chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

চট্টগ্রামে ৫১তম জশনে জুলুছে ঈদে মিলাদুন্নবী (স.) ২৮ সেপ্টেম্বর

পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (স.) উপলক্ষে আগামী বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর)  ১২ রবিউল আউয়াল ১৪৪৫ হিজরি আনজুমানে রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনায় বন্দর নগরী চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বিশ্বের সর্ববৃহৎ ৫১তম জশনে জুলুছে ঈদে মিলাদুন্নবী (স.)।

বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবর এস রহমান হলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আঞ্জুমানের সেক্রেটারি জেনারেল আলহাজ্ব আনোয়ার হোসেন  উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, ১২ রবিউল আউয়াল সমগ্র পৃথিবীতে পালিত হবে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। বাংলাদেশেও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে দিনটিকে যথাযথ মর্যাদায় উদযাপন করবে। এমনকি দেশের সরকারি প্রতিষ্ঠান এবং বিদেশের বাংলাদেশ দূতাবাসগুলোও এই দিন জাতীয় পতাকা উত্তোলন সহ বিভিন্ন কর্মসূচী পালনের বিষয়ে প্রজ্ঞাপন রয়েছে। দিনটি যুগ যুগ ধরে সাধারণ ছুটিও বটে। তবে, বাংলাদেশ সহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে উদযাপিত মিলাদুন্নবী (দ.) মাহফিলের প্রধান আকর্ষণ হলো ‘জশনে জুলুছ’ নামক বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা,যা দিন দিন সমগ্র বিশ্বে জনপ্রিয়তার শীর্ষে রয়েছে।

রবিউল আউয়াল মাসে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ইতোমধ্যেই শত শত স্বাগত ভুলস বের করেছে এবং মাসব্যাপী হতে থাকবে। তবে,আমরা সবাই জানি যে,শুধু বাংলাদেশ নয়,সমগ্র বিশ্বের সবচেয়ে বড় জশনে জুলুস টি প্রতিবছর ১২ রবিউল আউয়াল তারিখে বের হয় চট্টগ্রামে। এর আয়োজক সংস্থা হিসেবে কাজ করছে আনজুমান এ রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্ট এবং সার্বিক সহযোগিতায় দায়িত্ব পালন করে গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশ। শুধু তাই নয়,এটিই বাংলাদেশের মাটিতে প্রথম সূচনাকারী জশনে জুলুছে ঈদে মিলাদুন্নবী।

সেক্রেটারি জেনারেল আরও বলেন, ১৯৭৪ সনে, ১৩৯৪ হিজরি ১২ রবিউল আউয়াল থেকে এর সূচনা হয় রাসুলে পাক সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অধস্তন বংশধর,গাউসে জামান আল্লামা সৈয়্যদ মুহাম্মাদ তৈয়্যব শাহ (রহ.)’র দিকনির্দেশনা অনুসরণ করে। তাঁর নির্দেশনা অনুসারে চট্টগ্রামের বন্ধুয়ারদীঘি পাড় খানকাহ্ শরীফ থেকে আনজুমানের তৎকালীন সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট আলহাজ্ব নূর মোহাম্মদ আল কাদেরীর নেতৃত্বে যে জুলুসটি চট্টগ্রাম জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলীয়া মাদ্রাসা ময়দানে এসে সমাপ্ত হয় সেটিই বাংলাদেশে বর্তমান অনুষ্ঠিত হাজার হাজার জশনে জুলুসের মডেল এবং অনুপ্রেরণা। অবশ্য একই দিন, ঢাকাস্থ আনজুমানে রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া কর্তৃপক্ষও পুরান ঢাকার কায়েতটুলী খানকাহ শরীফ থেকে জশনে জুলুছ বের করেছিল। যা হোক,বাংলাদেশ সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জশনে জুলুছ’র প্রতিষ্ঠাতা রুপকার আল্লামা তৈয়্যব শাহ্ হুজুর স্বয়ং ১৯৭৬ সনে চট্টগ্রামের জশনে জুলুছে নেতৃত্ব দেন এবং তাঁর নেতৃত্বের প্রভাবে জশনে জুলুছ পায় ব্যাপক জনপ্রিয়তা। এভাবে ১৯৭৬ থেকে ১৯৮৬ পর্যন্ত গাউসে জামান তৈয়্যব শাহ্ হুজুরের নেতৃত্বে জশনে জুলুস জনসমুদ্রে রূপ নিতে থাকে। ১৯৮৭ থেকে তিনি বাংলাদেশে আর আসেননি। এরপর থেকে জশনে জুলুসের নেতৃত্বে আসেন তাঁরই সাজ্জাদানশীন হুজুর কেবলা সৈয়্যদ মুহাম্মাদ তাহের শাহ্ মাদ্দাজিলুহুল আলী। মাঝখানে কয়েকবার ছাড়া অন্তত ৩৪ টি জুলুসের নেতৃত্বে ছিলেন হযরত আল্লামা তাহের শাহ্ হুজুর। এবার হবে তাঁর ৩৫ তম নেতৃত্ব, এবং এবারের জুলুসটি হবে ৫১ তম আয়োজন। ইনশাআল্লাহ,এবারও গতবারের ৫০ তম জুলুসের মতো,তাঁর সাথে থাকবেন দরবারে আলীয়া কাদেরিয়া সিরিকোট শরীফের অপর সাজ্জাদানশীন পীর আল্লামা সৈয়্যদ মুহাম্মাদ সাবির শাহ্ মাদ্দাজিলুহুল আলী এবং শাহজাদা আল্লামা সৈয়্যদ মুহাম্মাদ কাসেম শাহ্।

চট্টগ্রামের এই জশনে জুলুছ অন্যতম সাক্ষী। বিগত বছরগুলোতে,দেশের গণমাধ্যমের ভাষা অনুসারে এতে প্রায় অর্ধকোটি মানুষের সমাগম হয়েছে। ইনশাআল্লাহ, এ বছর উপস্থিতি সংখ্যা সব কিছু ঠিক থাকলে আরো বাড়বে আশা করি। কারণ,এটি এখন চট্টগ্রাম সহ বিশ্বঐতিহ্যে রূপ নিয়েছে। চট্টগ্রামের ইতিহাসে জশনে জুলুছে এক অবিচ্ছেদ্য কালচারের বহিঃপ্রকাশ। এখানকার মানুষ এক জুলুছ শেষ হতেই পরবর্তী বছরের জুলুছের অপেক্ষায় থাকে। সাধারণ মানুষ ও আশেকে রাসুলরা চায়,এটি শুধু চট্টগ্রামের ঐতিহ্য হিসেবে নয় বরং বিশ্ব ঐতিহ্য world heritage হিসেবে স্থান পাক। গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ডে এর জায়গা হলে তা চট্টগ্রাম তথা বাংলাদেশকেও সম্মানিত করবে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন,জামেয়া আহমদিয়া সুন্নীয়া আলিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মুফতি আব্দুল আলীম রিজভী, আঞ্জুমান ট্রাস্টের এডিশনাল সেক্রেটারি শামসুদ্দিন,ট্রাস্টের সাংগঠনিক সম্পাদক মাহাবুবুল আলম,অর্থ সম্পাদক এনামুল হক বাচ্চু,গাউছিয়া কমিটি বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় চেয়ারম্যান পেয়ার মোহাম্মদ কমিশনার, জামেয়া আহমাদিয়া সুন্নীয়া আলিয়া মাদ্রাসার পর্ষদ চেয়ারম্যান আবু ইয়াহিয়া মোহাম্মদ মহসিন,গাউছিয়া কমিটি বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব এডভোকেট মোছাহেব উদ্দিন বখতিয়ার ও গাউছিয়া কমিটি চট্টগ্রাম মহানগরের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ্।

জশনে জুলুছে ঈদ-এ মিলাদুন্নবী ২০২৩ এর প্রদক্ষিণের রাস্তাসমূহ…

হুজুর কেবলা আল্লামা সৈয়্যদ মুহাম্মদ তাহের শাহ (মাঃ জিঃ আঃ)’র নেতৃত্বে,প্রধান মেহমান আল্লামা পীর সৈয়্যদ মুহাম্মদ সাবির শাহ (মাঃ জিঃ আঃ) ও বিশেষ মেহমান সাহেবজাদা আল্লামা সৈয়্যদ মুহাম্মদ কাসিম শাহ (মাঃ জিঃ আঃ)’র অংশগ্রহণে পবিত্র ঈদ-এ-মিলাদুন্নবী (দ.)’র জশনে জুলুস ২০২৩ ইং সকাল ৮টায় চট্টগ্রাম ষোলশহরস্থ জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া কামিল মাদ্রাসা সংলগ্ন আলমগীর খানকা-এ কাদেরিয়া সৈয়্যদিয়া তৈয়্যবিয়া হতে আরম্ভ হয়ে বিবিরহাট, মুরাদপুর,মির্জারপুল,কাতালগঞ্জ হয়ে অলিখা মসজিদ চকবাজার,প্যারেড ময়দানের পশ্চিম পার্শ্ব হয়ে চট্টগ্রাম কলেজ,গণি বেকারী (ডানে মোড়),খাস্তগীর স্কুল (ডানে মোড়),শহীদ সাইফুদ্দীন খালেদ রোড,আসকার দিঘী, কাজীর দেউরী (ডানে মোড়),আলমাস (বামে মোড়) ওয়াসা (ডানে মোড়),জিইসি, ২ নম্বর গেইট প্রদক্ষিণ পূর্বক পুনরায় মুরাদপুর, বিবিরহাট হয়ে জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া কামিল মাদরাসা সংলগ্ন জুলুস ময়দানে জমায়েত দুপুর ১২টায় মাহফিল এবং মাহফিল শেষে নামাজে যোহর ও দোয়া অনুষ্ঠিত হবে।

রাজধানী ঢাকায় জুলুছ ৯ রবিউল আউয়াল, ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার,সকাল ৯ টায়  মুহাম্মাদপুর জয়েন্ট কোয়ার্টারস্থ কাদেরিয়া তৈয়বিয়া আলীয়া মাদ্রাসা হতে আরম হবে।

এই বিভাগের আরও খবর