chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

ডিজিটাল গরুর হাটে কমবে আর্থিক অপরাধ: মেয়র

নগরের সবচেয়ে বড় পশুর হাট সাগরিকা ও নূর নগর বাজারে ‘ডিজিটাল হাট’সেবার চালু হওয়ায় বিভিন্ন অপরাধচক্রের কার্যক্রম বন্ধের পাশাপাশি বেচা-কেনা নিরাপদ ও ঝামেলাহীন হয়ে উঠবে বলে জানালেন সিটি করপোরেশনের মেয়র মো.রেজাউল করিম চৌধুরী

মঙ্গলবার (২০ জুন) নগরের সেনা কল্যাণ কনভেনশন সেন্টারে ‘ডিজিটাল হাট’এর উদ্বোধনের সময় মেয়র এসব কথা বলেন।

চসিক মেয়র বলেন, অনেকেই দূর দূরান্ত থেকে কোরবানির পশু নিয়ে হাটে আসেন। এই কোরবানির বাজারকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন অপরাধচক্র জালনোট সরবরাহ, পশুর ট্রাকে ডাকাতি, ক্রেতাদের টাকা ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধ কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। ডিজিটাল হাটে সব ধরনের আর্থিক সেবা ডিজিটালি হবে বিধায় এই অপরাধচক্রের কার্যক্রম কমে আসবে। এবারে দুটি হাটের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে পরবর্তীতে সবগুলো কোরবানির হাটে ক্যাশলেস লেনদেনের সুবিধা সৃষ্টি করা হবে। প্রধানমন্ত্রী যে ক্যাশলেস বাংলাদেশ গড়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন তার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে চট্টগ্রামকে স্মার্ট নগরীতে পরিণত করার কাজ চলছে। এধরনের ডিজিটিাল সেবার উদ্যোগ চট্টগ্রামের বিপুল অর্থনৈতিক সম্ভাবনার সুফল ঘরে তুলতে সহায়তা করবে পাশাপাশি অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তির হারও বৃদ্ধি করবে।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক এ বি এম জহুরুল হুদা বলেন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশকে স্মার্ট রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্য আমাদের পেমেন্ট সিস্টেমকে স্মার্ট করতে হবে। দেশের আর্থিক কার্যক্রমকে ডিজিটাল করার মাধ্যমে আমরা ‘ক্যাশলেস বাংলাদেশ’গড়তে লড়ছি। বাংলাদেশ ব্যাংক দেশব্যাপী বিস্তৃত স্থায়ী ও সাপ্তাহিক পশুর হাটের লেনদেন ক্যাশলেস করার জন্য কাজ করে যাচ্ছে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মাস্টারকার্ড বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামালের সঞ্চালনায় উপস্থিত ছিলেন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক ড. আশরাফুল আলম খান, বাংলাদেশ ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেম ডিপার্টমেন্টের পরিচালক মোতাসেম বিল্লাহ, অতিরিক্ত পরিচালক শাহ জিয়াউল হক, জুলিয়া চৌধুরী, যুগ্ম পরিচালক রেজাউল করিম, সরকার মো. আমির খসরু, সালাহউদ্দিন মাহমুদ, উপ-পরিচালক হাসনাত আহসান, চসিকের অ্যাস্টেট অফিসার রেজাউল করিম, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের ইভিপি আবদুল নাসের, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের সিনিয়র নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. আমানুল্লাহসহ বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য,কোরবানির বাজারকে কেন্দ্র করে ৭০ হাজার কোটি টাকার নগদ অর্থ লেনদেন হয়। নগদ লেনদেনের ঝুঁকি নিরসনে এবং সরকারের স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ২০২২ সালে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন প্রথমবারের মতো ৬টি বুথ বসায় ডিজিটাল লেনদেনের জন্য। সেবার মাত্র ৪ দিনে ৩৩ কোটি টাকা ডিজিটালি লেনদেন হয়। এ অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে এবার ঢাকা উত্তর, দক্ষিণ ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে কোরবানির বাজারে এ সেবা আরও প্রসারিত করতে উদ্যোগ নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

এবছর প্রাথমিকভাবে সাগরিকা এবং নুর নগর হাউজিং গরুর হাটে ডিজিটাল লেনদেন বুথ চালু করছে চসিক। এ দুটি বুথে এটিএম মেশিন, মোবাইলে আর্থিক লেনদেন সেবা, ডিজিটাল ব্যাংকিং ইত্যাদির সুবিধা উপভোগ করবেন কোরবানির বাজারের ক্রেতা-বিক্রেতারা। চলতি বছরে বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘ক্যাশলেস বাংলাদেশ’ উদ্যোগের আওতাধীন এই কার্যক্রমটিতে ২৬টি জেলার পশু বিক্রেতারা ব্যক্তিক রিটেইল হিসাব খোলার বিষয়ে সচেতন করা হচ্ছে। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ডেইরি ফারমার্স অ্যাসোসিয়েশনের সার্বিক সহায়তায় তৃণমূল পর্যায়ে পশু বিক্রেতারা আর্থিক পরিসেবার আওতায় আনতে এবং সাধারণ ক্রেতাদের সর্বপর্যায়ে ডিজিটাল লেনদেনের সুযোগ সৃষ্টিতে বাংলাদেশ ব্যাংক কুরবানির পশু হাটে ডিজিটাল পদ্ধতিতে লেনদেন বিশেষত বাংলা কিউআর কোডের মাধ্যমে লেনদেন প্রসারের এই কার্যক্রম গ্রহণ করেছে।

দেশের মোট ১০টি ব্যাংক যেগুলো হলো-এবি ব্যাংক লিমিটেড, ব্যাংক এশিয়া লিমিটেড, ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেড, ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড, আইএফআইসি ব্যাংক পিএলসি, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড, মিচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেড, পূবালী ব্যাংক লিমিটেড, দ্য সিটি ব্যাংক লিমিটেড এবং ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক পিএলসি ও তিনটি আন্তর্জাতিক পেমেন্ট স্কিম যথা-এমেক্স, মাস্টারকার্ড ও ভিসা এবং চারটি এমএফএস প্রোভাইডার বিকাশ, নগদ, উপায় ও এমক্যাশ সচেতনমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

কার্যক্রমে অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ ঢাকা উত্তর এর আটটি এবং চট্টগ্রামের দুইটি হাটে ডিজিটাল বুথ স্থাপন করে অর্থ তাৎক্ষণিকভাবে ক্রেতার হিসাব হতে বিক্রেতার হিসেবে পৌঁছে দিবে এবং লেনদেনে নগদ অর্থের ব্যবহার হ্রাস করতে কাজ করবে। এতে করে নগদ অর্থ লেনদেনের ঝুঁকি হ্রাস পাওয়ার পাশাপাশি লেনদেনকারীদের ডিজিটাল ফুটপ্রিন্ট বা রেকর্ড সৃষ্টি হবে। সৃষ্ট রেকর্ড পশু বিক্রেতারা ভবিষ্যতে সহজ শর্তে ঋণপ্রাপ্তিসহ বিভিন্ন সেবা ও সহায়তা গ্রহণের জন্য সহায়তা করবে।

আরকে/

এই বিভাগের আরও খবর