chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

সন্ধ্যা হলেই মাদকের কটূ গন্ধে ভরে থাকে চট্টগ্রাম রেলষ্টেশন এলাকা

সাইফুদ্দিন মুহাম্মদ: গত কয়েক দিন আগের সন্ধ্যা বেলা। কর্ণফুলী এক্সপ্রেস থেমেছে চট্টগ্রাম স্টেশনের দু’নম্বর প্ল্যাটফর্মে। বছর কুড়ির এক যুবক ট্রেন থেকে নেমেই সেই প্ল্যাটফর্মের পশ্চিম দিকে ঝুপড়িতে ছুটে গেলেন।

কিছুক্ষণ পরে যখন ফিরলেন, তখন তাঁর পা টলোমলো। নেশায় বুদ ছিল সে। তার অসংলগ্ন চিৎকারে অতিষ্ঠ স্টেশনের যাত্রীরা। পরে যাত্রীরা পিটিয়ে বের করে দিল তাকে।

আরিফ নামের ১০/১২ বছরের এক পথ শিশু ষ্টেশনের প্রবেশ পথের ঠিক সামনে পলিথিন প্যাকে কি যেন নিয়ে নি:শ্বাস নিচ্ছিল। তার সাথে সাহেদ, বিজয়, আনিস, রহিমা, সরওয়ারসহ সম বয়সের আরো কয়েকজন শিশু একই নেশায় মক্ত।

এ ভয়ংকর নেশার নাম ড্যান্ডি। প্রতিদিন উল্লেখযোগ্য পথশিশু ষ্টেশন এলাকায় ডুবে থাকে ড্যান্ডি নেশায়। তারা নেশা করে চুরি,ছিনতাই হেন কাজ নেই করছে না।

এ কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। ওই স্টেশনের নিত্যযাত্রীদের অভিযোগ, সন্ধ্যা নামতেই প্ল্যাটফর্ম এবং স্টেশন চত্বরে জমে ওঠে মদ-গাঁজার গোপন ব্যবসা। মাদকের কটূ গন্ধে ভরে ওঠে স্টেশন। প্ল্যাটফর্মে সন্ধ্যা হতেই অপরিচিত মানুষের আনাগোনা বাড়ে। স্টেশনে বেআইনি কাজ যাতে না হয়, তার জন্য রেল পুলিশ রয়েছে। প্ল্যাটফর্মে তাদের নজরদারিও চোখে পড়ে। তা সত্ত্বেও কী ভাবে নেশার আসর বসে?

নিত্যাত্রীদের অনেকেরই অভিযোগ, পুলিশের একাংশের সঙ্গে মাদক ব্যবসায়ীদের গোপন বোঝাপড়া রয়েছে। তাই অবাধে তারা ব্যবসা করছে। এমনকী, প্ল্যাটফর্মের উত্তর প্রান্তে ঝুঁপড়িগুলোতে অন্ধকারে দেহ ব্যবসাও চলে বলে অভিযোগ।

রেল পুলিশ অবশ্য দাবি করেছে, ষ্টেশন এলাকায় অবৈধ অবস্থান কিংবা অযথা আসা যাওয়া করে এমন ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ রেলওয়ে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

অবৈধ হকার, ভিক্ষুক এবং হিজড়াদের প্রাথমিক পর্যায়ে আটক করে সর্তক করাসহ মুচলেকা গ্রহণ করে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। পরবর্তীতে এই ধরনের কার্যক্রম কেউ করলে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। প্লাটফরম এলাকায় মাদকাসক্ত ব্যক্তিদেরকে আটক করে নিয়মিত আদালতে সোপর্দ করা হচ্ছে।

চট্টগ্রাম রেলওয়ে থানার অফিসার ইনর্চাজ বলেন, রেলষ্টেশন এলাকার মাদকসেবী ও মাদক কারবারীদের গ্রেফতারের প্রায় সময় অভিযান চালানো হয়। বেশ কিছু মাদক কারবারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেফতারের চেস্টা চলছে।

রেলস্টেশন সংলগ্ন কলোনি, রেলের প্লাটফর্ম, স্টেশন রোড, রিয়াজ উদ্দিন বাজার, বিআরটিসি মোড়, কভার স্টোরসহ কয়েকটি এলাকায় চলে অবাধে মাদক বেচাকেনা। এসব জায়গায় ফেনসিডিল, গাঁজা, ইয়াবা, হেরোইন ও মদসহ বিভিন্ন জাতের মাদক খুব সহজেই পাওয়া যায়।

রেলস্টেশন কেন্দ্রিক মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণে রয়েছেন জামতলা বস্তির ইদু, সুফিয়া, লাইলি, বরিশাল কলোনীর মনির, স্টেশন কলোনির কামাল, পুরাতন রেলস্টেশনের রহিমা, বয়লার কলোনির আলো, বিআরটিসি মোড়ের জাহাঙ্গীর, পলোগ্রাউন্ড মাঠের পেছনে জসিম, ইকবাল রোডে গোপাল, সুভাষ, কলা বাগিচারয় কৃঞ্চ, সাগর, রঞ্জিত, ব্রিকফিল্ড রোডে পারভেজ, স্বপন। মাদক ব্যবসার আধিপত্য ধরে রাখার জন্য তাদের মধ্যে এ এলাকায় প্রায়ই রক্তক্ষয়ী ঘটনা সংঘটিত হয়।

রেল যাত্রীরা বলছেন, নেশাগ্রস্তদের হাতে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কায় তারা রেল পুলিশের কাছে অভিযোগ জানান না। চট্টগ্রাম রেল স্টেশন হয়ে প্রতিদিন বাড়ি ফেরেন এক কলেজ ছাত্রী। বাবা তাকে ফিরিয়ে নিয়ে যান।

ওই কলেজ ছাত্রী বলেন, ‘একা ফিরতে ভয় লাগে। কিছু যুবক ওভারব্রিজের নিচে ঘণ্টার পর ঘণ্টা নেশাগ্রস্ত অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকে। কটূক্তি করে। প্রতিবাদ করেও লাভ হয় না। তাই বাবা আমাকে নিতে আসে।’

আর এক নিত্যযাত্রী সোহেল মুহাম্মদ বলেন, ‘প্ল্যাটফর্মের শৌচাগারে যাওয়া যায় না। ওখানেও নেশা চলে। বিশেষ করে প্ল্যাটফর্মের শেষ প্রান্তে অন্ধকারের মধ্যেই অবাধে নেশার আসর বসে। স্টেশন সংলগ্ন এলাকা থেকে চলে আসে মদের বোতল। গাঁজার পুরিয়া।’

একই কথা জানিয়েছেন কিছু হকারও। কিন্তু তারাও ভয়ে এ সবে মাথা ঘামান না। বাধা দেওয়ার কেউ নেই। তাই চট্টগ্রাম রেল স্টেশন এখন নেশার ঠিকানা হয়ে গেছে বলে মনে করছেন যাত্রীরা।

চখ/আর এস

এই বিভাগের আরও খবর