chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

রোজার আগেই দর্জির বাড়িতে দিনরাত ব্যস্ততা

পছন্দের কাপড়ে বাহারি নকশা ফুটাতে ভিড় লেইস,বোতাম,ইয়োক দোকানে

মহল্লার অলিগলি থেকে বিপণিবিতানের দর্জির বাড়িতে এখন দিনরাত ব্যস্ততা।নিজের পছন্দ মতো পোশাক তৈরিতে নারীরা ছুটছেন দর্জি দোকান গুলতে।পিছিয়ে নেই পুরুষরাও। চাপ বাড়লে ১০ রমজানের পর অর্ডার না নেয়ার কথা জানালেন কারিগররা। এলাকাভেদে মজুরি ৫০০ থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত রাখা হচ্ছে।

সুই আর সুতার মেলবন্ধনে দর্জির বাড়ি এখন সরগরম। সঠিক মাপ আর নকশা নিয়ে দিনরাত আলোচনা চলছে। পাঞ্জাবীতে বাহারি নকশায় ভিন্নতা রেখে তৈরি করার ক্ষেত্রে  পুরাতন কারিগরদের চাহিদা বেশি।
আসকার  দীঘির পাড়ে  এক গলিতে ১০ বছর ধরে দর্জির কাজ করা সাহারা খাতুন তিনি বলেন, ‘ছয় বা সাত রোজা পর্যন্ত অর্ডার নেই। তারপর আর নিতে পারি না। এখন একদিনে ২০ সেট কাপড় বানানো হয়। রোজায় আমরা কমপক্ষে ৩০ থেকে ৩৫ সেট কাপড় সেলাইয়ের চেষ্টা করি।’

নগরীর কয়েকটি দর্জি দোকান ঘুরে গিয়ে দেখা যায়, বিরামহীনভাবে চলছে সেলাই যন্ত্রের খটখট শব্দ। দম ফেলার ফুরসত নেই। সেই সাথে বছরের এই সময়টাতে ভাগ্যের চাকার গতি বাড়াতেই দিন-রাত এক করে কাজ চলছেন সেলাই কারিগররা।

সুন্দর একটি সালোয়ার কামিজে নিজেকে ফুটিয়ে তুলতে যেমনি প্রয়োজন রুচিশীল নকশার । আর সকলের রুচির কথা মাথায় রেখেই সুনিপণ হাতে কুর্তি, সালোয়ার-কামিজ বানানোর দায়িত্বটা নিজেদের কাধে তুলে নিয়েছেন সেলাই কারিগররা।হালের ফ্যাশনে পিছিয়ে নেই ছেলেরাও। নিজের পছন্দ অনুযায়ী কাপড় বাছাইয়ের পর নকশায় ভিন্নতা আনতে তারাও ছুটছেন দর্জির কাছে।
দিন বদলের সাথে সাথে মানুষের রুচিবোধের পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দর্জিরা যেমন এগিয়েছে তেমনি পোশাকের নকশায় এসেছে পাশ্চাত্য সংস্কৃতি। মূলত পোশাকের গলা, হাতা আর ঝুলের পরিবর্তন বদলায় ফ্যাশনের সঙ্গে। আর নকশা এবং কাপড়ের মানভেদে নির্ধারিত হয় মজুরী।কারিগররা বলেন, ‘আগে আমরা একটা নির্দিষ্ট ক্যাটালগের দেখে পোশাকের ডিজাইন তৈরি করতাম। এখন আসলে নিজেদের চিন্তা চেতনা থেকে নতুন নতুন ডিজাইনে পোশাকের ডিজাইন তৈরি করি।

পছন্দের কাপড়ে বাহারি নকশা  নিজের ডিজাইন করা পোষাক পরতে কার না ভালো লাগে! নানা রকম কারুকার্যে সুসজ্জিত পোষাক গুলো ঈদের মত উৎসব গুলোতে যেন আনন্দের ষোল কলা পূর্ণ করে দেয় লেস , ফিতা, ব্লক, কালার, এমব্রয়ডারী, ইয়োক, পুঁতি, চুমকি, পাত্তি, স্টোন,কাট ওয়ার্ক,হ্যান্ড পেইন্ট,স্ক্রীন পেইন্ট এবং আরো নানাবিধ নকশায় সাজানো হয় পোশাক গুলোকে।’আর এইসব জিনিস পছন্দ  করে নিতে নগরীর রেয়াজ উদ্দীন বাজার পাইকারি মাকেটে ছুটছেন ক্রেতারা।

এবার ঈদ বাজারে টেইলার্সে প্রতি পিস প্যান্ট সেলাই ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা, শার্ট ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা, পাঞ্জাবি ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা, পায়জানা ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা, লেহেঙ্গা ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা, থ্রি-পিছ প্রকারভেদ অনুযায়ী ৪০০ থেকে ৮০০ টাকা, জিপসি ৭০০ থেকে ৯০০ টাকা, ব্লাউজ, পেটিকোট ২০০ থেকে ৩০০ টাকা, বাচ্চাদের পোশাক ডিজাইনের উপর নির্ভর করে নেওয়া হয় ২০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত। এছাড়া গর্জিয়াস সেলোয়ারকামিজের মজুরি নেয়া হয় ৮০০ থেকে ১২শ টাকা পর্যন্ত। তবে গত বছরের তুলনায় এবার পোশাক তৈরির মজুরি বেড়েছে বলে জানা গেছে। তবে  মার্কেটের থেকে পাড়া মহল্লায় দাম অনেকটাই কম।

এক কারিগর বলেন, আগে যে কাজটা ৫০-৬০ টাকায় করতাম সেটি এখন ৩০০-৪০০টাকায় করে থাকি। তবে পোশাকের ওপর এর দাম কমবেশি হয়ে থাকে।

কিছু  এলাকায় দোকানে  গজ কাপড়ের  পসরা সাজানো থাকে   আর সেলাইয়ের কাজ করা হয় একসাথেই, তাই কাপড় নিয়ে অন্য কোথাও দৌড়ঝাঁপের দরকার পড়ে না ক্রেতাদের। তবে এখানে মজুরি শুরু হয় ১ হাজার থেকে যা সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত গড়ায়।

তাড়াহুড়োতে কাপড় সেলাই অনেক সময় ভুল হয়; যা ঈদের আনন্দকে নষ্ট করতে পারে। সেই চিন্তা থেকেই অনেকে আগেভাগে বানিয়ে ফেলছেন তাদের পছন্দের জামা-কাপড়।

দর্জির বাড়ির এই ব্যস্ততাই জানান দিচ্ছে যে সামনে ঈদ আসছে। এই ব্যস্ততা চলবে চাঁদরাত পর্যন্ত।

চখ/জুঈম

এই বিভাগের আরও খবর