তীব্র তাপদাহের মাঝে অসহনীয় লোডশেডিংয়ের মুখে জাতীয় গ্রিড থেকে চট্টগ্রামে বিদ্যুৎ সরবরাহ বাড়ানোর দাবি জানিয়েছে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। মঙ্গলবার (১৯ এপ্রিল) ক্যাবের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ দাবি জানানো হয়।
বিবৃতিতে নেতরা বলেন, প্রচণ্ড গরমে স্বাভাবিক জনজীবন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। সেখানে বিদ্যুতের লোডশেডিং মানুষের দুর্ভোগের মাত্রাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। চট্টগ্রাম জেলায় বেশ কিছুদিন ধরে লোডশেডিংয়ের কারণে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। বিভিন্ন স্থানে প্রতিদিন ৭ থেকে ৮ বার বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করে। গরমের সাথে পাল্লা দিয়ে লোডশেডিং বাড়ছে। বাড়ছে বিদ্যুৎ নিয়ে মানুষের কষ্ট সীমাও।
বিদ্যুৎ বিভাগ সুত্রে জানা যায়, চট্টগ্রামে ছোট-বড় ২৪টি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মধ্যে ১৩টি কেন্দ্র বন্ধ রয়েছে। এর মাঝে কাপ্তাই লেকের পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় পানির অভাবে ৪টি ইউনিট বন্ধ রয়েছে।
নেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, চট্টগ্রামে চালু রয়েছে ১১টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র। এসব কেন্দ্রের উৎপাদন ক্ষমতা ১২৫৮ মেগাওয়াট। কিন্তু এসব কেন্দ্র থেকে উৎপাদন হচ্ছে মাত্র ৬৪৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। এর মধ্যে খুঁড়িয়ে চলছে ৬টি। অপরদিকে উৎপাদন ক্ষমতার অর্ধেক উৎপাদনে চলছে ৪টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র। কাপ্তাই জল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৫টি ইউনিটের মধ্যে ৪টি ইউনিট বন্ধ রয়েছে। এখন মাত্র ১ নম্বর ইউনিটে (৪৬ মেগাওয়াট) ২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়। রাউজান তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৪২০ মেগাওয়াটের ২টি (প্রতিটি ২১০ মেগাওয়াট করে) বিদ্যুৎ কেন্দ্র দীর্ঘদিন থেকে বন্ধ রয়েছে। শিকলবাহা ২২৫ মেগওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি বন্ধ রয়েছে অনেক দিন ধরে। একই সাথে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিও অনেক দিন ধরে বন্ধ রয়েছে। হাটহাজারী ১০০ মেগাওয়াট পিকিং পাওয়ার প্ল্যান্টটিও অনেক দিন থেকে বন্ধ। ২৪ মেগাওয়াটের রিজেন্ট পাওয়ার প্ল্যান্ট বন্ধ রয়েছে। ১০০ মেগাওয়াটের এনার্জি প্যাক বন্ধ। এদিকে বছরের পর বছর ধরে টেকনাফ সোলার প্ল্যান্ট ও কাপ্তাই সোলার প্ল্যান্ট বন্ধ রয়েছে। তাই নামে মাত্র তালিকার বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র তালিকায় না রেখে এগুলোকে সচল করা দরকার। তেমনি বৃহত্তর চট্টগ্রামে ঘাটতি বিদ্যুত সংকট মেটাতে জরুরি ভিত্তিতে জাতীয় গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বাড়ানো উচিত।
এছাড়াও নগর জুড়ে পানির হাহাকারে জনজীবন আরও অতিষ্ঠ। পানির প্রাপ্যতা নিশ্চিতে চট্টগ্রাম ওয়াসা একের পর এক নিত্যনতুন প্রকল্প হাতে নিলেও লবণাক্ততা ও সুপেয় পানির প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে পারে নি। আর মাস গেলেই ঋণের কিস্তি পরিশোধসহ নানা বাহারী অজুহাতে পানির মূল্যবৃদ্ধির খড়ক দিয়ে ভোক্তাদেরকে বিপর্যস্ত রেখেছে। নগরবাসী সরকারি সেবা সংস্থাগুলোর এ ধরনের অব্যবস্থাপনা ও অনিয়ম বন্ধে সরকারের আশু উদ্যোগ কামনা করে। নতুবা জনঅসন্তোষ ক্রমশই দানা বাঁধবে।
বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন ক্যাব কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন, ক্যাব চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাধারণ সম্পাদক কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরী, সহ-সভাপতি ও সাংবাদিক এম নাসিরুল হক, ক্যাব মহানগরের সভাপতি জেসমিন সুলতানা পারু, সাধারণ সম্পাদক অজয় মিত্র শংকু, ক্যাব চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা সভাপতি আবদুল মান্নান প্রমুখ।
আরকে/মআ/চখ