবেল পাওয়া যায়।

শব্দদূষণের ক্ষতিকর দিক প্রসঙ্গে হৃদ্রোগ বিশেষজ্ঞ বিপ্লব ভট্টাচার্য জানান, উচ্চমাত্রার শব্দে দীর্ঘক্ষণ থাকলে শ্রবণশক্তি কমে যেতে পারে। এ ছাড়া অধিক শব্দ হৃৎস্পন্দন বাড়িয়ে দিতে পারে। এতে হৃদ্রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নাক, কান, গলা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মোস্তফা মাহফুজুল আনোয়ার  বলেন, “শব্দ দূষণের ফলে মানবদেহে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে।এমনকি সেটার প্রভাব পড়তে পারে মায়ের গর্ভে থাকা শিশুদেরও। অতিরিক্ত শব্দ দূষণের কারণে মানুষ অনেক সময় স্থায়ীভাবে শ্রবণ শক্তি হারিয়ে ফেলে। যেটা চিকিৎসা করেও আর ফিরিয়ে আনা যায় না।এছাড়া রক্তচাপ, অস্থিরতা, নিদ্রাহীনতা ও মানসিক দুশ্চিন্তার মতো রোগও শব্দ দূষণের কারণে হয়ে থাকে বলে জানান চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এ চিকিৎসক।

সরেজমিনে দেখা গেছে, নগরের বিভিন্ন হাসপাতাল ও স্কুল-কলেজের পাশে জোরে হর্ন বাজানো এবং মাইক বাজানো নিষেধ-সংবলিত সাইনবোর্ড টাঙানো আছে। কিন্তু তা কেউ মানছে না। এ ছাড়া নগরের বিভিন্ন স্থানে বহুতল ভবন নির্মাণের সময় নির্মাণযন্ত্রের শব্দ মাত্রা ছাড়িয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।

চট্টগ্রাম পরিবেশ অধিদপ্তরের গবেষণাগারের পরিচালক ইশরাত রেজা বলেন, “শব্দ দূষণ বাড়ছে। তবে এটা নিয়ন্ত্রণের জন্য সবাইকে সচেতন হতে হবে।

“যানবাহনে হাইড্রোলিক হর্নের ব্যবহার, নির্মাণ কাজে ব্যবহার করা যন্ত্রের কারণে শব্দ দূষণটা বেড়ে যাচ্ছে। এগুলোর শব্দ নিয়ন্ত্রণ করলে দূষণ অনেকটা কমে যাবে।”

শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণে পরিবেশ অধিদপ্তর কাজ করছে জানিয়ে তিনি বলেন, “সচেতনতার জন্য আমাদের বিভিন্ন কাজে বিভিন্ন স্তরের গাড়ি চালকদের সম্পৃক্ত করছি। এতে আমরা ইতিবাচক একটা ফলাফল আশা করছি।

তা ছাড়া পরিবেশ আইন অনুযায়ী যানবাহনে হাইড্রোলিক হর্ন লাগানো নিষেধ হলেও এখনো ট্রাক, বাসে এসব হর্নের ব্যবহার রয়ে গেছে। এই আইনের যথাযথ ব্যবহার নেই বলে অভিযোগ।

চখ/জুঈম

এই বিভাগের আরও খবর