chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

লকডাউনে নগরবাসীর হালচাল

চট্টলার খবরের বিশেষ আয়োজন

এম.এ.মতিন (বিশেষ প্রতিনিধি) : বিশ্বব্যাপী এখন মহামারী কভিড-১৯ করোনা ভাইরাস আতংকে ভুগছে, কোথাও যেন করোনায় আক্রান্ত মৃত মিছিলের সারি, আবার কোথাও হোম কোয়ারান্টাইন।  সরকার ঘোষিত গত ৪ দিনে লকডাউনের পরিস্থিতির শিকার নগরবাসী অতিক্রম করছে। জনগণকে নিরাপদ ও ভাইরাস সংক্রামকমুক্ত করতে সরকারের কঠোরতার এই বিশেষ পদক্ষেপ। নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের খেটে খাওয়া কর্মমুখী মানুষের  জীবনযাত্রা অতীতের চেয়ে বর্তমানে তেমন ভাল কাটছেনা অনেকের সংসার জীবন। করোনায় প্রতিরোধ ঠেকাতে নিজেদের ভাগ্য যেন দেওয়ালে ঠেকলো এমন মন্তব্য করেছেন লক্মীপুর জেলার রায়পুর থানার চরপাতা ইউনিয়ের বাসিন্দা মুরাদের, তাঁর স্ত্রী একজন গৃহিনী নাম কামরুন নাহার বৃষ্টি, দুই সন্তান নিয়ে দীর্ঘ ৫ বৎসর যাবত ভাড়া বাসায় থাকেন ডবলমুরিং থানাধীন বংশালপাড়া এলাকায়, পার্শ্ববর্তী এলাকায় সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা চলে ২ সন্তানের, পেশায় তিনি একজন সিএন্ডএফ কর্মচারী। প্রতি মাসে বেতন পান ১৫ হাজার টাকার মতো।

প্রতিদিন কাজে যোগদান করলে এদিক সেদিক মিলে গড়ে ২০০/৩০০ টাকা ভাগ্য জুটতো তার। করোনায় প্রতিরোধে লকডাউনে গত ৪দিন ধরে তিনি কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। সংসারে স্ত্রী, সন্তানের দৈনন্দিন আবদার মিঠাতে তার কোন বিন্দুমাত্র কৃপনতা হয়নি। গত ৩/৪ দিনে আমার পক্ষে এ আবদার আর মিটাতে পারছিনা, তাদের চেহারার দেখে তাকালে নিজেকে যেন খুব ছোট মনে হয়, কি আর করবো? তারাও বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে ভালমন্দ বুঝতে পারছে। কোন প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হতে পারছেননা, রয়েছে প্রশাসনের কঠোর নিষেধাজ্ঞা।

সরেজমিনে একই চিত্র দেখা গেল, ফটিকছড়ির বাসিন্দা আলতাফের, সংসার নিয়ে ভাড়া বাসায় থাকেন আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকায়, তিনি একজন পোশাক শিল্পে কর্মরত সুপারভাইজার, বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে সরাসরি কথা হয় এই প্রতিবেদকের সাথে, আমরা খেটে খাওয়া শ্রমিক করোনায় প্রতিরোধে লকডাউনের আওতাভুক্ত। বাড়ির মালিক মাস শেষ হলেই ঘর ভাড়া, বিদ্যুৎ, গ্যাস বিল পরিশোধের জন্য দরজার কড়া নাড়তে থাকে। আলতাফ এই প্রতিবেদককে আক্ষেপ করে বলেন আমাদের মতো সাধারন মানুষ খাই আর না খাই যথাসময়ে ঘর ভাড়াতো পরিশোধ করতে হয়।

নগরীর আগ্রাবাদ বাণিজ্যিক এলাকা অফিস পাড়া খ্যাত বিভিন্ন ব্যাংকের দুয়ারে দুয়ারে গিয়ে কর্মকর্তাদের জুতা সেলাই আর পালিশ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করতে হতো ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর থানা কৃষ্ণনগর  ইউনিয়নের রামনগর গ্রামের বাসিন্দা জীবন পালের, থাকেন নগরীর মোগলটুলী বারকোয়াটার ইব্রাহীমের মেচ কোয়াটারে, সাথে আছেন আরও ৫জন। কথা হয় সরাসরি এই প্রতিবেদকের সাথে, যেখানে আমার দৈনিক আয় রোজগার হতো ৪শত হতে ৫শত টাকা পর্যন্ত, সেখানে করোনা ভাইরাসের কারণে আমার আয় মিলছে ৮০ টাকা থেকে ১০০ টাকার মতো। এ যেন নিয়মিত আসমান ভেঙ্গে মাথায় পড়ার মতো অবস্থা। অনেক সময় ব্যাংকের স্যারেরা আমাকে কিছু হালকা নাস্তাও দিতো খাওয়ার জন্য, দুপুর হলে এই হালকা নাস্তা দিয়ে এক গ্লাস পানি দিয়ে কোন রকমে এক বেলা পার হয়ে যেতো, এই পরিস্থিতির কারণে তাও বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। সামনে এভাবে চলতে থাকলে আমাদের মতো নিম্ন আয়ের লোকদের অনাহারে অর্ধাহারে থাকতে হবে।

নগরীর ব্যস্ততম এলাকা টাইগারপাস ফুটপাতের পাশে একাকী দাড়িয়ে থাকা মুখে মাস্ক পড়া ২৭ বছরের যুবক গ্রামের বাড়ি কুমিল্লা জেলার বুড়িচং থানা রাজাপুর ইউনিয়নের ভবেরমুড়া গ্রামের আবদুর রহিমের কথা হয় চট্টলার খবরের বিশেষ প্রতিনিধির সাথে, মুখে কালো আর নীরবতার ছাপ যেন রহিমকে দুশ্চিন্তা ফেলেছে। জানা গেলো তাঁর জীবন সংগ্রামের কথা, ১০নং রুটের পরিবহনের চাকুরী মেয়াদ মাত্র ৫মাস হেলপার রহিমের, যার দৈনিক আয় ৩শত ৫০ টাকা মাত্র, রাস্তায় গাড়ি চললেই ২বেলা খাওয়া দাওয়া হোটেলে চলে তার, গত ৪দিনে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সরকারের ঘোষিত কারণে সবকিছু যেন স্তব্ধ হয়ে গেলো তার জীবনে, সরকার গণপরিবহন ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে, তাই পেশায় হেলপার ছাড়া তার ১টাকাও ইনকামের বিকল্প কোন উপায় নেই বলে জানান।

এ রকম অনেক নিম্ন ও মধ্যবিত্ত বিভিন্ন শ্রেণী পেশার কর্মজীবি মানুষের আয় নিয়ে আগামী দিনের জন্য বড়ই দুশ্চিন্তা হয়ে দাড়িয়েছে। আমরা সাধারণ মানুষ মাত্র ৪দিন “লকডাউন” পরিস্থিতি অতিক্রম করেছি, সামনে বাকী যে কয়টা দিন পড়ে আছে দেশের কি পরিস্থিতি হবে তা নিয়ে আমরা খুবই শংকিত আছি, একদিকে যেমন দৈনন্দিন বাসা ভাড়ার খরচ আর অন্যদিকে গ্রামের বাড়ির খরচ দুইদিক সংসার টানার মতো বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে এ যেন নানা প্রতিকূলতার মধ্যে পড়লাম, কিভাবে সংসারের হাল টানবো তা এখন থেকে দুশ্চিন্তায় পড়ে গেছি। মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করছি আগামীতে সামনের পরিস্থিতি যেন ভালই কাটে এই কামনা রইলো।

এই বিভাগের আরও খবর