শরিয়তে রোজার নিয়তের গুরুত্ব অপরিসীম
নিয়ত আরবি শব্দ। বাংলা অর্থ হলো—ইচ্ছা করা, মনস্থ করা বা সঙ্কল্প করা। নিয়ত শব্দটি বাংলা ভাষায়ও ব্যাপকভাবে প্রচলিত। পরিভাষামতে, কোনো আমল-ইবাদত বা কোনো কাজ সম্পাদন করার ইচ্ছা বা সঙ্কল্প করাকে নিয়ত বলে। ইসলামি শরিয়তে নিয়তের গুরুত্ব অপরিসীম।
কোনো ব্যক্তির আমল আল্লাহর কাছে ততক্ষণ পর্যন্ত কবুল হয় না, যতক্ষণ পর্যন্ত তার নিয়ত সঠিক হয় না। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘প্রত্যেক ব্যক্তির আমল নিয়তের ওপর নির্ভরশীল।’ (বুখারি, ১)
রমজানের রোজা রাখার জন্য নিয়ত করা ফরজ। নিয়ত না করলে রোজা শুদ্ধ হবে না। এ ছাড়া ইবাদতের সওয়াবও নিয়তের ওপর নির্ভরশীল। সুতরাং পবিত্র রমজানের রোজা রাখার ক্ষেত্রে নিয়ত একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
প্রশ্ন হলো, রোজা রাখার জন্য অন্তরে অন্তরে সঙ্কল্প করলেই কি নিয়ত হবে, নাকি মুখে আরবি বা অন্য কোনো ভাষায় বাক্য উচ্চারণ করে নিয়ত করতে হবে? এ ব্যাপারে মোটামুটিভাবে সব ফিকাহবিদ ও ইসলামি স্কলার একমত, রমজানের রোজা পালনের ক্ষেত্রে মুখে উচ্চারণ করে আরবি বা অন্য কোনো ভাষায় নিয়তবাক্য পাঠ করতে হবে না। মনে মনে বা অন্তরে ইচ্ছা পোষণ করা বা সঙ্কল্প লালন করাই নিয়ত হিসেবে পরিগণিত হবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ফজরের আগে রোজা রাখার নিয়ত করবে না, তার রোজা (পূর্ণাঙ্গ) হবে না।’ (আবু দাউদ, ২৪৫৪)
নিয়ত সম্পর্কিত জরুরি কিছু মাসয়ালা সবার জেনে রাখা উচিত—রমজানের প্রতিদিনই রোজার নিয়ত করতে হবে। এক দিনের নিয়ত পুরো রমজানের রোজার জন্য যথেষ্ট হবে না। (ইলমুল ফিকাহ, ৩/১৮)
রমজানুল মোবারকে মনে মনে শুধু এটুকু ভাবলেই নিয়ত হয়ে যাবে, আমি আজ রোজা রাখব। (বেহেশতি জেওর, ৩/৩)
নফল রোজা, নির্দিষ্ট মানতের রোজা এবং রমজানের রোজাসমূহের নিয়ত রাতের বেলা অথবা শরিয়তের ঘোষিত অর্ধদিবস পর্যন্ত করা যাবে। (ফাতাওয়া দারুল উলুম, ৬/৩৪৬)
রাতে সাহরি খাওয়াটাও রোজার নিয়ত বলে গণ্য হবে। তবে সাহরি খাওয়ার সময় রোজা রাখার ইচ্ছা না থাকলে, তা নিয়ত বলে গণ্য হবে না। (কিতাবুল ফিকাহ, ১/৮৮১)
রোজা রাখার ইচ্ছা বা নিয়ত ছাড়া সারা দিন উপোস থাকলেও তা রোজা বলে গণ্য হবে না। (বেহেশতি জেওর, ৩/৩)
অনেকে রাতের শুরুতে বা মাঝামাঝি সময়ে সাহরি খেয়ে শুয়ে পড়েন এবং মনে করেন, রোজার নিয়ত করার পর বা সাহরি খেয়ে ফেলার পর আর কিছু পানাহার করা যাবে না। এমন ধারণা সঠিক নয়। সুবহে সাদিক উদয় না হওয়া পর্যন্ত পানাহার করা যাবে। (বেহেশতি জেওর, ৩/৩)
মনের ইচ্ছার নামই নিয়ত। সুনির্দিষ্টভাবে বিশেষ কোনো বাক্য মুখে উচ্চারণ করা জরুরি নয়। (ফাতাওয়া দারুল উলুম, ৬/৪৪৬)