chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

চট্টগ্রামে সরকারি চোরাই চাল-গম খালাস বন্ধ, মওজুদ খাগড়াছড়িতে!

চট্টগ্রামের চাক্তাই ও পাহাড়তলীতে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার ধরপাকড়ে গত তিনদিন ধরে সরকারি চোরাই চাল-গম খালাস বন্ধ রয়েছে।
গত রোববার সকাল সাড়ে দশটার দিকে চাকতাই ফায়ার সার্ভিস সংলগ্ন আরাফাত ফ্লাওয়ার মিলসে খালাসের সময় ২০ টন সরকারি গমসহ একটি ট্রাক আটক করে সিএমপির বাকলিয়া থানা পুলিশ। এরপরই কালোবাজারি সিন্ডিকেটের মধ্যে আতংক ছড়িয়ে পড়ে। এসব এলাকায় এখন আর চাল-গম খালাসে সাহস পাচ্ছে না কালোবাজারি ও চোরাই সিন্ডিকেট।

তবে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানান, খাগড়াছড়ি জেলার মাটিরাঙার বিভিন্ন ইউনিয়নের গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দাদের মাঝে বিতরণের প্রায় দুইশত মেট্রিক টন সরকারি গম ওই উপজেলার তবলছড়ি বাজারের এক ব্যবসায়ি গুদামজাত করেছেন। এসব গম গুচ্ছগ্রামের কার্ডধারী অধিবাসীদের মাঝে বিতরণের নিয়ম থাকলেও সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যানরা বিক্রি করে দিয়েছেন কালোবাজারি সিন্ডিকেটকে। যা সরকারি লোগো সংযুক্ত বস্তা পরিবর্তন করে আগামী সপ্তায় একটি সংস্থার ডিও’র প্রত্যয়নপত্রের আড়ালে পাচারের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে।

মাটিরাঙা তবলছড়ি এলএসডির (লোকাল স্টোরেজ ডিপো) ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. জাহেদ জানান, তিন মাস অন্তর গুচ্ছগ্রামের অধিবাসীদের জন্য সরকারি বরাদ্দকৃত গম-চাল বরাদ্দপত্রমূলে সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যানদের বুঝিয়ে দেওয়া হয়। এরপর তারা কি করেন তা আমাদের আর জানা নেই।

খাগড়াছড়ির খাদ্যবিভাগের সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা জানান, মাটিরাঙা উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের গুচ্ছগ্রামের উপকারভোগীদের মাঝে বিতরণের সরকারি চাল-গমের ডিও (বরাদ্দপত্র) সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যানরা দীর্ঘদিন ধরে কালোবাজারিদের কাছে বিক্রি করে আসছে। এতদিন চট্টগ্রামের হালিশহর-দেওয়ানহাট দুই সিএসডি ও পতেঙ্গা সাইলো থেকে প্রোগ্রাম নিয়ে কোনো পরিবহন বের হলেই কালোবাজারিরা সেখান থেকেই তা ভাগিয়ে নিতেন। তবে এখন চট্টগ্রামের আঞ্চলিক খাদ্যনিয়ন্ত্রকের খাদ্যপরিবহনে কড়াকড়িতে তা আর পারছেন না।

এদিকে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাও চট্টগ্রামে ধরপাকড় করায় কিছুটা বেকায়দায় রয়েছে কারোবাজারিরা। কিন্তু গুচ্ছগ্রামের অধিবাসীদের বিনামূল্যে বিতরণের চাল-গম চেয়ারম্যানরা বিক্রি এখনও বন্ধ করেনি।

মাটিরাঙার একটি সূত্র জানান, গত তিন দিনে তবলছড়ি বাজারের একাধিক গুদামে অন্তত দুইশত মেট্রিক টন গম গুদামজাত করেছেন এক ব্যবসায়ি। এসব গম গুচ্ছগ্রামের কার্ডধারী অধিবাসীদের মাঝে বিতরণের নিয়ম থাকলেও চেয়ারম্যানরা তা না করে কালোবাজরে বিক্রি দিয়েছে। আগামী মাসের শুরুতে স্থানীয় আইনশৃংখলা বাহিনীর বরাদ্দের চাল-গম কিনে নিতে দৌড়ঝাপ শুরু করেছে এসব ব্যবসায়ীরা। সেই ডিও’র প্রত্যয়নপত্র দেখিয়ে সরকারি এসব চোরাই গম-চাল চট্টগ্রামের পাচারের জন্য প্রস্তত করা হচ্ছে।

অভিযোগ রয়েছে, সরকারি খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি, ভিজিএফ, ভিজিডি, গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দাদের রেশন ও রিলিফের চাল-গম সরকারি গুদাম থেকে সরাসরি বিক্রি করে দেওয়া হয়। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও কর্মকর্তারা যোগসাজশে এসব চাল-গম বিক্রি করে। যা পরে সরকারের আইনপ্রয়োগকারী ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের রেশনসহ বিভিন্ন ডিও’র প্রত্যয়নপত্র দেখিয়ে এসব চাল-গম চট্টগ্রামের চাকতাই, পাহাড়তলী ও ফটিকছড়ির শান্তিরহাট এলাকায় বিভিন্ন গুদামে পাচার করা হয়।

এই বিষয়ে খাগড়াছড়ির সচেতন মহল জানান, সচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য সরকারের আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের আরও সোচ্ছার হতে হবে। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টরা চাইলে সরকারি ডিও নিশ্চিত করণে নির্ধারিত ডিও’র ফটোকপি, ব্যবসায়ীর এনআইডি, পরিবহনের নাম্বার ও চালকের নাম এবং মোবাইল নাম্বার সহ পরিবহনকৃত খাদ্যের পরিমান এবং তারিখের তথ্য চেকপোষ্ট গুলোতে সংরক্ষণ করলেও কোনো ব্যক্তি সাধারন মানুষের ভাগ্য নিয়ে আর ছিনিমিনির সুযোগ পাবে না।

এই বিভাগের আরও খবর