chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

আমারতো তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়তে হবে!

নিজস্ব প্রতিবেদক: সহপাঠী জুয়েলের সঙ্গে গতকাল রাতে সাতরাজের শেষ কথা হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম মেসেঞ্জারে। কথা বলার এক পর্যায়ে সে বলেছিল, আমারতো পরীক্ষা চলছে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়তে হবে।

পাহাড়তলী ডিগ্রি কলেজ থেকে এবার বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন সাতরাজ উদ্দীন শাহিন (২০)। পড়াশোনার পাশাপাশি তিনি ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর (বিএনসিসির) ক্যাডেট আন্ডার অফিসার ছিলেন।

শনিবার (৪ ডিসেম্বর) বিএনসিসির সরঞ্জাম বুঝিয়ে দিতে সিএনজি অটোরিকশা চেপে কলেজে যাচ্ছিলেন এই শিক্ষার্থী। ঝাউতলা রেলক্রসিং আসার পর ওই সিএনজি অটোরিকশার সঙ্গে ট্রেনের ত্রিমুখী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। কে জানতো দুর্ঘটনায় চিরতরে ঘুমিয়ে পড়তে হবে সাতরাজ।

তার মৃত্যুর খবর পেয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ছুটে আসেন তার সহপাঠী-বন্ধুরা। বিএনসিসিতে কাজ করার সুবিধার্থে প্রেমিকা বৃষ্টির সঙ্গে পরিচয় হয় তার।  মৃত্যুর খবর পেয়ে বৃষ্টিও এসেছিলেন হাসপাতালে। সবাই নির্বাক। নিশ্চুপ। সান্ত্বনা দেওয়ার কেউ নেই। পরীক্ষার কথা বেমালুম ভুলে হাসপাতালের মর্গে ও জরুরি বিভাগে কান্নায় ভেঙে পড়েন সাতরাজের সহপাঠীরা। তারা কোনোভাবেই বন্ধুর মৃত্যু মেনে নিতে পারছে না।

সৌরভ নন্দী নামে এক সহপাঠী চট্টলার খবরকে বলেন, সকালে ঝাউতলা রেলক্রসিংয়ে দুর্ঘটনার কথা শুনেছিলাম। সবাই বলাবলি করছিল। কৌতুহলবশত বন্ধুরা মিলে ঘটনাস্থলে যাই। অথচ সেখানে কাপড়ে মোড়ানো অবস্থায় তার মরদেহ পড়ে ছিল আমরা কেউ জানতাম না। হঠাৎ খবর পাই আমাদের এক সহপাঠী মারা গেছে। কিন্তু তাকে চেনা যাচ্ছিল না। মুখ ক্ষত বিক্ষত হয়ে গিয়েছিল। পরে এক বন্ধু পরনের সবুজ রঙের শার্ট দেখে চিনতে পারে।

সৌরভ নন্দী আরও বলেন, মেধাবী ও সৃজনশীল কাজে সম্পৃক্ত ছিলেন সাতরাজ। পরিচিত-অপরিচিত সবার সাথে হাসি মুখে কথা বলতেন। চেষ্টা করতো সাহায্য করার। তার বন্ধুত্ব সম্পর্কগুলো আমরা মিস করবো।
ফজল বারির দুই ছেলের মধ্যে সাতরাজ বড়। ছোট ছেলে সায়েম এবার এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছেন। নগরের হামজারবাগ এলাকায় গাউসিয়া সোসাইটিতে মুদি দোকান করতেন ফজল।

ছেলের মৃত্যু শোকে ফজলে বারি কান্না করবেন এমন সুযোগও নেই। থানা, মর্গের আনুষ্ঠিকতা আর দাফনের কাজে তাকে দ্বিগবেদিক ছুটাছুটি করতে হচ্ছিল। তার চোখের কোনে খেলা করছে জল।
এক ফাঁকে তিনি চট্টলার খবরকে বলেন, আমার বুকের ধন চলে গেছে। আমি বাঁচব কারে নিয়ে।

আরকে/চখ

এই বিভাগের আরও খবর