কিংবদন্তির কান্নাভেজা বিদায় !
চৌধুরী জাফরুল্লাহ শরাফতের ধারাভাষ্য আর শোনা যাবে না“ডান্সিং ডাউন দ্যা উইকেটে লংঅনের উপর দিয়ে তামিম ইকবাল খানের বিশাল ছক্কা”।“এই মাত্র তামিম ইকবাল প্রথম হাফ সেঞ্চুরি করার যোগ্যতা অর্জন করলেন। তাকে সংগ্রামী অভিনন্দন”।
আবহাওয়া অফিস আগেই জানিয়েছিল আজ চট্টগ্রামে বৃষ্টি হবে। কে জানত সেই বৃষ্টি চট্টগ্রামের আকাশ নয় ঝড়বে তামিমের চোখ থেকে। চট্টগ্রামের টাওয়ার ইন হোটেলের কনফারেন্স কক্ষে অশ্রু ঝড় তুললেন তামিম ইকবাল খান।
বৃহস্পতিবার (৬ জুলাই) ঝুম বৃষ্টিতে অশ্রু জলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে বিদায় জানালেন চট্টলার বিখ্যাত খান পরিবারের সন্তান তামিম ইকবাল খান।
প্রয়াত বাবাকে স্বরণ করে বললেন, গুড বাই আর্ন্তজাতিক ক্রিকেট। ইতি টানলেন ১৬ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের।
কেনিয়ার বিপক্ষে ওয়ানডে ক্রিকেট দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অভিষেক হয় তামিমের। ২০০৭ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি দেশের হয়ে প্রথম ম্যাচ খেলেছিলেন। সেই থেকে ১৬ বছর টানা খেলছেন জাতীয় দলে।
শৈশবকাল:
১৯৮৯ সালের ২০শে মার্চ কাজীর দেওরির বিখ্যাত খান পরিবারে জন্মগ্রহন করেন বাংলাদেশের সেরা ব্যাটসম্যান তামিম ইকবাল। ছোট বেলা থেকেই ক্রিকেটের পরিবেশে বেড়ে উঠা তামিম তাই শৈশব থেকেই আগাগোড়া ক্রিকেটার ছিলেন। কেননা বাবা চাচা ও বড় ভাই সবাই ছিলেন ক্রিকেটার। এ কারণেই বিদায় বেলায় বার বার বাবার কথা বলে গেছেন বাংলাদেশের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ওপেনিং ব্যাটসম্যান।
ক্রিকেট ক্যারিয়ারের সূচনা:
ব্যাট-বলের সাথেই বেড়ে ওঠা এই তামিম ইকবাল ২০০৫ সালে মাত্র ১৬ বছর বয়সেই চট্টগ্রাম বিভাগের হয়ে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে খেলার সুযোগ পান। সেখান থেকেই তার ক্রিকেট ক্যারিয়ারের সূচনা হয়। বিভাগীয় প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অসাধারণ পারফরম্যান্সের সুবাদে সেই বছরই তিনি অনুর্ধ্ব-১৯ দলের আফ্রো-এশিয়া কাপ টুর্নামেন্টে ডাক পান।
দলে সুযোগ পেয়ে তিনি ১৮, ৪২, ৬০ এবং ৬১ রানে অপরাজিত থেকে দারুণ একটি টুর্নামেন্ট শেষ করেন। সেই একই বছরের শেষদিকে ইংল্যান্ড ও শ্রীলঙ্কা অনুর্ধ্ব-১৯ দল ত্রিদেশীয় সিরিজ খেলতে বাংলাদেশে আসে। ঐ সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে মাত্র ৭৩টি বল মোকাবেলা করে ১৩টি চার ও ৬টি ছক্কা হাঁকিয়ে ১১২ রানের একটি বিধ্বংসী ইনিংস উপহার দেন, যা তাকে আলোচনায় আনতে বাধ্য করেছে। অনুর্ধ্ব-১৯ দলে অসাধারণ পারফরম্যান্সের কারণে অল্প কিছুদিনের মধ্যেই বাংলাদেশ জাতীয় দলে ডাক পান তামিম ইকবাল।
তামিমের বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ার এক নজরে—
২০০৭ সালে কেনিয়ার বিপক্ষে ওয়ানডে ম্যাচ দিয়ে আর্ন্তজাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয় তামিমের। আফগানিস্তানের বিপক্ষে নিজের শহর চট্টগ্রামে শেষ ম্যাচ খেললেন তিনি। ২৪১ ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ৩৬.৬২ গড়ে ৮৩১৩ রান করেছেন বাঁহাতি এই ওপেনার ব্যাটার। ১৪টি সেঞ্চুরির পাশাপাশি ফিফটি করেছেন ৫৬টি।
৭০ টেস্টের ক্যারিয়ারে ৩৮.৮৯ গড়ে ৫১৩৪ রান করেছেন তামিম। এই সংস্করণে বাংলাদেশের হয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক তিনি। আর্ন্তজাতিক ক্রিকেটের দীর্ঘতম এই সংস্করণে সেঞ্চুরি করেছেন ১০টি, ফিফটি ৩১টি।
আর্ন্তজাতিক টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের একমাত্র সেঞ্চুরিয়ান তামিম। ক্রিকেটের এই সংস্করণে ৭৪ ম্যাচে ২৪.০৮ গড়ে ১৭৫৮ রান করেছেন তিনি। ১১৬.৯৬ স্ট্রাইকরেটে এই রান করেছেন দেশসেরা এই ওপেনার।
সবমিলিয়ে আর্ন্তজাতিক ক্রিকেটে ২৫টি সেঞ্চুরি করেছেন তামিম। তিন সংস্করণে ১৫ হাজারেরও বেশি রান করেছেন দেশসেরা এই ওপেনার। বাংলাদেশের হয়ে আর্ন্তজাতিক ক্রিকেটে আর কোনো ক্রিকেটার এতো রান করতে পারেননি।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ১৬ বছরের দীর্ঘ ক্যারিয়ারের জন্য তামিম ধন্যবাদ দিয়েছেন সতীর্থ, কোচ, বিসিবি, পরিবার ও সমর্থকদের, ‘ক্যারিয়ারের এই দীর্ঘ পথচলায় আমার সব সতীর্থ, সব কোচ, বিসিবির কর্মকর্তাগণ, আমার পরিবার ও যারা আমার পাশে ছিলেন, নানাভাবে সহায়তা করেছেন, ভরসা রেখেছেন এবং আমার ভক্ত-সমর্থক, বাংলাদেশ ক্রিকেটের অনুসারী, সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। আপনাদের সবার অবদান ও ভালোবাসায় আমি চেষ্টা করেছি সব সময় দেশের জন্য নিজের সবটুকু উজাড় করে দিতে।