প্রখ্যাত মরমী সাধক আবদুল জলিল সিকদার কালজয়ী মনীষী
চট্টগ্রামের ইতিহাসে মরমী সাধক, মরমী কবি ও পণ্ডিত ব্যক্তি হিসেবে সাতকানিয়া উপজেলার কৃতীপুরুষ, মহান অলিয়ে কামেল হযরত আবদুল জলিল সিকদার ( ১৮৫৭-১৯৩৪) একজন কালজয়ী মনীষী। ঐতিহাসিক ব্যক্তি কবি আবদুল জলিল সিকদার ১৮৫৭ সালে চট্টগ্রাম জেলার সাতকানিয়া থানার বাজালিয়া,মনেয়াবাদ গ্রামের এক মুসলমান পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।
তাঁরপিতা সিকদার রুস্তম আলী। আবদুল জলিল সিকদার উপমহাদেশে সুফিবাদ তরিকার বাতিঘর খ্যাত সাতকানিয়া মির্জাখীল দরবার শরীফের ২য় শাহ জাহাঁগীর হজরত মৌলানা শাহ সৈয়দ মোহাম্মদ আবদুল হাই ছাহেব ( রাহ:) এর শিষ্যত্ব গ্রহণ করে সুফিবাদ ও আধ্যাত্মিক সরাফত এ ডুব দিয়ে জ্ঞান অর্জন করে সফল হন। কবি জলিল সিকদার মহান পীরের হাতে হাত রেখে মারিফত ও সুফিতত্বের লিখনীতে রাজত্ব করেন। তাঁর লেখনি সম্পর্কে প্রখ্যাত লেখক ও ইতিহাসবেত্তা ড. মোহাম্মদ আমীন প্রসংশা করে মনীষীর জীবনী তুলে ধরেছেন। সোহেল ফখরুদ-দীন রচিত ও সম্পাদিত চট্টগ্রামের ইতিহাসে মনীষী গ্রন্থে কবি আবদুল জলিল সিকদার সম্পর্কে বিশাল জীবন ও কর্ম আলোচিত হয়েছে।
জলিল সিকদার লিখেছেন,
১) ” কি অবতার প্রেম প্রিয়সী দেখিলাম মির্জাখীলে আসি,
কেমন বৌবন বাহার,নিত্যপরে সু পুষ্পহারে।
হেলে ঢোলে কি চমৎকার , মজাই বিদেশী দেশী,
জাহাঁগীরি পাটে বসি,বঁধের সনে করে হাসি,
সে বঁধের মোহন বাঁশি,জলিল সাধে কি উদাসী “।
২) জয় জয় সদায় জাহাঁগীরের জয়
যত দুরে নিশান উড়ে চান সূর্য্যের কি গমন হয়।
সদায় জয় সদায় জয় আনন্দের নাই সীমানা,
স্বর্গ মর্ত্ত্য পাতালেতে সবে করে ভজনা,
দয়া কর দয়াময় জলিলে প্রানপন করয়।
৩) নবি সে চিন জীবনের উপায়
যেই জাতে গেলো প্রভু পায়…”।
আলোচিত এই জ্ঞান এর সাগর কবি জলিল সিকদার কে ঐতিহাসিক হযরত সিকান্দার শাহ সাহেব প্রণীত ছিরতে ফখরুল আরেফীন কিতাবে আলোচনা করে স্মরণীয় করে তুলেছেন।
কবি জলিল সিকদার ( রাহ:) নবীপ্রেমির উজ্জল বাতিঘর। তিনি তাঁর সহিদে এনাম গ্রন্থে কারবালার সঠিক ইতিহাস কবিতারুপে তুলে ধরেছেন।মির্জাখীল দরবারের অনুসারীগন এই কবিতাকে জারি গানের মতো করে পাঠ করেন। আমি নিজেও চন্দনাইশের সাতবাড়ীয়া নগরপাড়া, কাঞ্চননগরে এই জারি পাঠ করতে শুনেছি। রাতে সুন্দর মজলিসে বসে প্রবীব মুরুব্বি গন এই কবিতা রাত জেগে পড়েন।
বই পরিচিতি ঃ শহিদে এমাম।
লেখকঃ শাহ আবদুল জলিল সিকদার।
বইটির চতুর্থ সংস্করন বের হয় ১৩৯৬ হিজরীতে।
প্রকাশক ঃএম আর ইসলাম।
মুল্য দুই টাকা মাত্র।
——-
বইটি আমার পারিবারিক লাইব্রেরিতে সংরক্ষিত। আলোচিত বইয়ের লেখক প্রচারবিমুখ ছিলেন। বাজালিয়ার অধিবাসী এই লেখক মীর্জাখীল দরবার শরীফের মুরিদ ছিলেন। তাঁর রচিত আরো বই রয়েছে। প্রভুপরিচয় অন্যতম। তাঁর লিখিত সংগীত গুলোর প্রতিটি শব্দই মুল্যবান অর্থ যুক্ত। মীর্জাখীল দরবার শরীফের পীর ছাহেবদের জয়গান করা হয়েছে গ্রন্থে পাতায় পাতায়। এই মানবগুনী ব্যক্তি কবি জলিল সিকদারের পুরো জীবনকাল তুলে তুলেধরেছি ” সোহেল ফখরুদ-দীন রচিত চট্টগ্রামের ইতিহাসে মনীষী ” বইটিতে। এই বইটি সংগ্রহ করিলে কবি শাহ আবদুল জলিল সিকদার কে জানতে সহজ হবে। আসুন কবি সম্পর্কে জানি ও তাঁর মেধামননের আলোরজীবনের সঠিক সন্ধান দাতা মীর্জাখীল সম্পর্কে জানুন। মহান এই দরবেশ ও সুফিবাদী কবি ১৯৩৪ সালে আল্লাহর ডাকে সাড়া দেন। সাতকানিয়া, বাজালিয়া, মনেয়াবাদে পারিবারিক কবর স্থানে তাঁহার সমাধী আছে। আজ তাঁর পবিত্র ওরশ শরীফ।আমি বিনম্র শ্রদ্ধা স্মরণ করছি তাঁকে।মহান আল্লাহ তাঁকে জান্নাতুল ফেরদৌসের বাসিন্দা হিসেবে কবুল করুক। আমীম।
লেখক : সোহেল ফখরুদ-দীন, সভাপতি– বাংলাদেশ মুসলমান ইতিহাস সমিতি, চট্টগ্রাম ইতিহাস চর্চা কেন্দ্র।