তিন কারণে মৃত্যু-সংক্রমণ বাড়ছে উপজেলাগুলোতে
শীর্ষে হাটহাজারী
নিজস্ব প্রতিবেদক: চট্টগ্রামে করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতির উন্নতি হলেও, কমছে না মৃত্যুর সংখ্যা। চলতি মাসের সোমবার (৬ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত গড়ে মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ৪ জন। সে হিসেবে গত ৬ দিনে মারা গেছেন ২৪ জন রোগী। মৃত্যুর হার নগর ছাড়িয়ে এগিয়ে রয়েছে উপজেলায়।
গত বছরের ১১ এপ্রিল চট্টগ্রামে প্রথম করোনা আক্রান্ত হন এক রোগী। বিভিন্ন সময়ে উপজেলাগুলোতে মৃত্যু ও শনাক্তের হার ঊর্ধ্বমুখী ছিল । চলতি সেপ্টেম্বরে চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়র প্রাপ্ত তথ্য মতে, মৃত্যু ও শনাক্তের শীর্ষে রয়েছে হাটহাজারী উপজেলা। উপজেলাটিতে গত জুলাইয়ে ডেঙ্গুর রোগী শনাক্তের কথাও জানিয়েছিল স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা।
তথ্য পর্যালেচনায় দেখা দেয়, গতকাল রোববার পর্যন্ত হাটহাজারীতে করোনায় শনাক্ত হয়েছেন ৫ হাজার ৩২৪ জন। মারা গেছেন ১০৮ জন রোগী। এর সঙ্গে গত ২৪ ঘণ্টার তথ্য সংযুক্ত করলে সংক্রমণের সংখ্যা আরও বাড়বে। এরপর ২ হাজার ৭৪৩ জন রোগী নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ফটিকছড়ি উপজেলা। সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী থাকায় গত ২৩ জুন উপজেলাটি এক সপ্তাহের লকডাউনের আওতায় ছিল। তৃতীয় অবস্থানে থাকা রাউজান উপজেলায় সনাক্ত হয়েছে ৩ হাজার ৬৫৬ জন, মারা গেছেন ৫৮ জন।
অপরদিকে মৃত্যুর সংখ্যায় নগরের এগিয়ে আছে হালিশহর। এখন পর্যন্ত ওই এলাকায় ৯৪ জন করোনায় সংক্রমিত হন। কোতেয়ালী এলাকা ৫৯ রোগী নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। ৫৭ জন মৃত্যু নিয়ে তৃতীয়তে চান্দগাঁও এলাকা।
সর্বশেষ গত ২৪ ঘণ্টায় ৫ জন করোনা রোগীর মৃত্যুর মধ্যে ৪ জন বিভিন্ন উপজেলার। এছাড়া ৫ সেপ্টেম্বর ৫ জন, ৩ সেপ্টেম্বর ২ জনের মধ্যে ১ জন, ২ সেপ্টেম্বর ৫ জনের মধ্যে ২ জন, ১ সেপ্টেম্বর ৫ জন করোনা রোগীর মধ্যে ৪ জন করোনায় মারা গেছেন।
গত শনিবার (৪ সেপ্টেম্বর) উপজেলায় মৃত্যু না থাকলেও নগরে মারা গেছে ২ জন রোগী। উপজেলার মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার পেছনে তিনটি কারণ তুলে ধরেছেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রফিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেজ (বিআইটিআইডি) হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মামুনুর রশীদ।
ভ্যাকসিন না নেওয়া, সচেতনতা ও স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষার বিষয়টি দায়ী করেছেন তিনি। ড. মামুন বলেন, উপজেলায় মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় নতুন বার্তা দিচ্ছে যে ভ্যাকসিন না নিলে আক্রান্ত ও মৃত্যু বাড়বে। কিন্তু আমরা দেখছি সরকার বিনামূল্যে ভ্যাকসিনের উদ্যোগ নিলেও গ্রামের মানুষ এটিকে আমলে নিচ্ছে না। করোনা নামে কোনো রোগ আছে এটি সেখানকার মানুষ আজও বিশ্বাস করতে চায় না। তারা ভ্যাকসিনকে উপহাস ভাবছে, এমনকি ভ্যাকসিন নেওয়া মানুষকে সামাজিকভাবে হেয় করছে। অবশ্যই দ্রুত সময়ের মধ্যে ভ্যাকসিন নিতে হবে। গ্রামাঞ্চলে স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষার বিষয়ে প্রথম থেকেই সচেতনতা বাড়াতে তাগিদ দিয়েছিলেন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু এখনও মানুষ মাস্ক পরছে না বলে জানালেন এই চিকিৎসক।
তিনি বলেন, ভ্যাকসিন প্রয়োগের পরও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা স্বাস্থ্যবিধি মানতে গুরুত্বরোপ করেছে। কিন্তু আমরা দেখছি ভ্যাকসিনের পর মানুষের গা ছাড়া ভাব। এতদিনও গ্রামের মানুষ মাস্কে মানানসই হতে পারেনি। সেখানে সরকারি-বেরসরকারিভাবে প্রচারণা ও পর্যাপ্ত কাউন্সিলিং করা হয়নি। তাদের ভুল ধারণাগুলো সংক্রমণ ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। সর্বশেষ কারণ হিসেবে নগরের সাথে গ্রামের স্বাস্থ্য সেবার বিষয়টি তুলে ধরেছেন ড. মামুনুর রশীদ।
তিনি বলেন, নগরের হাসপাতালগুলো মানুষের হাতের নাগালে, চাইলেই চিকিৎসা নিতে পারছে। ভ্যাকসিন সেন্টারগুলোর কাছে। কিন্তু গ্রামে স্বাস্থ্য ক্লিনিক ও হাসপাতালগুলো দূরে, সেবার মান নিয়েও প্রায় সময় প্রশ্ন উঠেছে। প্রাথমিক অবস্থায় এরা ফার্মেসী থেকে ওষুধ নেয়। কিন্তু তীব্র শ্বাসকষ্ট ভুগার পর হাসপাতালে ছুটছেন। যার কারণে অধিকাংশ রোগী মারা যান। প্রাথমিক অবস্থায় চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে সেবা নিতে হবে।
আরকে/জেএইচ/চখ