chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

নগরীতে বারবার ড্রেন দুর্ঘটনা, কার দায় কতটা ?

নিরাপদ নগরী নিয়ে সাবেকদের ভাবনা

রকিব কামাল: চট্টগ্রাম নগরীর উন্মুক্ত খাল ও নালায় পড়ে চলতি মাসে বিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীসহ চার জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় রেশ টেনে না ধরে, উল্টো সিডিএ ও চসিক একে অপরকে দোষারোপে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। সচেতন নাগরিক ও পরিকল্পনাবিদরা মনে করেন, ‘কমপ্লিট সিকিউরিটি না থাকায় দুর্ঘটনা বেড়েই চলছে।’

অপরদিকে, চসিকের সাবেক মেয়র ও প্রশাসক বর্তমান মেয়রকে সেবা সংস্থাগুলোর সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করার তাগাদা দিয়েছেন।

জানা যায়, গত ২৫ আগস্ট নগরের মুরাদপুরে চশমা খালে পড়ে তলিয়ে যান সবজিবিক্রেতা সালেহ আহমেদ। এখনও তার খোঁজ মেলেনি। গেল ২৮ সেপ্টেম্বর ফুটপাত দিয়ে হেঁটে যাওয়ার পথে নালায় পড়ে মারা যান শেহেরীন মাহমুদ সাদিয়া নামে এক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী। এর আগে ৩০ জুন অটোরিকশা খালে পড়ে দুজন মারা যায়।

সর্বশেষ সোমবার (৬ডিসেম্বর) নগরের ষোলশহর শপিং কমপ্লেক্সের পাশে মো. কামাল উদ্দীন (১০) নামে এক শিশু নালায় তলিয়ে যায়। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি টিম উদ্ধার অভিযান অব্যাহত রেখেছে। ফলে নতুন করে সেবা সংস্থাগুলোর সমন্বয়হনীতার বিষয়টি আলোচনায় আসে।

যাইনি, গেলে অনেক সমস্যা হয়: এ বিষয়ে চট্টলার খবর প্রতিবেদকের কথা হয় চসিকের সাবেক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজনের সঙ্গে। তিনি বলেন, সিডিএর অধীনে জলাবদ্ধতার প্রকল্পের কাজ চলছে। এসব নালার পাশে যারা কাজ করছেন তারা কমপ্লিট সিকিউরিটি নিয়ে কাজ করছেন না। অরক্ষিত খালে বা নালায় ভেবে চিন্তে স্ল্যাব বসাতে হবে। অবিলম্বে সেইফটি নেট দেওয়ার অনুরোধ করছি।

এক প্রশ্নের জবাবে সাবেক প্রশাসক সুজন বলেন, আমি দায়িত্ব পালন করার সময় সিটি করপোরেশনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে দ্বিপাক্ষিক কমিটি করে দিয়েছিলাম। আমি চলে আসার পর এসব কমিটি কাজ করছে জানি না। দায়িত্ব নিয়ে সেবা সংস্থাগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে। নিয়মতি বিষয়গুলো মনিটরিং করতে হবে।

নাগরিক উদ্যোগের প্রধান উপদেষ্টা ও নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সুজন বিভিন্ন সময়ে দুর্ভোগ ও সমস্যা নিয়ে আন্দোলন করেছেন। কামাল তলিয়ে যাওয়ার তিন দিন পার হতে চললেও তিনি ঘটনাস্থলে না আসায় প্রশ্ন উঠেছে নাগরিকদের মাঝে।

এ বিষয়ে মনোযোগ আর্কষণ করলে তিনি বলেন, আমি খোঁজখবর রাখছি। কিন্তু ঘটনাস্থলে যাইনি। আমি গেলে কিছু সমস্যা হচ্ছে। তাই যাইনি, বুঝতে পারছেন।

নিয়মিত ভিজিট করতে হবে: এর আগে সাদিয়ার মৃত্যুর পর নগরের ঝুঁকিপূর্ণ খাল ও নালায় পড়ে দুর্ঘটনা রোধে চসিককে এক ট্রাক স্ল্যাব উপহার দিয়েছিলেন সাবেক মেয়র মনজুর আলম। তিনি বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচনে জয়ী হয়েছিলেন।

কামালের বিষয়ে জানতে চাইলে মনজু চট্টলার খবরকে বলেন, মেয়র সাহেব আরেকটু দায়িত্ব নিয়ে কাজ করলে এসব ঘটনা কমে আসবে। রুটিন ওয়ার্ক কাজের অংশ হিসেবে নিয়মিত ভিজিট করলে বিষয়গুলো সামনে চলে আসতো। যেখানে উন্মুক্ত খাল ও নালা খেতে পাবেন সেখানে সিটি করপোরেশন বা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাগাদা দিতে পারতেন। তিনি যত ভিজিট করবেন, অসঙ্গতিগুলো দেখতে পাবেন। সে অনুযায়ী কাজ করবেন। এসব ঘটনা কমিয়ে আনতে আমাদের উদ্যোগী হতে হবে।

গাইডলাইন মানছে না সংস্থাগুলো: নালা ও খালায় পড়ে মৃত্যুর পেছনে সেবা সংস্থাগুলো প্রকল্পের পূর্বে পর্যাপ্ত গাইডলাইন অনুসরণ করছে না বলে জানালেন নগর পরিকল্পনাবিদ ও প্রকৌশলী সুভাষ বড়–য়া। তিনি চট্টলার খবরকে বলেন, দিন দিন মানুষ মারা যাচ্ছে। কিন্তু সংস্থাগুলোর কোনো ভূক্ষেপ নেই। প্রকল্পের কাজ করছে কিন্তু রেলিং নেই, কোনো সীমানা চিহ্ন দেয়নি। কোনা গাইডলাইন মানছে না। জনসাধারণও চুপ করে আছে। কেনো হত্যা মামলা করছে না ?। আমরা আর কত বলব। এভাবে চলতে থাকলে দুর্ঘটনা কখনো কমবে না।

নাগরিকদের সচেতন হওয়ার আহ্বান: ফায়ার সার্ভিসের এক কর্মকর্তা সাংবাদিকদের জানান, নালার নিচ থেকে তিন স্তরের ময়লা স্তুপের কারণে ডুবুরি লকে উদ্ধার অভিযানে বেগ পেতে হচ্ছে। সেখানে অসংখ্য ককসিট ও পলিথিন আটকে আছে। এসব ময়লা সরিয়ে কামালকে উদ্ধারে চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন কর্মকর্তারা।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ড. মুহাম্মদ রাশিদুল হাসান চট্টলার খবরকে বলেন, অন্য শহরের সঙ্গে আমাদের ড্রেনেজের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য আলাদা। এখানকার নালা ও খালগুলো কর্ণফুলী নদীর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। এছাড়া বৃষ্টিতে পাহাড় থেকে এখানে বালু জমে যায়। পয়ঃনিস্কাশনের জন্য ব্যবহৃত খাল ও নালায় নাগরিকরা যদি যাবতীয় ময়লা ফেলে তাহলে সিটি করপোরেশন ভেঙে চারটা করলেও জলাবদ্ধতার সমস্যা দূর করা যাবে না। অন্যদিকে, সিটি করপোরেশনকেও ময়লা ফেলার জন্য স্থান নির্ধারণ করে দিতে হবে। প্রপার সিউরিটি মাথায় নিয়ে প্রকল্প শুরু করতে হবে। নাগরিকরা চাইলেই ড্রেনে ময়লা ফেলতে পারবে না। আমরা আশা করব নাগরিক দুর্ভোগ রোধে চসিক, সিডিএসহ অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো সমন্বয় করে কাজ করবে।

আরকে/এমকে/চখ

এই বিভাগের আরও খবর