chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

নৈরাজ্য : বাড়তি ভাড়া গ্যাসচালিত গাড়িতেও!

সাইফুদ্দিন মুহাম্মদ,বিশেষ প্রতিনিধি : হঠাৎ করে চট্টগ্রাম নগরে গ্যাসচালিত বাস, টেক্সি, টেম্পু, লেগুনা বা হিউম্যান হলারসহ গণপরিবহন ‘তেলচালিত’ হয়ে গেল।

দেশে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার সাথে সাথে বাড়তি ভাড়া আদায়ের জন্য গ্যাসচালিত গণপরিবহনগুলোর চালক, হেলপার ও মালিকরা জোর করে বাড়তি ভাড়া আদায় করছে।

বিআরটিএর কর্মকর্তারা বলছেন, গ্যাসচালিত গাড়িগুলো কোনভাবেই বাড়তি ভাড়া নিতে পারবেনা। কিন্তু সরকারি নির্দেশ উপেক্ষা করে গণহারে বাড়তি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে।

চট্টগ্রাম নগরের শাহ আমানত সেতু এলাকা থেকে প্রায় সাড়ে তিন শতাধিক লেগুনা চলাচল করে কোতোয়ালী থানার নিউ মার্কেট পর্যন্ত। তুলনামূলক কম দূরত্বে চলা লেগুনাগুলো শতভাগ গ্যাসে চালিত। গত শুক্রবার ওই পথে নির্ধারিত ভাড়া নিত ১২ টাকা। আজ রবিবার সে দূরত্বে ভাড়া আদায় করতে দেখা গেছে ১৫টাকা।

বাড়তি তিন টাকা নেওয়ার বিষয়ে লালদীঘি অটো টেম্পু শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো.জানে আলমকে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, জ্বালানি তেল বাড়ায় আমরাও ভুক্তভোগী। পরিস্থিতির শিকার।

রাজিয়া সুলতানা রণি নামের এক যাত্রী বলেন, কোতোয়ালী মোড় থেকে গ্যাসচালিত টেম্পুতে যাবো জামালখান ড.খাস্তগীর উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে। সেখানে আগে ভাড়া ছিল ৮ টাকা। আজ আমাকে দিতে হলো ১৫টাকা। গ্যাসচালিত টেম্পুতে বাড়তি ভাড়া কেন নিচ্ছেন প্রশ্ন করলে চালক ও হেলপার আমার সাথে অসৌজন্যমূলক আচরন করেন।

চট্টগ্রাম নগরের চান্দগাঁও বহদ্দরহাট থেকে কোতোয়ালী থানার তিনপুলের মাথায় চালু আছে টেম্পু সার্ভিস। অধিকাংশ টেম্পু গ্যাস চালিত। ওই পথে টেম্পুগুলো যাত্রীদের উঠা-নামায় বাড়তি পাঁচ টাকা নিচ্ছে বলে জানিয়েছেন বহদ্দরহাট ব্যবসায়ী নেতা নুরুল আলম শিপু।

তিনি বলেন, আমার জানা মতে ওই সড়কে চলা টেম্পু ও থ্রি হুলারগুলোর বেশির ভাগ গ্যাসে চলে। অথচ চালক-হেলপাররা বলছে, এখন ডিজেলে চলে।

নগরের বহদ্দরহাট মোড় থেকে বাকলিয়ার নতুনব্রিজ এলাকা পর্যন্ত চালু রয়েছে আরেকটি অটো টেম্পু সার্ভিস। গত দুইদিন আগেও তারা দূরত্ববেধে যা ভাড়া নিত আজ উঠা-নামায় ৫টা বেশি ভাড়া নিচ্ছে। আজ দুপুর ২টার দিকে মোহাম্মদ সোহেল নামের এক যাত্রীর সঙ্গে কালামিয়া বাজার এলাকায় বাকবিতন্ডা হয় টেম্পু শ্রমিকদের। চন্দনাইশ থেকে ষোলশহরে আসার পথে পরিবহন শ্রমিকদের নির্যাতনের শিকার হন তিনি।

খবর নিয়ে জানা গেছে, নগরের কাপ্তাই রাস্তার মাথা থেকে বহদ্দরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের অফিসের সামনে, ষোলশহর, মুরাদপুর থেকে লালদীঘি, জিইসি মোড় থেকে অলংকার মোড়, পতেঙ্গা, পাহাড়তলী, হালিশহর, আগ্রাবাদসহ বিভিন্ন সড়কে হিউম্যান হলার ও টেম্পু সার্ভিস চালু রয়েছে।

গ্যাস চালিত এসব গণপরিবহনে আজ থেকে বাড়তি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। এছাড়া নগরের প্রধান সড়কগুলো গ্যাসচালিত বাস ও মিনিবাসগুলো রাতারাতি ডিজেলচালিত উল্লেখ করে গণহারে বাড়তি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে।বাসচালক-কন্ডাক্টরদের দাবি-সব বাস ডিজেলে চলে। এ নিয়ে বাসচালক-হেলপার ও যাত্রীদের মধ্যে বাক-বিতন্ডা হচ্ছে।

আগ্রাবাদ বাদামতল এলাকার বাসিন্দা নূরে মোস্তাফা বলেন, বাস ও হিউম্যান হলার চালকরা গ্যাসে গাড়ি চালালেও ডিজেলের কথা বলে বাড়তি ভাড়া নিচ্ছে।আসলে কোনটা ডিজেলচালিত আর কোনটা গ্যাসচালিত এটা বুঝবো কীভাবে? সবাই অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে। এদের কাছে সাধারণ মানুষ জিম্মি হয়ে পড়ছে।

নিরাপদ সড়ক চাই’-সংগঠনের চট্টগ্রাম নগর সাধারণ সম্পাদক ও সাংবাদিক শফিক আহমেদ সাজীব বলেন, সিএনজির সিলিন্ডার তো গাড়িতেই থাকে। যাত্রীরা একটু কষ্ট করে দেখে নিয়ে তারপর ভাড়া দিলেই হয়। তাহলে ভাড়ার নামে এ নৈরাজ্য বন্ধ হয়ে যাবে। তিনি এব্যাপারে প্রশাসনের হস্তক্ষেপও কামনা করেছেন।

এদিকে জ্বালানি তেলের রেকর্ড মূল্যবৃদ্ধির পর ডিজেলচালিত বাস ও মিনিবাসের ভাড়া বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। আজ রবিবার (৭ আগস্ট) রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের উপসচিব মো. মনিরুল আলম ওই প্রজ্ঞাপনে স্বাক্ষর করেন।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, আন্তঃজেলা ও দূরপাল্লার রুটে চলাচলকারী বাস ও মিনিবাসের ক্ষেত্রে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের প্রতি কিলোমিটারে যাত্রী প্রতি সর্বোচ্চ ভাড়া ১ টাকা ৮০ পয়সার জায়গায় ২ টাকা ২০ পয়সা; ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীতে চলাচলকারী বাসের ক্ষেত্রে প্রতি কিলোমিটার যাত্রীপ্রতি ভাড়া ২ টাকা ১৫ পয়সার স্থলে ২ টাকা ৫০ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে।

এছাড়া চট্টগ্রাম মহানগরীতে চলাচলকারী বাস ও মিনিবাসের ক্ষেত্রে প্রতি কিলোমিটারে যাত্রীপ্রতি ভাড়া ২ টাকা ০৫ পয়সার স্থলে ২ টাকা ৪০ পয়সা; ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীতে চলাচলকারী বাস ও মিনিবাসের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ভাড়া যথাক্রমে ১০ টাকা ও ৮ টাকা নির্ধারিত হয়েছে।

চখ/আর এস

এই বিভাগের আরও খবর