chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

রেলের সংস্কার ও সম্প্রসারণের প্রস্তাব পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরামের

অবিভক্ত ভারতে একটা সময়ে হাটহাজারী উপজেলা থেকে শহরে যাতায়াতের জন্য ব্যবহার হয়ে আসছিল স্বস্তিদায়ক ট্রেন যাত্রা। যাতায়াতের পাশাপাশি এসব ট্রেনে বিভিন্ন গন্তব্যে পৌঁছে যেতো পণ্য। বিশেষ করে হাটহাজারী, সীতাকু-, পটিয়া, নাজিরহাট এলাকার রুটের যাত্রীরা এর সুযোগ পেয়ে আসছিল।

সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে যোগাযাগ ব্যবস্থায় আধুনিকতার রঙ লাগলেও, অবহেলায় পড়ে থাকে রেলখাত। ফলে পরিবহনের জন্য মানুষকে নির্ভর করতে হয় গণপরিবহনের ওপর।

১৯৫০ সালেও এখানকার ৩৩ শতাংশ মানুষ যাতায়াতের জন্য ট্রেন ব্যবহার করলেও, ২০২১ সালে এই হার ছিল কমে দাঁড়ায় শূন্য দশমিক চার এক শতাংশ।

পরিবহন বিশেজ্ঞদের মতে, যানজট নিরসনসহ উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার দ্বার হিসেবে রেলপত্রকে বেছে নেওয়া হয়। অথচ এই খাতে তেমন উন্নয়নের ছোয়া লাগেনি।

এমন বাস্তবতায় নগরের যানজট নিরসন, বিকল্প পরিবহন সুবিধা বাড়ানো এবং রেলপত্র নির্ভর গণপরিবহন ব্যবস্থা নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছেন পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফেরাম নামে একটি সংগঠন।

 

শনিবার (১৭ জুন) দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে ‘বন্দর নগরী সচল রাখতে পরিবহন খাতে সুচিন্তিত বিনিয়োগ-রেল ব্যবস্থার অন্তর্ভুক্তিকরণ’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে অংশ নিয়ে বক্তারা এসব দাবি উত্থাপন করেন।

 

এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের প্রাক্তন প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ শাহিনুল ইসলাম খান। তিনি রেললাইন সংস্কার, নতুন রুট ও স্টেপেজ বাড়ানো এবং চট্টগ্রাম-দোহাজারী রুটের রেলপত্র সাতকানিয়া পর্যন্ত সম্প্রসারণের প্রস্তাব করেন।

এসময় ১৯৫০ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত রেল কমিউটার সার্ভিসের তুলণামূলক বিশ্লেষণ তুলে ধরা হয়।
বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, ১৯৫০ সালে চট্টগ্রামের জনসংখ্যা ছিল দুই লাখ ৮৯ হাজার। সেই সময় শহর থেকে তিন রুটে চলাচল করতো ছয় থেকে আট জোড়া ট্রেন। এই হিসেবে প্রতি রুটে গড়ে ১৪ বার ট্রেন চলাচল করতো। তিন রুট চট্টগ্রাম-নাজিরহাট, চট্টগ্রাম-দোহাজারী, চট্টগ্রাম সীতাকু- মোট ট্রিপ ছিল ৪২ টি। প্রতি ট্রিপে ৩৫০ জন যাত্রী চলাচল করতো। বগির সংখ্যা ছিল পাঁচ থেকে ছয়টি। প্রতি বগিতে ৬০ জন যাত্রী যাতায়াতের সুযোগ ছিল। সেই হিসেবে ১৪ হাজার ৭০০ যাত্রী চলাচলের সুযোগ পেতো। মোট যাত্রীর মধ্যে পরিবার প্রতি অন্তত দুই জন নিয়মিত ভ্রমণ করে ধরে নিলে মোট পরিবার দাঁড়ায় সাত হাজার ৩৫০ জন। ব্যবহার করা ওই সব এলাকার জনসংখ্যা দাঁড়ায় ৪৪ হাজার ১০০ জন। এই সংখ্যা মোট জনসংখ্যার ৩৩ শতাংশ।

 

অপরদিকে ২০২১ সালে চট্টগ্রামের জনসংখ্যা ছিল ৫৩ লাখ ৭৯ হাজার ৬৬০ জন। শহর থেকে এখন দুই রুটে চলাচল করে পাঁচ জোড়া ট্রেন। এই হিসেবে চট্টগ্রাম-নাজিরহাট, চট্টগ্রাম-দোহাজারী দুই রুটে মোট ট্রিপ ১০টি। প্রতি ট্রিপে গড়ে ৩৫০ জন যাত্রী চলাচল করতো। এসব ট্রেনে বগির সংখ্যা পাঁচ থেকে ছয়টি। প্রতি বগিতে ৬০ জন মানুষ যাতায়াত করেছে। ২০২১ সালের আদশশুমারী অনুযায়ী সাতটি পৌরসভার মোট জনসংখ্যা ২৪ লাখ ৭৬ হাজার ৭৬২ জন। এই সংখ্যা ওই পৌরসভার মোট জনসংখ্যার শূন্য দশমিক ১৪ শতাংশ।

 

সংবাদ সম্মেলনে প্রকৌশলী সুভাষ বড়ুয়া বলেন, নগরের যানজট সমস্যা দূর প্রধান প্রধান সড়কে ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হলেও তেমন কার্যকর হয়নি। মেট্টারেল নির্মাণের জন্য সম্ভাব্যতা যাচাই করা হচ্ছে। অথচ গণপরিবহনের একটি সহজ ও সাশ্রয়ী বিকল্প হিসেবে রেলপত্র নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। ফলে মানুষ শহরমুখী হচ্ছে। অতিরিক্ত মানুষের আবাসনের চাহিদা পূরণ করতে গিয়ে শহরের পুকুর জলাশয় ভরাট করা হচ্ছে। ফলে প্রকৃতির ওপর বিরুপ প্রভাব পড়ছে। এক্ষেত্রে শহরে ওপর চাপ কমাতে রেলপত্র আধুনিকায়ন করা হলে মানুষ কাজ শেষ বাড়ি ফিরে যাবে। বিদ্যমান অবস্থায় বিভিন্ন রুটে রেলপত্র চলাচলের জন্য বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। এসব সংস্কার করত হবে। এক্ষেত্রে তিন থেকে পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে স্টেপেজ বসালে মানুষ সুফল পাবে।

এসময় সংবাদ সম্মেলনে, বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সমর্থন নিয়ে চট্টগ্রাম-পতেঙ্গা রুটে ট্রেন চলাচল সম্প্রসারণ করে নগরের বারিং বিল্ডিং, বন্দর ও কাটগড়কে যুক্ত করার জন্য বলা হয়েছে। এসব ট্রেনে মধ্যপ্রাচ্যগামী, মধ্যপ্রাচ্যগামী ফেরত বিমানযাত্রী ও তাদের আত্মীয়স্বজনকে বিবেচনায় রাখা প্রস্তাব করা হয়েছে। এক্ষেত্রে সকালে তিন বার ও বিকেলে তিন বারসহ ছয় বার ট্রেন চলাচলের ব্যবস্থার রাখতে বলা হয়েছে। এছাড়া ভবিষ্যতে আউটার রিংরোডের সমান্তরাল আন্দবাজার হয়ে ফৌজদারহাট পর্যন্ত সম্প্রসারণের বিষয়ে পরামর্শ দেন।

 

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও সংগঠনের সভাপতি অধ্যাপক মুহাম্মদ সিকান্দার খান সংবাদ সম্মলেনে সভাপতিত্ব করেন। এছাড়া বক্তব্য রাখেন স্থপতি প্রফেসর জেরিনা হোসেইন, প্রফেসর শফিক হায়দার চৌধুরী।

আরকে/

এই বিভাগের আরও খবর