chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

সংস্কার হচ্ছে কালুরঘাট সেতু, যান পারাপার ফেরীতে

সংস্কারকাজ শেষ হতে তিন মাসের বেশি সময় লাগতে পারে

দোহাজারী-কক্সবাজার রুটে ট্রেন চলাচল শুরুর আগেই  কালুরঘাট সেতুটি সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। বিকল্প হিসেবে যানবাহন পারাপারের জন্য তিনটি ফেরি প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

তবে সংস্কারকাজ শুরু হতে আরও কয়েকদিন সময় লাগতে পারে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।

রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী আবু জাফর মিঞা জানান, আগামী সপ্তাহে কালুরঘাট সেতু সংস্কারের কাজ শুরু হবে। তখনই সেতুতে যানচলাচল বন্ধ করে দেওয়া হবে।

সড়ক ও জনপথ বিভাগ শুক্রবার (২১ জুলাই) আনুষ্ঠানিকভাবে ফেরি সার্ভিস উদ্বোধন করেছে। ফেরি পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তবে শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ফেরি চলাচল শুরু হয়নি।

সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী পিন্টু চাকমা জানান, সংস্কারকাজ চলা অবস্থায় ফেরি সার্ভিস চালু থাকবে। ইতোমধ্যে তিনটি ফেরি প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ফেরিতে কোন ধরনের যানবাহন থেকে কত টাকা ভাড়া রাখা হবে, তা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। তবে ফেরি সার্ভিসের কবে চালু হবে, তা সেতুর সংস্কার কাজ শুরুর ওপর নির্ভর করছে।

সওজ জানিয়েছে, সবচেয়ে বেশি ৫৬৫ টাকা টোল দিতে হবে ট্রেইলার পারাপারেরজন্য। বড় ট্রাক ও কভার্ড ভ্যানে ৪৫০ টাকা, মাঝারি ট্রাকে ২২৫ টাকা, মিনি ট্রাকে ১৭০ টাকা।

বড় বাস পারাপারে ২০৫ টাকা; মিনি বাস ও কোস্টারে ১১৫ টাকা; মাইক্রোবাস, পিকাপ, জিপ ৯০ টাকা; কার ৫৫টাকা; ট্রাক্টর, পাওয়ার টিলার ১৩৫টাকা; তিন চাকার অটোরিকশা ২৫টাকা; মোটর সাইকেল ১০ টাকা এবং রিক্সা, ভ্যান, বাইসাইকেল ৫টাকা দিতে হবে।

রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, ৫৫ কোটি টাকা ব্যয়ে সেতুর সংস্কার প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে। ইতোমধ্যে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পরামর্শক দলের সুপারিশ অনুযায়ী সংস্কার করা হচ্ছে।

বর্তমানে সেতু দিয়ে চট্টগ্রাম-দোহাজারী রেললাইনে ১০ টন ভারী ইঞ্জিন চলাচল করে। সেতু পার হওয়ার সময় গতি থাকে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১০ কিলোমিটার। তবে কক্সবাজারগামী ইঞ্জিনের ওজন হবে ১২-১৫ টন এবং ট্রেনের গতি হবে ঘণ্টায় ৮০-১০০ কিলোমিটার। এ কারণে সংস্কার ছাড়া দোহাজারী-কক্সবাজার রেল যোগাযোগের সুফল পাওয়া যাবে না।

প্রকৌশলীরা জানান, এর আগে ২০০৪ সালের ১৩ আগস্ট ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে এই সেতুতে বড় ধরনের সংস্কারকাজ করা হয়েছিল। এরপর ২০১২ সালে আরেক দফা সংস্কার করা হয়েছিল। বর্তমানে সেতুর ওপর দিয়ে চট্টগ্রাম-দোহাজারী রেললাইনে ট্রেনের ১০ টন ভারী ইঞ্জিন চলাচল করে। এ সময় সর্বোচ্চ গতি থাকে ঘণ্টায় ১০ কিলোমিটার।

কিন্তু কক্সবাজারগামী ট্রেনের ইঞ্জিনের ওজন হবে ১২-১৫ টন। ট্রেনের সর্বোচ্চ গতি হবে ঘণ্টায় ৮০-১০০ কিলোমিটার। কালুরঘাট সেতুর বর্তমান অবস্থার কারণে এই গতিতে ট্রেন চালানো সম্ভব হবে না। ঘণ্টায় অন্তত ৪০-৫০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চালানোর পরিকল্পনা আছে। এ কারণে বুয়েটের পরামর্শক দলের পরামর্শ অনুযায়ী সেতু সংস্কার করা হচ্ছে।

পূর্বাঞ্চলের প্রধান ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা সুজন চৌধুরী জানান, কালুরঘাট সেতুটির সংস্কারকাজ শেষ করতে ছয় মাস সময় লাগতে পারে বলে রেলওয়েকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তবে আরও আগে কাজ শেষ করার তাগাদা দেওয়া হয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে। সে অনুযায়ী কাজ করা হবে বলে আশ্বাস দেন তিনি।

এদিকে, আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে সংশ্লিষ্টরা দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন নির্মাণের কাজ শেষ করে উদ্বোধনের পরিকল্পনা করছেন। সেই অনুযায়ী প্রকল্পের কাজ এগোচ্ছে।

দোহাজারী-রামু-কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পের পরিচালক মফিজুর রহমান জানান, আমরা সেপ্টেম্বরের মধ্যে দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইনের চলমান কাজ শেষ করে ট্রেন চলাচল শুরুর চিন্তা করছি। তিনি বলেন, “১০০ কিলোমিটার রেললাইনের মধ্যে ৮২ কিলোমিটার রেললাইন বসানোর কাজ শেষ। প্রকল্পের অগ্রগতি ৮৬%। রেললাইনের ওপর থাকা ছোট-বড় ব্রিজ-কালভার্টের কাজও শেষ হয়েছে। এখন মেরামত কাজ চলছে।”

২০১১ সালের ৩ এপ্রিল দোহাজারী-রামু-কক্সবাজার ও রামু-ঘুমধুম পর্যন্ত মিটারগেজ রেলপথ নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মধ্যে চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে রামু পর্যন্ত ৮৮ কিলোমিটার এবং রামু থেকে কক্সবাজার ১২ কিলোমিটার।

প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের প্রায় সাত বছর পর ২০১৮ সালে ডুয়েল গেজ এবং সিঙ্গেল ট্র্যাক রেললাইন প্রকল্পের নির্মাণকাজ শুরু হয়। দোহাজারী থেকে কক্সবাজার রামু পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণে প্রথমে ব্যয় ধরা হয় এক হাজার ৮৫২ কোটি টাকা। ২০১৬ সালে প্রকল্প প্রস্তাব সংশোধন করে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। এতে অর্থায়ন করেছে এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ও বাংলাদেশ সরকার।

রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, ১৯৩১ সালে কর্ণফুলী নদীর ওপর কালুরঘাট সেতু নির্মাণ করে ব্রুনিক অ্যান্ড কোম্পানি নামের সেতু নির্মাণকারী একটি প্রতিষ্ঠান। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর মিয়ানমারের সঙ্গে সরাসরি রেল যোগাযোগের জন্য এই সেতু নির্মাণ করা হয়েছিল। যদিও পরে দোহাজারী পর্যন্ত গিয়ে শেষ হয় এই রেললাইন।

৬৩৮ মিটার দীর্ঘ কালুরঘাট সেতুটি ২০০১ সালে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছিল। বাংলাদেশ রেলওয়ে ২০০৪ ও ২০১২ সালে দুই দফায় সেতুটি সংস্কার করেছিল। কিন্তু এরপরও সেতুটির অবস্থা জরাজীর্ণ। এ অবস্থায় সেতুটির ওপর দিয়ে ট্রেনের পাশাপাশি দক্ষিণ চট্টগ্রামের বোয়ালখালী ও পটিয়াগামী গাড়িও চলাচল করে। ট্রেন চলাচল করলে গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকে। একমুখী যান চলাচলের কারণে সব সময় যানজট লেগে থাকে। যাত্রী ও চালকদের প্রচণ্ড ভোগান্তি পোহাতে হয়।

চখ/এআর

এই বিভাগের আরও খবর