chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

অভিযোগ বক্স নিয়ে আগ্রহ দেখাচ্ছে না রোগীর স্বজনরা

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে শেখ রাসেল স্ক্যানু(৩২ নাম্বার ওয়ার্ড) অভিযোগ বক্স বসানো হয়েছে। চিকিৎসা সেবায় কোনো প্রকার ত্রুটি থাকলে সেসব বিষয় নিয়ে কাগজে লিখে বক্সে ফেলা যাবে। পরে সেই অভিযোগ খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কিন্ত সে অভিযোগ বক্স নিয়ে কোনো প্রকার আগ্রহ দেখাচ্ছে না রোগীর স্বজনরা।

শেখ রাসেল স্ক্যানু্ ওর্য়াডের ভেতরে সন্তানদের দেখভাল করছেন মায়েরা

 

সরেজমিনে(২৬ ফেব্রুয়ারি)সকালে ১০টায় দেখা যায়, ৩২ নাম্বার ওয়ার্ডের আঙ্গিনায় দুই পাশে চেয়ার টেবিল রাখা হয়েছে। ততক্ষণে শুরু হয়েছে চিকিৎসকের রাউন্ড আপ। তাই সকল স্বজনদের বের করে দেওয়া হয়েছে। ওয়ার্ডে বাইরে পেতে রাখা চেয়ারে বসে রয়েছেন রোগীর স্বজনরা। কেউ হেলান দিয়ে বসে রয়েছেন, কেউ ঝিমাচ্ছেন। আবার এক কোনে ফোন চার্জ দেওয়া নিয়ে লেগেছে বাকবিতণ্ডা। ওর্য়াডের প্রধান গেইটের পাশে এক টেবিলে রাখা হয়েছে একটি কাচের বক্স। তার গায়ে লেখা-অভিযোগ বক্স। ভেতরে দুই-তিনটা কাগজ পড়ে রয়েছে। রোগী-স্বজনদের সাথে কথা বলে জানা গেলো, সাত দিন ধরে বক্সে কাগজগুলো পড়ে রয়েছে। পড়ে থাকা সেই কাগজ কেউ তুলে না। আবার নতুন কেউ অভিযোগও ফেলে না।

আনোয়ারা থেকে আসা মনিরা জানান, চিকিৎসা নিতে প্রায় তো গ্রাম থেকে আসে। তারা কি আর অভিযোগ বক্স নিয়ে মাথা ঘামায়। ওর্য়াডের ভেতরে বাচ্চাটি সুস্থ থাকলে সব ঠিক থাকে। বাচ্চারা অতিরিক্ত নড়াচড়া করায় প্রায় অক্সিজেনের লাইন খুলে যায়। সেদিকে খেয়াল রাখে না নার্সরা। একই সাথে চতুর্থ শ্রেণি কর্মীদের খামখেয়ালিরও অভাব নেই। কোনো কাজ করালে টাকা দিলেই তারা করে দেয়। তার আগে আসে না, সেবাও মেলে না।

পটিয়ার সামসুল বলেন, আমার বাচ্চা শ্বাস কষ্ট হওয়ায় ৫ দিন আগে এই ওর্য়াডে ভর্তি করেছিলাম । চিকিৎসা সেবা সব ঠিক আছে। তবে ডাক্তার রাইন্ড আপে আসলে ঘন্টার পর ঘন্টা বাচ্চার মাকে বাইরে রাখা হয়। কাউকে ঢুকতে দেয় না। বাচ্চা নড়াচড়া করায় সিরিঞ্জ, অক্সিজেনের লাইন খুলে যায়। মা থাকলে সেটা দেখে চিকিৎসকদের জানাতে পারেন। কিন্ত ঘন্টার পর ঘন্টা বাইরে রাখায় নানা ধরনের সমম্যায় পড়তে হয়।

এ প্রসঙ্গে কথা হয় ওয়ার্ডের বিভাগীয় প্রধান ডা. মোহাম্মদ শাহীনের সঙ্গে। তিনি  চট্টলার খবরকে বলেন, অন্যান্য হাসপাতালে শিশু আইসিইউতে রোগী স্বজনদের ঢুকতে দেওয়া হয় না।  আমাদের হাসপাতালে মায়েদের কথা চিন্তা করে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়। তাদের জন্য বসার সু- ব্যবস্থা করা হয়েছে। যা আগে ছিলো না। তবে পরবর্তীতে প্রবেশ সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেওয়া হবে। কারণ মায়েরাই শিশু মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ায়। তারা খুবই অসেচতন। শিশু বেডের পাশে মোবাইল, ময়লা কাঁথা, হাত বুলিয়ে আদর করা বারণ। কিন্ত মায়েরা ঠিক সেটাই করে। যার কারণে ঝুঁকিতে পড়ে যায় বাচ্চাটি।

তিনি আরও বলেন, শিশু মৃত্যু কমাতে মায়েদের সচেতন হতে হবে। সচেতনতা বাড়াতে আমরা ওয়ার্ডের চারপাশে নির্দেশিকামূলক পোস্টার লাগানোর ব্যবস্থা করছি। শুধুমাত্র চিকিৎসক মেশিন নয়, শিশুমৃত্যু কমাতে মায়েদেরও ভূমিকা রয়েছে।

অভিযোগ বক্স নিয়ে বিভাগীয় প্রধান বলেন, এটি এক মাসের মতো হলো দেওয়া হয়েছে। যাতে করে চিকিৎসা সেবায় অসন্তোষ থাকলে অভিযোগ জানাতে পারে। অভিযোগ আসলে তা আমরা থতিয়ে দেখে ব্যবস্থা গ্রহণ করি। এছাড়াও ওর্য়াডে সেই ফ্লো মিটার ২৫ থেকে ১২৫ টি বাড়ানো হয়েছে। একটি শিশু একটি ফ্লো মিটার দিয়ে সেবা নিতে পারছে। যেখানে একটি ফ্লো মিটার দিয়ে ৬-৭ জন শিশুকে অক্সিজেন দেওয়া হতো সেখানে এখন প্রতিটি শয্যায় আলাদা অক্সিজেন লাইন, উন্নতমানের ফোম, আন্ডার প্যাড (বিছানায় চাদরের মতো প্যাম্পাস), শয্যার পাশে মায়েদের বসার জন্য দেওয়া হয়েছে চেয়ার। যা আগে ছিলোনা। শয্যার সংখ্যা ৩২ থেকে ১২৪ শয্যায় উন্নীত করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, গত বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর চমেক হাসপাতালসহ সারা দেশে ৭৪টি নবজাতকদের জন্য বিশেষ সেবা ইউনিটের (এসসিএএনইউ) নামকরণ বঙ্গবন্ধুর শিশু সন্তান শেখ রাসেল নামে করা হয়েছে।

নচ/চখ

 

 

 

 

 

 

 

 

এই বিভাগের আরও খবর