chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

মা এখানে যুদ্ধ চলছে, ভয় লাগছে

নিজস্ব প্রতিবেদক:গেল কয়েক দিন ধরে আটকে আছেন জাহাজে। সেখান থেকেই শুনছেন যুদ্ধের ডামাডোলে নিরস্ত্র মানুষের হাহাকার আর আর্তনাদ। অনিশ্চয়তায় মুখে যে কোনো সময় হামলার আশঙ্কা করছিল ইউক্রেনের অলিভিয়া বন্দরে অবস্থান করা ‘বাংলার সমৃদ্ধি’ জাহাজের ২৮ নাবিক-ক্রু।

মনের ভেতরে ঘুরপাক খাওয়া সে আশঙ্কাই যেনো সত্যি হলো। গেল বুধবার (২ মার্চ) ইউক্রেনের স্থানীয় সময় বিকেল পাঁচটায় সেই জাহাজে রকেট হামলা চালায় রাশিয়া। হামলায় প্রাণ হারান জাহাজের থার্ড ইঞ্জিনিয়ার হাদিসুর রহমান।

হামলার পর ওই জাহাজে অবস্থান করা অন্যান্য নাবিক-ক্রুদের মাঝে বিরাজ করে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা। সেই উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠায় যেনো আছড়ে পড়েছে বাংলাদেশে তাদের পরিবার ও আত্মীয়স্বজনদের মাঝে। কী হতে চলছে তাদের ভাগ্যে এই অপক্ষোয় যেনো পুরো দেশ।

গতকাল হামলার পর রাত সোয়া ১০ টায় মা চেমন আরা বেগমকে ফেসবুক ম্যাসাঞ্জারে ফোন করে বিভীষিকাময় রকেট হামলা কথা জানিয়েছেন জাহাজে থাকা ফোর্থ ইঞ্জিনিয়ার সালমান সরওয়ার সামি। তার ফোন পেয়েই মা চেমন আরার মন অস্থিও হয়ে পড়েন। ঘুম নেই পরিবারে কেউ, কেবল চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে জল। সামির গত ২০ ফেব্রæয়ারি ‘বাংলার সমৃদ্ধি’ জাহাজে যুক্ত জন।

সামির মা চেমন আরা চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার ভাটিয়ারী হাজী টি.এ.সি মাধ্যমিক স্কুলের সিনিয়র শিক্ষক। বাবা মাহফুজুল হক চট্টগ্রাম নগরীর বারেক মিয়া বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক। দুই ভাই বোনের মধ্যে সামির সবার বড়। ছোট বোন করছেন পড়াশোনা।

বৃহস্পতিবার (৩ মার্চ) দুপুরে কথা হয় সামির মা চেমন আরার সঙ্গে। তিনি বলেন, হামলার পর রাতে সে মেসেঞ্জারে ফোন করেছিল। তার কণ্ঠে ভয় আর উদ্বেগ কাজ করছিল। সে বলেছিল মা আমাদের জাহাজে রকেট হামলা হয়েছে। আমরা সবাই ভালো আছি, কিন্তু আমাদের এক থার্ড ইঞ্জিনিয়ার মারা গেছে। সে বার বার বলছিল মা এখানে যুদ্ধ চলছে, ভয় লাগছে। আবারও হামলা হতে পারে। আমরা কারো  সাথে যোগাযোগ করতে পারছি না।

এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, গত সপ্তাহে সরকারের পক্ষ থেকে ফোন করে দুশ্চিন্তা করতে বলেছিল। নিরাপদে আছে বলেছিল। গতকাল হামলায় হয়েছে। কয়েক বছর আগে সামির বাবা স্টোক করেছেন। তাকে খুব একটা এসব বিষয় জানাচ্ছি না। সেখানে যুদ্ধ চলছে, যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। আমরা কীভাবে শান্ত থাকি। আমার মতো ২৮ টি পরিবার আতঙ্কে আর ভয়ে রয়েছে। দুপুর পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করা হয়নি।

কথা বলার এক ফাঁকে কান্না করে দেন এই শিক্ষিকা। তিনি কান্নাজগিত কণ্ঠে বলেন, আমি প্রধানমন্ত্রী, নৌ পরিবহন মন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট সবার কাছে আকুল আবেদন করছি আমাদের সন্তানকে ফিরিয়ে দেন। ২৮ টি পরিবার উদ্বেগ ও শঙ্কার মধ্যে দিন পার করছে। তারা আপনাদের দিকে থাকিয়ে আছে। আমার ছেলেকে ফিরিয়ে দেন।

উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন এমভি ‘বাংলার সমৃদ্ধি’ জাহাজটি বিএসসি’র বহরে যুক্ত হয়। এরপর থেকে বিশের বিভিন্ন বন্দরে সাধারণ পণ্য পরিবহন করে আসছে। এর ধারাবাহিকতায় ডেনিস ভিত্তিক চার্টারার ডেল্টা কর্প এর সিংগাপুর অফিস জাহাজটি পণ্য পরিবহনের জন্য ভাড়া নেয়।

গত ২১ ফেব্রুয়ারি তুর্কি বন্দর এরেগলি ছেড়ে যায়। পরবর্তীতে ২৩ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনের বন্দর অলিভিয়া বন্দরে পৌঁছায়। এরপর দেশটিতে ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে রাশিয়ান হামলা চালালে বন্দরের সব কাযয়ক্রম কার্যক বন্ধ হয়ে যায়।

 

আরকে/চখ

এই বিভাগের আরও খবর