পদ্মায় সেতু হলো, কালুরঘাটে কবে?
ডেস্ক নিউজ: একটি ঐতিহাসিক মুহূর্তের সামনে দাঁড়িয়ে পুরো জাতি। পাহাড় সমান ষড়যন্ত্র আর সীমাহীন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে স্বপ্নের পদ্মা সেতুর দ্বার খুলছে আজ। প্রমত্তা পদ্মার বুকে দেশের সবচেয়ে বড় সেতু নির্মাণের যে সাহস আর দৃঢ়তা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেখিয়েছেন- তার জন্য টুপিখোলা অভিবাদন।
পদ্মা সেতুর স্বপ্ন পূরণের পর এখন অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির নতুন স্বপ্নে বিভোর দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ। ব্যবসা, পর্যটন, অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ একটি সেতুকে ঘিরে পদ্মার দুই পাড়ে যখন নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলছে- তখন একটি সেতুর জন্যই আরেক নদী কর্ণফুলীর দুই পাড়ে চলছে হাহাকার।
দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির দ্বার চট্টগ্রাম বন্দরের ‘লাইফ লাইন’ হিসেবে পরিচিত কর্ণফুলী নদীর কালুরঘাট এলাকায় একটি নতুন রেল-কাম সড়ক সেতু নির্মাণের দাবি অন্তত ৩ যুগের। মাঝখানে একাধিকবার ক্ষমতার পালাবদল হলেও নতুন কালুরঘাট সেতু আলোর মুখ দেখেনি। প্রতিটি সরকার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি দিয়েই তাদের দায়িত্ব শেষ করেছে। কালুরঘাটে রেল-কাম সড়ক সেতু নির্মাণে দীর্ঘসময় উদ্যোগ নেয়নি রেলওয়ে কর্তৃপক্ষও।
কালুরঘাটে নতুন সেতু নির্মাণে আশার আলো না দেখে রাজপথে আন্দোলনে নামেন চট্টগ্রামের নানা শ্রেণি ও পেশার মানুষ। স্থানীয় সংসদ সদস্য প্রয়াত মঈন উদ্দীন খান বাদলও সেতুর দাবিতে সোচ্চার হন। সংসদে দাঁড়িয়ে এই সেতুর জন্য আক্ষেপ করে যে আবেদনময়ী বক্তব্য তিনি রেখেছিলেন, তা মানুষের মনে আজও গেঁথে আছে। কালুরঘাট সেতু নির্মাণে বর্তমান সংসদ সদস্য মোছলেম উদ্দিন আহমদও দীর্ঘদিন প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন।
এছাড়া জসিম উদ্দিন চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন বৃহত্তর চট্টগ্রাম উন্নয়ন সংগ্রাম কমিটিসহ বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠন দীর্ঘদিন ধরে কালুরঘাট সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়ে সভা-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছে। এরমধ্যে ২০১৭ সালে কালুরঘাটে সেতু নির্মাণে প্রকল্প হাতে নেয় রেলওয়ে। নদীর নাব্যতা থেকে ৭.৬ মিটার উচ্চতায় এই সেতু নির্মাণে ২০১৮ সালে প্রস্তাবিত ব্যয় ধরা হয় ১ হাজার ১৫১ কোটি ৮৮ লাখ টাকা।
তবে সেতুর উচ্চতা নিয়ে বিআইডব্লিউটিএ’র আপত্তিতে ঝুলে যায় প্রকল্পটি। নকশায় ত্রুটি আছে উল্লেখ করে একনেক থেকে সেতুর উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) ফিরিয়ে দেওয়া হয়। এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে ১২.২ মিটার উচ্চতায় কালুরঘাটে রেল-কাম সড়ক সেতু নির্মাণে ফের উদ্যোগ নেয় রেলওয়ে। অবশ্য এরজন্য এখনও সম্ভাব্যতা যাচাই এবং টাকার অঙ্ক নির্ধারণই শেষ করতে পারেনি রেলওয়ের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান।
কালুরঘাটে নতুন সেতুর যৌক্তিকতা তুলে ধরে সংশ্লিষ্টরা বলছেন- ১৯৩০ সালে নির্মিত পুরাতন কালুরঘাট সেতু দিয়ে দিনে অন্তত ৫০ হাজার মানুষ যাতায়াত করেন। ২০০১ সালে সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে ঘোষণার পর থেকে জোড়াতালি দিয়েই সচল রাখা হয়েছে। সেতুর একপাশে গাড়ি উঠলে, অন্যপাশ বন্ধ রাখা হয়। ফলে দীর্ঘ যানজটের ভোগান্তির পাশাপাশি গাড়ি চলে ঝুঁকি নিয়েই। প্রায় প্রতিদিনই দুর্ঘটনায় হতাহত হন কেউ না কেউ।
এছাড়া পুরাতন কালুরঘাট সেতুতে ট্রেন চলতে পারে মাত্র ১০ কিলোমিটার গতিতে। ফলে প্রায় ১৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন ধরে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারে দ্রুতগতির ট্রেন চলাচলে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। পুরাতন সেতুটিতে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটলে হুমকিতে পড়বে সরকারের একাধিক প্রকল্পের মাধ্যমে ‘বদলে যাওয়া’ দক্ষিণ চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবানের সঙ্গে দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থাও।
আমরা মনে করি, কালুরঘাট সেতু নির্মাণের দাবির স্বপক্ষে বাস্তবতা আছে বলেই রেল কর্তৃপক্ষ সমীক্ষায় হাত দিয়েছে। তাই এ সেতু নির্মাণে আর এক মুহূর্তও সময়ক্ষেপণ করা উচিত নয়। আর্থিক সঙ্গতি যে এক্ষেত্রে বাধা হতে পারে না, নিজেদের টাকায় পদ্মা সেতু নির্মাণ করে তা প্রধানমন্ত্রী প্রমাণ করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রামের উন্নয়নে ১ লাখ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৫টি মেগা প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছেন। চট্টগ্রামের উন্নয়নের দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন। আমরা আশা করবো- প্রধানমন্ত্রী দ্রুত কালুরঘাট সেতু প্রকল্পের অনুমোদন দিয়ে সেই দায়িত্ব পালন করে যাবেন। চট্টগ্রামের মানুষের ৩ যুগের স্বপ্নপূরণ করবেন। সূত্র: পূর্বকোণ।