chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

মনোবল হচ্ছে সফলতার একমাত্র টনিক!

সফলতার জন্য সব উপাদানই আছে-কিন্তু মনোবল নাই -আপনি কোনো অবস্থাতেই সফল হতে পারবেন না অন্যদিকে প্রবল আগ্রহ ও মনোবল থাকলে সফলতার অন্য কোনো উপাদান না থাকলেও প্রবল মনোবল অন্যসব উপদান জোগাড় করে সফলতা ছিনিয়ে আনবেই আনবে। আর তাই সফলতার জন্য মনোবলকে একমাত্র টনিক হিসেবে উল্লেখ করেছি।

আর এই মনোবল বৃদ্ধি, চাঙ্গা কিংবা অটুট রাখার অন্যতম প্রেরণার বাতিঘর হিসেবে স্টিফেন হকিংকে আমরা কল্পনা করতে পারি। তাঁর struggle এর গল্প পড়ে নিজেদেরকে অনুপ্রাণিত করতে পারি।

অন্যদিকে অভিজ্ঞতা মানুষের অন্যতম বড় অর্জন।

ভিন্ন কিছু করার চেষ্টা আমাকে-আপনাকে নিত্য নতুন অভিজ্ঞতার সাথে পরিচিত করে দেবে। চেষ্টা করলে হয়তো ২ টি বিষয় একই সাথে (সফলতা ও অভিজ্ঞতা) পাওয়া যাবে নতুবা একটি বিষয় (অভিজ্ঞতা) পাওয়া যাবে।

আকাঙ্খিত সফলতা কোনো কারণে অর্জন সম্ভব না হলেও অভিজ্ঞতা তো নিশ্চিত অর্জিত হয়ে যায়। অন্যদিকে যিনি চেষ্টা করেননি তাঁর ভাগ্যে অভিজ্ঞতাও তো ছুটলো না। আপনি-আমি সফল না হলেও চেষ্টার অভিজ্ঞতাকে অর্জনের খাতায় লিখে রাখতে পারি।
আর তাই কোনো কাজে সফল না হলেও অভিজ্ঞতা অর্জন হয়েছে – এটা চিন্তা করে সেই বিষয়ে অভিজ্ঞদের কাতারে আপনি ও আমিও রয়েছি-এটা ভেবে আত্মতুষ্টি অনুভব করা যায়। অভিজ্ঞতা অর্জন কিন্তু কম নয়। এক্ষেত্রে অনভিজ্ঞদের সাথে তুলনা করা হলে অভিজ্ঞতা অর্জনকারীরা অবশ্যই সেরা (শুধুমাত্র অভিজ্ঞতা অর্জনের কারণে)।
প্রত্যেকে ছোট থেকে এই পর্যন্ত আসার পথে যতো কিছু পাওয়ার জন্য চেষ্টা করেছেন-তার সবই কি পেয়েছেন? পাননি? কিছু পেয়েছেন – কিছু পাননি। চেষ্টা করেছেন বলেই সফলতার খাতায় কিছু যোগ হয়েছে। কিন্তু পাওয়ার জন্য যদি মোটেও চেষ্টা না করা হতো-তাহলে সফলতার খাতায় যা যোগ হয়েছে তা কি আদৌ যোগ হতো? অতএব আমি-আপনি সফল হই কিংবা না হই-আমাকে-আপনাকে সফলতার টার্গেট নিয়ে শতভাগ আন্তরিকতা উজাড় করে কাজ করে যেতে হবে।
কাজ করার সময় মনোবল সমসময় অটুট রাখতে হবে। তারজন্য বিভিন্ন চ্যালেন্জিং কাজ করে যারা সফল হয়েছেন-তাঁদের গল্প পড়তে হবে-যা আমাকে-আপনাকে অনুপ্রেরণা যোগাবে।

দুরারোগ্য অসুখে আক্রান্ত হওয়া স্টিফেন হকিং থেকেও আমরা অনুপ্রেরণা নিতে পারি।

১৯৬৩ সালে মাত্র ২১ বছর বয়সে হকিংয়ের দেহে ধীরগতিতে অগ্রসরমান একপ্রকার চেষ্টীয় স্নায়ুকোষ রোগের সূত্রপাত হয়, যে রোগের নাম পেশীক্ষয়কারী পার্শ্বিক কাঠিন্য রোগ (এমায়োট্রফিক ল্যাটারাল স্ক্লেরোসিস) বা লু গেরিগের রোগ। রোগটির কারণে হকিং পরবর্তী দশকগুলিতে ধীরে ধীরে ক্রমাগত উত্তরোত্তর পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়েন তবুও বহু বছর যাবৎ তিনি তার গবেষণা কার্যক্রম সাফল্যের সঙ্গে চালিয়ে যান। তাঁর শোচনীয় অবস্থা দেখে এবং সেবা শুশ্রূষা থেকে বাঁচতে তার স্ত্রী (তিন সন্তানের জননী) তাকে ছেড়ে চলে যান। দ্বিতীয় বিয়ে করেন-সেও তাকে ছেড়ে চলে যায়। এতো কিছুর পরও স্টিফেন হকিং মনোবল হারাননি।

দুরারোগ্য অসুখে আক্রান্ত হয়ে স্টিফেন হকিং দীর্ঘ বছর হুয়িল চেয়ারে- অন্যের সহযোগিতায় চলতে হতো। এক পর্যায়ে বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেন। তখন তিনি এক ধরনের ভাষা-উৎপাদনকারী যন্ত্রের সাহায্যে অন্যদের সাথে যোগাযোগ করতেন। প্রথমে হাতে রাখা একটি সুইচের মাধ্যমে এবং শেষ পর্যন্ত হাতও অবশ হয়ে গেলে গালের একটিমাত্র পেশীর সাহায্যে তিনি যন্ত্রটি পরিচালনা করতেন। মস্তিষ্ক ব্যতীত প্রায় পুরো শরীর অবশ হওয়ার পরও তিনি মনোবল হারাননি। প্রবল শারীরিক বাধা সত্ত্বেও তিনি তার গবেষণা ক্ষণিকের জন্যও বন্ধ রাখেননি। তাঁর লেকচার ভয়েজ সিনথেসাইজার দিয়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের শোনানো হতো। বলতে গেলে শিক্ষকতার কাজও তিনি ২০১৮ সাল পর্যন্ত আমৃত্যু করে গেছেন। কৌতূহল ও নতুনত্বের প্রতি আকর্ষণে তার পক্ষাঘাতগ্রস্থ শরীর বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। মৃত্যুর কিছুদিন পূর্বেও শূন্য অভিকর্ষের অভিজ্ঞতাও অর্জন করেছিলেন তিনি। ৫০ বছর যাবৎ অসুস্থতা সত্ত্বেও এসব শুধুমাত্র তার প্রচন্ড মনের জোরের কারণে হয়েছে। মনোবল প্রচন্ড শক্ত রেখেছিলেন তিনি। আর তাই বিংশ শতাব্দীর অন্যতম সেরা পদার্থবিজ্ঞানী হতে পেরেছিলেন তিনি।
প্রবলভাবে শারীরিক প্রতিবন্ধী হওয়া সত্ত্বেও স্টিফেন হকিং মনোবল সদা অটুট রেখে কোনো কাজ কিংবা উদ্যোগ নিতে যেখানে ভয় পেতেন না-সে জায়গায় আমি – আপনি শারীরিকভাবে সুস্থ হয়েও সাধ্যের মধ্যে কোনো কাজ করার চেষ্টা করতে ভয় পাওয়া আদৌ কি মানায়?
কেন মনেপ্রাণে নিজেদেরকে খাটো করে রাখবো? মেধা ও শারীরিক সুস্থতা থাকা সত্ত্বেও কেনো চিত্তহীন এর মতো নিজেকে উপস্থাপন করবো?
অতএব, মস্তিষ্ক ও শারীরিক সুস্থতা হেতু আমাকে আপনাকে অসম্ভব এর ক্যাট্যাগরিতে নেই সেরকম কাজ – যা আপনি ও দেশের কল্যাণে কাজে আসবে-তা শুরু করা উচিত।
Impossible is a word which is found in the fool’s dictionary. এটা স্মরণ করে মনোবল অটুট রেখে কায়মনোবাক্যে প্রবল ত্যাগ ও আন্তরিকতা নিয়ে এগিয়ে গেলে সফল আপনি হবেনই।

প্রত্যেকে তাঁর নিজ নিজ মনোবল অটুট রেখে যথাযথ পরিশ্রম ও কৌশল অবলম্বন করে কাঙ্ক্ষিত সফলতার ছোঁয়া পাক-এই কামনা করে ইতি টানছি।

লেখক : মুহাম্মদ আবদুর রহীম চৌধুরী, সহ-সভাপতি বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি চট্টগ্রাম মহানগর শাখা।

এই বিভাগের আরও খবর