chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

খাগড়াছড়ির পাহাড়ে সমুদ্রের গর্জন

একে একে সবুজ পাহাড়ের ঢেঊ নীল ঝর্ণার বুকে এসে মিশেছে। সেই মিলন রেখার প্রান্তে অসম্ভব বৈচিত্র্যভরা রিচেং ঝর্ণা । প্রায় কয়েকশ’ ফুট ওপর থেকে সর্গজনে আছড়ে পড়ছে বহু নীচে শ্যাওলা সবুজ কুন্ডে । তারই মধ্যে ছড়িয়ে রং-মানুষের বিশ্রাম , ঝর্ণা দেখার খুশি। সবুজ বনের ফাঁক দিয়ে হঠাৎ হঠাৎ নীল পানি দেখতে পাওয়া যায় দূর থেকে। ঝর্ণার পানির সঙ্গে এখানে মিশে থাকে মাটিরাঙ্গা উপজেলার আলুটিলা এলাকার মানুষের ছন্দে জীবন গাঁথা। ঝর্ণার সৃষ্ঠ পানি , সঙ্গে সবুজ সবুজ ছায়া। এ এক অন্যরকম নেশায় মাতা। যেখানে শুধু নরম , নিটোল ও সবুজের আড়াল। নির্জন ভাল লাগার হাতছানি।

রিচেং ঝর্ণার অবস্থান খাগড়াছড়ি জেলার মাটিরাঙ্গা উপজেলার আলুটিলা গ্রামের গহীন অরণ্যে। খাগড়াছড়ি সদর থেকে মাত্র ৮ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিলে দেখা মিলবে রিচেং ঝর্ণার । ঝর্ণা দেখার সবচেয়ে ভাল সময় সকাল ও বিকাল। সবুজ সাম্রাজ্যের মাঝ খানে কোথাও লাল মাটির রাস্তা , কোথাও কাঁচা মাটির বনপথ। গাড়ি চলতে থাকে বনের বিচিত্র শব্দ আর গন্ধ মাখতে মাখতে হরিনের মতো লাফিয়ে লাফিয়ে। কোথাও পার হতে হয় ছোট নালা। পার হওয়ার জন্য হয়তো দুটি পলকা কাঠ পাতা চাকা বরাবর। বেশ মজা লাগে চলতে। ঝর্ণা সৃষ্ট খালের পানি খেতে আসা বন্য প্রাণীদের সঙ্গে চোখাচোখি হয়ে যেতে পারে যখন-তখন। শহুরে প্রকৃতি প্রেমীদের মাঝে মাঝে মুখ ভেঙ্গিয়ে যায় হনুমানের দল , নাচ দেখিয়ে খুশি করতে চায় বানর। রিচেং ঝর্ণার পদে পদে নানা প্রাপ্তির মহা আয়োজন। স্থানীয় অধিবাসী নেলী মজুমদার শুনালেন ,এখানে হরিণ ও হাতির দেখা পাওয়া সুন্দরবনের মতো বেশ সহজ। শীতকালে বনবাসর জমাতে আসে বিদেশী পাখির দল।মাটিরাঙ্গা থেকে রিচেং যেতে বাসভাড়া মাত্র ১৫ টাকা। জিপে গেলে ২০ টাকা, মোটরসাইকেলেও যাওয়া যায় । তবে ভাড়া ৫০ টাকা। যাওয়ার সময় বুনো পথে হাঁটতে হবে অনেক পথ। তখন সকাল ৭ টা আমার সহযাত্রী বিথি মজুমদার , আখি মজুমদার, এন্থনিসহ পৌঁছলাম রিচেং ঝর্ণার কাছে। রিচেংয়ের ধারে বাঁশ ঝাড়ের প্রাচুর্য অবাক করে। এছাড়া বড় গাছ-পালাও রয়েছে হরেক প্রজাতির। তারমধ্যে শাল , সেগুন, জাম ও নাম না জানা গাছ-গাছালি । কোথাও আবার উঁচু এলিফ্যান্ট গ্রাসের বিস্তিীর্ণ ক্ষেত্র। জোরে হাওয়া দিলে সমুদ্রের মতো ঢেউ খেলে যায় সবুজ ঘাসে। সে এক দারুন দৃশ্য। ইতিউতি আবার আলো-ছায়ায় মনোরম আলপনা এঁকে রেখেছে ঘন সবুজ বন। ঝর্ণার উপরে প্রাচীর হয়ে দাঁড়িয়ে পাহাড়শ্রেণী। কোথাও ন্যাড়া , আবার কোথাও সবুজ চাদর গাঁয়ে জড়ানো। বেলা বাড়ে , দেখতে দেখতে ঝর্ণা সেরে সবাই যায়- ওই ছড়ায়। ওখানে সচ্ছ্ব পানিতে ছোট মাছের লোটোপুটি খেলা। পর্যটকদের কেউ পানিতে পায়ের পাতা ডুবিয়ে দাঁড়ায় , কেউ পানির ছন্দে দেহ মেলায়। কেউ করে ছুটোছুটি। সারাদিনের শেষে সন্ধ্যার সময় রিচেং ঝর্ণা আরও বেশি উজ্জ্বল, আরও সুন্দর হয়ে ওঠে। রিচেং বরাবর উপজাতিদের কাঠের বাড়ি , গাছের আড়ালে শেষ বিকালের আলোর ঈশারা । ওই সময় ফিরতে হবে আপনাকে।

সতর্কতা :

রিচেং ঝর্ণা এলাকায় উপজাতীয় সন্ত্রাসীদের আনাগোনা বাড়ে সন্ধ্যার পর। তাই যত সম্ভব বিকেলেই ওই স্থান ত্যাগ করা উচিত। মনে রাখতে হবে রিচেং এলাকায় গেলে সেনা ক্যাম্পে জানিয়ে যাবেন। সেনাবাহিনীর সদস্যরা সব সময় প্রস্তুত পর্যটকদের নিরাপত্তা দিতে।

যেখানে থাকবেন ঃ খাগড়াছড়ি সদরে রয়েছে পর্যটন মোটেল ও হোটেল। খুব কম টাকায় থাকা যায় সেখানে। তবে গভীর রাতে মোটেল- হোটেল থেকে বের না হওয়াটাই ভাল।

 

সাআ / চখ