চট্টগ্রামে লবণাক্ত পানিতে বাড়ছে ডায়রিয়ার প্রকোপ
তীব্র গরম ও অনাবৃষ্টির কারণে চট্টগ্রামের পুকুর, নদী জলাশয়ের সঙ্গে গভীর ও অগভীর নলকূপে বেড়ে যায় লবণের পরিমাণ। অনেকটা নিরুপায় হয়ে এসব পানি খেতে হয়েছে মানুষকে। ফলে অনেকে পানিবাহিত ডায়রিয়া রোগে ভুগতে শুরু করেন। এর সঙ্গে গরমে স্বস্তি খুঁজতে হাট-বাজারে অপরিচ্ছন্ন ও উন্মুক্ত পরিবেশে বিভিন্ন ফলের রস ও শরবত চুমুক দিয়ে শীতল হওয়ার চেষ্টায় অনেকেই ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে পড়েছেন।
এরকম বেশ কয়েকটি কারণ তুলে ধরে প্রকোপ কমিয়ে আনতে স্বাস্থ্য শিক্ষা কার্যক্রমের আওতায় স্বাস্থ্য বিধি অনুসরণ ও বিশুদ্ধ পানির উৎস বাড়াতে সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও প্রশাসনকে একযোগে কাজ করার বিষয়ে সুপারিশ এসেছে।
স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, গেল দু মাসে চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলায় আশঙ্কাজনক হারে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে যায়। এর কারণ খুঁজতে গিয়ে স্বাস্থ্য বিভাগের এক পর্যালোচনার প্রতিবেদেনে এমন তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে ডায়রিয়ার প্রকোপ, পর্যবেক্ষণ, ব্যবস্থাপনা ও সুপারিশ তুলা ধরা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এপ্রিল ও মে মাসে চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলায় সাত হাজার ৮২৮ জন ডায়রিয়া রোগী ধরা পড়ে। এপ্রিলের এক তারিখ থেকে ১৪ এপ্রিল বিভিন্ন উপজেলায় ১ হাজার ৮৭০ জন রোগী পাওয়া যায়। এ সময়ে আনোয়ারা উপজেলায় সর্বোচ্চ রোগী চিল ৩২১ জন রোগী। অপরদিকে ১৫ এপ্রিল থেকে ৩০ এপ্রিলের মধ্যে এই সংখ্যা গিয়ে দাঁড়ায় তিন হাজার ৮৫২ জন। এসময়ে বোয়ালখালী উপজেলা ৫৯০ জন রোগী পাওয়া য্য়া। অপরদিকে মে মাসের এক তারিখ আট তারিখ পর্যন্ত এই রোগীর ছিল দুই হাজার ১০৬ জন রোগী ধরা পড়ে। এসময়ে বোয়ালখালীতে রোগী সংখ্যা ছিল ৩০৬ জন। পর্যবেক্ষণে দেখা যায় ১৪ এপ্রিলের পর থেকে সর্বোচ্চ সংখ্যা রোগী ধরা পড়ে।
এরপর চট্টগ্রাম জেলা সিভিল কার্যালয়ের কার্যালয় থেকে ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ার কারণ খতিয়ে দেখা হয়। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হওয়া রোগী, রোগীর আত্মীয়স্বজন ও প্রত্যক্ষ অঞ্চলের সাধারণ মানুষ এবং হাট বাজারের আসা মানুষের সঙ্গে কথা বলেন কর্মকর্তারা। এরপর পাঁচটি কারণে উঠে আসে।
তারা জানান, তীব্্র গরমে ও বৃষ্টি কমে আসায় বিশুদ্ধ পানির উৎস নলকূপ বিকল হয়ে পড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে খাবার পানি, গোসল, কাপড় ধোয়া ও দৈনন্দিন কাজের জন্য জলাশয়, পুকুরের ওপর নির্ভর করতে হয় মানুষকে। এই পানির পান করার কারণ অনেকে ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত হয়। এছাড়া কর্ণফুলী নদীর শাখা-প্রশাখা তীরবর্তী এলাকাগুলোতে জোয়ারের মাধ্যমে পুকুর ও খালের পানিতে লবণের মাত্রা বেড় যায়। এই লবণাক্ত পানির খাওয়ার জন্য অনেকে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হন।
এছাড়া গরমের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় পচনশীল খাবার স¦াভাবিক সময়ের আগে নষ্ট হয়ে যায়। এসব খাবার খেয়ে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। এছাড়া হাট বাজারে অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ শরবত খাওয়া এবং খাবার আগে বা পরে হাত না ধোয়ায় পানিবাহিত রোগীর সংখ্যা বেড়ে যায়।
এক্ষেত্রে স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা দেখতে পান সুনির্দিষ্ট কোনো এলাকায় নয় সব জায়গায় প্রকোপের মাত্রা কম বেশি। তবে হাসপাতালের আশেপাশের রোগীরা চিকিৎসকদের সেবা নিচ্ছেন। এক্ষেত্রে মারাত্মক ডিহাইড্রেশন (শরীরে পানি শূন্যতা) ও শিশু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা কম।
এসব রোগীদের চিকিৎসার ক্ষেত্রে হাসপাতালে আসা রোগীদের ওআরটি কর্নারে গাইডলাইন অনুসরণ করে পানিশূন্যতা ও ডিহাইড্রেশনের তীব্রতা অনুযায়ী খাবার স্যালাইন বা আইডি দিয়ে স্যালাইনের পরামর্শ দিয়েছেন। রোগীর সঙ্গে আসা স্বজনদের সঠিকভাবে খাবার স্যালাইন তৈরি ও ব্যবহারের নিয়মের শিখিয়ে দেওয়ার গুরুত্বে কথা জানান। সর্বশেষ বিশুদ্ধ পানির বিকল্প উৎসের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তপক্ষের সঙ্গে এক যোগে কাজ করার বিষয়টি তুলে ধরেন।
আরকে/