বাহক থেকে মাদকের ডিলার, নেপথ্যে ক্যাডার ট্রেকিং সিস্টেম
চট্টগ্রাম জেলার ফটিকছড়ি উপজেলার বাসিন্দা আবুল হোসেন। ২০১৬ সালে ইয়াবাসহ আবুল হোসেনকে গ্রেফতার করে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি থানা পুলিশ। শুরুতে ইয়াবার বাহক ‘ক্যারিয়ার’ হিসেবে মাদকের অন্ধকার জগতে প্রবেশ করলেও বর্তমানে তিনি উত্তর চট্টগ্রামের মাদকের বড় ডিলারদের একজন বলে জানিয়েছে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের বিভিন্ন থানায় রয়েছে কমপক্ষে ৮টি মামলা। তদন্তকারীরা বলছেন শুধু আবুল হোসেন নন, চট্টগ্রাম কক্সবাজারের সাড়ে তিন শতাধিক মাদকের ক্যারিয়ার এখন হয়েছেন মাদক মাফিয়া হিসেবে। তারাই এখন নিয়ন্ত্রণ করছে মাদকের চক্র।
আইনশৃঙ্খলা ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম নগরী এবং জেলায় তালিকাভুক্ত ছোট বড় মাদক ব্যবসায়ী রয়েছেন দুই হাজারের মত। তাদের মধ্যে খুচরা মাদক ব্যবসায়ী হচ্ছে প্রায় দেড় হাজার। এসব মাদক ব্যবসায়ীদের মধ্যে এক হাজার জনের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। প্রায় সাড়ে তিনশ জনের বিরুদ্ধে রয়েছে কমপক্ষে পাঁচটি মামলা। যারা ক্যারিয়ার হিসেবে মাদকের অন্ধকার জগতে প্রবেশ করলেও পরবর্তিতে মাদকের বড় ডিলার কিংবা মাফিয়া হিসেবে নিয়ন্ত্রণ করছেন মাদকের অন্ধকার জগত।
একাধিক নাম অনিচ্ছুক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, জীবন ধারণের জন্য মাদক বাহক হিসেবে কাজ করে। গ্রেফতার হওয়ার পরে কারাগার থেকে পুনরায় মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ে। মামলার বিচার কার্য দীর্ঘ সময় চলার কারণে মামলার খরচ চালাতে পরবর্তিতে তারা রূপ নেয় মাদক ব্যবসায়ীতে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও বিশিষ্ট
সমাজবিজ্ঞানী অধ্যাপক ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, কোন ব্যক্তি অপরাধীদের ‘ক্যাডার ট্রেকিং’ সিস্টেমে পড়লে আর ওই সার্কেল থেকে বের হতে পারে না। এ ক্যাডার ট্রেকিং সিস্টেমের কারণেই ক্যারিয়ারা পরিণত হচ্ছে মাদক মাফিয়ায়। বিভিন্ন দেশের অপরাধী চক্রগুলো সিস্টেম অনুসরণ করে দল ভারি করে। দেশের অপরাধী চক্রগুলোও এ পদ্ধতি অনুসরণ করছে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি ও পুলিশ সায়েন্স বিভাগের চেয়ারম্যান সহকারী অধ্যাপক মো. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, মাদকের মামলা বেড়ে যাওয়া মানে মাদকসেবীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়া। মাদক নিয়ন্ত্রণে যে ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে, সেটা সঠিকভাবে হয়নি। সে ক্ষেত্রে আমরা ব্যর্থ হয়েছি। মাদকের মামলায় শাস্তি দৃশ্যমান হলে মাদকের ডিমান্ড হ্রাস ও সাপ্লাই কমে যেত। পরিকল্পনা করে মাদকসেবীদের দমনের চেয়ে মাদক নিয়ন্ত্রণের দিকে গুরুত্ব দিতে হবে।
মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক ও সাবেক চট্টগ্রাম বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক মজিবুর রহমান পাটোয়ারী বলেন, মাদক ক্যারিয়ার থেকে মাদক ডিলারে পরিণত হওয়ার সুনির্দিষ্ট সংখ্যা নেই। কিন্তু এই সংখ্যা নেহায়াত কম নয়। কিছু কিছু মাদক ব্যবসায়ী ক্যারিয়ার হিসেবে মাদকের অন্ধকার জগতে প্রবেশ করলেও বতর্মানে অনেকে মাদকের বড় ধরণের ডিলারে পরিণত হয়েছে।
এমআই/মআ/চখ