নগরীর ভোগ্যপণ্যের বাজারে জেলা প্রশাসনের অভিযান মামলা ও জরিমানা
নগরীর গুরুত্বপূর্ণ পাইকারি ও খুচরা বাজার সমূহে পবিত্র রমজান মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণ রাখার লক্ষ্যে অভিযান পরিচালনা করেছে জেলা প্রশাসনের বিশেষ টিম।
রবিবার (২৬ এপ্রিল) জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেনের নির্দেশে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ তৌহিদুল ইসলাম এবং মোঃ আলী হাসান এবং আবদুস সামাদ সিকদার অভিযান পরিচালনা করেন। এ সময় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষে সিএমপি সদস্য এবং র্যা ব-৭ এর টিম অভিযানে উপস্থিত ছিলেন।
সকালে খাতুনগঞ্জে জেলা প্রশাসন চট্টগ্রামের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ তৌহিদুল ইসলাম খাতুনগঞ্জের বিভিন্ন আদা, রসুন, পেয়াজ, খেজুর, ডাল সহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানসমূহে, আড়ত, পাইকারি দোকান ও মোকামে অভিযান পরিচালনা করেন।
খাতুনগঞ্জ বাজারে অভিযানকালে দেখা যায়, আদার আড়তগুলোতে আমদানি মূল্যের চাইতে দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ দামে আদা বিক্রি হচ্ছে। হাতেনাতে অধিক মূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আদা বিক্রির প্রমাণ পাওয়ায় খাতুনগঞ্জের হামিদুল্লাহ মার্কেটের কামাল উদ্দিন ব্রাদার্স কে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
পাহাড়তলী বাজার ও ফইল্লাতলী বাজারে পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবদুস সামাদ শিকদার পাহাড়তলী বাজারে এক ব্যবসায়ীকে অতিরিক্ত দামে আদা বিক্রি , আদা ক্রয়ের রশিদ না থাকা এবং মূল্য তালিকা না থাকায় জরিমানা করেন। সর্বমোট ৫টি মামলায় পাঁচজন ব্যবসায়ীকে মোট ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
উভয় অভিযানে ১০ টি মামলায় মোট ৮৫ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
উল্লেখ্য যে, আমদানি তথ্য অনুযায়ী বিগত পহেলা জানুয়ারি হতে ২৪ এপ্রিল পর্যন্ত চট্টগ্রাম ভিত্তিক মোট ৩৫ জন আমদানিকারক মোট ৩১৪৩.৯৫ মেট্রিক টন আদা আমদানি করেছে। যার কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স সহ আমদানি খরচ ২৫২ কোটি ৬১ লক্ষ ৭ হাজার টাকা। এ হিসেবে আদার গড় আমদানি মূল্য কেজি প্রতি ৮০ টাকার মতো। সাম্প্রতিক সময়ে বিদেশ থেকে যে আদা আমদানি হয়েছে সেগুলোর কেজি প্রতি মূল্য ৯০-৯৫ টাকার মতো। কিন্তু খাতুনগঞ্জ, চাক্তাই, পাহাড়তলির বিভিন্ন আড়ত ও মোকামে রেজিস্টার অনুসন্ধানে পাওয়া গিয়েছে যে, বিগত ১৫ এপ্রিলের পর থেকে আদা ব্যবসায়ী চক্র (আমদানিকারক, ব্রোকার, কমিশন এজেন্ট, আড়তদারগণ) আদার মূল্য বাড়িয়ে ১২৫ টাকা থেকে কয়েক দিনের ব্যবধানে ২৫০ টাকার উপরে নিয়ে গিয়েছেন। আমদানিকারকগণ বন্দর থেকে সরাসরি দালাল (ব্রোকার), কমিশন এজেন্টদের মাধ্যমে আড়তদারদের নিকট এসব পণ্য পৌঁছে দেন। মূলত চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে আদার বাজার অস্থিতিশীল করার পেছনে কতিপয় আমদানিকারক এবং ব্রোকার (দালালদের) যোগসাজশে আদার বাজার মূল্য অস্থিতিশীল হয়েছে। আজকে খাতুনগঞ্জে জেলা প্রশাসন চট্টগ্রামের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ তৌহিদুল ইসলাম এবং আলী হাসান র্যা ব-৭ সদস্য সহ খাতুনগঞ্জের বিভিন্ন আদা, রসুন, পেয়াজ, খেজুর, ডাল সহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান গুলোতে অভিযান পরিচালনা শুরু করলে হামিদুল্লাহ বাজার, নবী সুপার মার্কেট, আমির মার্কেট,ইয়াকুব বিল্ডিং, চাক্তাই এলাকার বেশ কিছু আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান গুলো তাদের অফিস বন্ধ করে গা ঢাকা দেয়। এদের মধ্যে যেসকল প্রতিষ্ঠান গা ঢাকা দিয়েছে তাদের অধিকাংশই আদা ব্যবসায়ী। বিভিন্ন পাইকারি দোকান,আড়ত ও মোকামে বিক্রেতাদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, আদার আমদানিকারকদের সাথে একটি দালাল (ব্রোকার) এবং কমিশন এজেন্ট চক্র যুক্ত হয়ে আদার বাজার মূল্যে কারসাজি করেছে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের নিকট বেশ কয়েকজন আড়তদার জানান, খাতুনগঞ্জে বিভিন্ন সময়ে আমদানিকারকদের সাথে যোগসাজশ যারা করে বিভিন্ন পণ্যের দাম বৃদ্ধি করেন তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন আজিজ, সিরাজ, কাদের ও জিয়াউর রহমান
উল্লেখ্য যে, গত বছর পেঁয়াজের বাজার মূল্য চট্টগ্রামে অস্থিতিশীল করার পেছনে জিয়াউর রহমানের যোগসূত্র ছিল।
জিয়াউর রহমান একজন আমদানিকারক-ও। খাতুনগঞ্জের হাজী সোনা মিয়া মার্কেটে অবস্থিত জিয়াউর রহমানের প্রতিষ্ঠানে ভ্রাম্যমাণ আদালত র্যা ব-৭ সহযোগে গিয়ে বন্ধ দেখতে পান। মোবাইল কোর্টের উপস্থিতিতে টের পেয়ে তিনি গা ঢাকা দিয়েছেন।