চট্টগ্রামে নবাব নেই, ইফতারে রয়েছে নবাবীয়ানা
চট্টগ্রামের লোকজনের কাছে ইফতারির মেনুটাই আলাদা। ভোজন রসিক হিসাবে খ্যাত চট্টগ্রামবাসীর রমজানের প্রত্যাহিক ইফতারে মেজবানী গোস্তসহ নানা পদের খাদ্য সংযোজিত থাকে। শ্রীলঙ্কান রোল,অ্যারাবিয়ান কাবাব,তার্কিজ শর্মা,বাস্কেট চিকেন,চিকেন সাসলিক,চিকেন মাসরুম, হায়দ্রাবাদি বিরিয়ানি,দইবড়া, পেপের জুস,ঢাকাইয়া হালিম, চুমকি হালুয়া,বিফ বিরিয়ানি,ফিরনি,মাটন হালিমসহ নানা পদের ইফতারি সামগ্রী বেচাকেনা চলছে মধ্যবিত্তের দোকান থেকে উচ্চ বিত্তের দোকানগুলোতে। চট্টগ্রামের ইফতারের আয়োজনে নবাবী হাওয়া পরিলক্ষিত হচ্ছে সবখানে।
চট্টগ্রাম নগরের দোকানে দোকানে বাহারি কায়দায় সাজানো নানা বর্ণ গন্ধ আর জিভে জল নিয়ে আসা স্বাদের রকমারি ইফতারি, সামনে মানুষের উপচে পড়া ভিড় লেগে থাকে দুপুর থেকেই । যেমন ইফতারির বাহার তেমনি নানা কেতায় নানা ‘আইটেমের’ না নিয়ে দোকানিদের হাঁক-ডাক, শতকণ্ঠের কোলাহল আর সঙ্গে। ক্রেতাদের ভিড়ে আছে ৭/৮ বছরের ছোট শিশু থেকে শুরু করে কিশোর-যুবক, নারী আর ষাটোর্ধ প্রবীণরাও।
এবার আগ্রাবাদ হোটেলে বাংলাদেশী খাবারের বাইরে দই জিরা পানি, হালিম আখরি,ল্যাম্বা শর্মা,চিকেন শর্মাসহ দেশি বিদেশী ৪৫ আইটেম ইফতারির আয়োজন করেছে। হোটেল অ্যামেব্রোসিয়ায় পার্সিয়ান হালিম, অ্যারাবিয়ান কাবাব, গোল্ডন ফ্রাইড প্রন, দই বড়া,রেশমি জিলাপি,পাটিসাপটা,ছানামঞ্জুরি,লালমোহন,তার্কিজ শর্মাসহ বাহারি নবাবী খাবার ইফতারে পরিবেশন করা হচ্ছে। দাম একটু বেশি। তবে স্বাদে-মানে অনেক দারুন।
সিলভার স্পুনে ইফতারির আয়োজনে রয়েছে চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী মেজবানি গোস্ত। এছাড়া বিরিয়ানি,হালিম, ম্যাংগো লাচ্ছিসহ রকমারি ইফতারের মেনো রয়েছে। ইফতারের পসরায় পিছিয়ে নেই হোটেল পিটস্টপ। তাদের আয়োজনের রয়েছে চিকেন সালসিক,চিকেন টোস্ট,চিকেন মাসরুম,বিফ হাফ মুন, ফ্রাইড সিকেনসহ নানা আইটেম।
জিইসির মোড়ের ওয়েল ফুডে-এ রয়েছে ৪০ আইটেমের ইফতারি। তারমধ্যে বিফ বিরিয়ানি, চিকেন শর্মা, চিকেন তন্দুরি, ছানার রোল,বিফ বিরিয়ানি, চিকেন পরাটা।
প্রতিবারের মতো এবারের রমজানেও ঐতিহ্যবাহী ইফতারের বিশেষ আয়োজন নিয়ে চট্টগ্রামের কাজির দেউড়ির স্টেডিয়াম পাড়ার জনপ্রিয় রেস্তোরাঁ রোদেলা বিকেল হাজির হয়েছে। সেখানে পাওয়া যাচ্ছে বৈচিত্র্যময় ইফতার। হালিম, মেজবানি মাংস, কাচ্চি বিরিয়ানি থেকে শুরু করে পরোটা, কাবাব ও চিকেন তন্দুরি।
পাঁচতারকা হোটেল রেডিসন ব্লু চিটাগাং বে ভিউ’র ইফতার বাজার জমে উঠেছে প্রথম রোজাতেই। হোটেলের লবিতে দূরদূরান্ত থেকে মানুষ ছুটে আসছেন ইফতার কিনতে। সেথানে হালিম, বিফ মেজবানি কারি, স্পেশাল জিলাপি, মাটন আখনি বিরিয়ানি, অ্যারাবিক সুইটস, চিকেন ফ্রাইসহ নানা আইটেমের ইফতারি বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া নগরীর জামালখান, নিউমার্কেট, চকবাজার,আগ্রাবাদ, বন্দর, জিইসির মোড়, মুরাদপুর, খুলশী এলাকায় অভিজাত রোস্তোরা ও হোটেলগুলোতে দেশি বিদেশী ইফতারির আইটেম বিক্রি হচ্ছে। সেথানে মুহূর্তের মধ্যেই শেষ হয়ে যায় দুপুর থেকে সাজিয়ে রাখা দইবড়া, হালিম, শিক কাবাব সুতি ও জালি কাবাবসহ নবাবি খাবারগুলো । সেখানে ক্রেতারা আসেন নগরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে। তারা ছুটে আসেন এসব নবাবী ইফতার সামগ্রীর টানে।
নগরের বিভিন্ন স্পর্টে নিম্ম বিত্ত ও মধ্যবিত্তের সাধ্যের মধ্যে ইফতারির আইটেম বিক্রি হতে দেখা গেছে। চট্টগ্রামে ইফতার সামগ্রির মধ্যে বেশি ভাগ আইটেম তৎকালীন নবাবীয়ানা পরিলক্ষিত হচ্ছে।
গতকাল বিকালে নগরের বেশ কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, স্থায়ী দোকানগুলোর পাশাপাশি অস্থায়ীভাবে ইফতারের আইটেম নিয়ে পসরা সাজিয়ে বসেছে দোকানিরা। বেচাকেনাও বেশ ভাল বলে জানালেন কাজীর দেউরী মোড়ের অস্থায়ী একটি দোকানের মালিক সালাম সোবহান । তিনি জানান, ২০ হাজার টাকার ইফতার সামগ্রি নিয়ে ২ ঘন্টা বিক্রির পর বেলা ৫ টায় সব বিক্রি হয়ে গেছে।
নবাবী ইফতারের পাশাপাশি পথের দ্বারে গড়ে উঠা ইফতারের দোকানগুলোতে বিকাল থেকে বেচাকেনার ধুম পড়ে যায়। বাহারি নামে ইফতার সামগ্রি তৈরি করে দোকানিরা বিক্রি করতে দেখা গেছে।
কাজীর দেউরির রেড চিলির বিক্রয় কর্মীরা বলেন, আমরা প্রতিবছরই নানা রকম বিদেশী ইফতার আইটেম বিক্রি করে থাকি। ক্রেতাদের চাহিদা বজায় রেখে এবারও ইফতারের আয়োজন করেছি। এবার আশানুরূপ ক্রেতা সমাগমও হচ্ছে।
মআ/চখ