chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

মানুষের মস্তিষ্কের আকার বড় হচ্ছে!

কোনো অঞ্চলে বৃদ্ধ বয়সে পৌঁছানো মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার মানে হল, সে স্থানে ডিমেনশিয়া বা আলঝেইমার রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু গবেষকরা দেখছেন, ডিমনেশিয়া রোগীর সংখ্যা বরং কমতে শুরু করেছে। যার কারণ খুঁজতে গিয়ে তারা আবিষ্কার করেন, মানুষের ব্রেইনের আকার আগের থেকে বড় হয়ে গেছে। ১৯৩০ সাল থেকে ক্রমাগত এই বৃদ্ধি লক্ষ্য করা যাচ্ছে; যা ডিমেনশিয়া রোগের প্রবণতা কমিয়ে আনছে বলে মনে করছেন গবেষকরা।

সম্প্রতি সাইন্টিফিক আমেরিকানের এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে আসে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং গ্রেট ব্রিটেনসহ বৃহৎ জনসংখ্যার দেশগুলিতে গবেষণায় দেখা গেছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের লোকেরা গত ১০০ বছরের তুলনায় বর্তমানে বেশি দিন বাঁচেন। তারপরও সাম্প্রতিক দশকগুলিতে ডিমেনশিয়ার নতুন কেস সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে। ফ্রেমিংহাম হার্ট স্টাডি, ১৯৪৮ সাল থেকে ফ্রেমিংহাম, ম্যাসাচুসেটসে বসবাসকারী ব্যক্তিদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে আসছে। তৃতীয় প্রজন্মসহ প্রায় ১৫ হাজারেরও বেশি তথ্য অন্তর্ভুক্ত রয়েছে তাদের কাছে।

ইউটি হেলথ সান আন্তোনিওর নিউরোলজিস্ট সুধা শেশাদ্রি বলেন, ‘১৯৭০ সালের পর থেকে ডিমেনশিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা হ্রাস পেতে থাকে। ৩০ বছরের পরে এর লক্ষণ প্রকাশ পাওয়ার কথা থাকলেও তা আরও দেরিতে পাওয়া যাচ্ছিল; যা একটি আশাব্যঞ্জক খবর ছিল।’

কিন্তু তারা চিন্তা করছিলেন, ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি হ্রাসের কারণ কী?

ফ্রেমিংহামের বাসিন্দাদের মধ্যে তাদের পূর্ব বংশধরদের থেকে পাওয়া কার্ডিওভাসকুলার স্বাস্থ্য, যা ডিমেনশিয়া হওয়ার সম্ভাবনাকে প্রভাবিত করে তার উপস্থিতি ছিল। কিন্তু বর্তমানে তা উন্নতির দিকে। রোগটি প্রধানত বংশগত হলেও তাদের মধ্যে এই ধারা লোপ পাচ্ছে।

 

 

 

১৯৯৯ সালে ম্যাগনেটিক রেজোন্যান্স ইমেজিং (MRI) ব্যবহার করে ৩ হাজার ২২৬ জনের মস্তিষ্ক স্ক্যান করা হয়। যেখানে ১৯৩০ থেকে ১৯৭০ সালের মধ্যে জন্ম নেয়া মানুষের মস্তিষ্কের তথ্য ধারণ করা হয়। তার উপর ভিত্তি করে, মার্চ মাসে জামা নিউরোলজি এক বিশ্লেষণ প্রকাশ করে। যেখানে বলা হয়েছে, ১৯৩০ থেকে ১৯৭০ সালে জন্ম নেওয়াদের মস্তিষ্কের আকারে পরিবর্তন ঘটেছে।

মস্তিষ্কের আয়তন, যা মাথার খুলির মধ্যে স্থান পরিমাপ করে (এটি ইন্ট্রাক্রানিয়াল ভলিউম নামেও পরিচিত), তা ৬.৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ১৯৩০ এর দশকে জন্ম গ্রহণকারীদের পরিমাণ ১,২৩৬ মিলিলিটার ছিল; যা বেড়ে ১৯৭০ দশকে ১৩১৭ মিলিলিটার হয়েছে। এছাড়া, শ্বেত পদার্থ এবং হিপ্পোক্যাম্পাস যা মেমরি প্রক্রিয়াকরণের একটি অঞ্চলের চাবিকাঠি, উভয়ের আয়তন বড় হয়ে উঠেছে। কর্টেক্সের পৃষ্ঠের ক্ষেত্রফল (মস্তিষ্কের বাইরের স্তর) বৃদ্ধি পেয়েছে, কিন্তু কর্টেক্সের পুরুত্ব প্রায় ২০ শতাংশ সংকুচিত হয়েছে।

ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া ডেভিস মেডিকেল সেন্টারের নিউরোলজিস্ট এবং গবেষণার প্রথম লেখক চার্লস ডিকার্লি বলেন, ‘কর্টিকাল পুরুত্ব হ্রাস দেখে প্রথমে কিছুটা অবাক হয়েছিলাম। মস্তিষ্ক বড় হওয়ার সাথে সাথে এটি আরও জটিল হয়ে ওঠে; যা জিরিফিকেশন নামে পরিচিত। এটি কর্টেক্সের পৃষ্ঠের ক্ষেত্রকে প্রসারিত করে। এই পরিবর্তনের একটি সম্ভাব্য পরিণতি হতে পারে যে, পরবর্তী প্রজন্মের মানুষের মস্তিষ্ক কেবল বড় হচ্ছে না, তারা আরও আন্তঃসংযুক্তও হচ্ছে।’

শ্বেত পদার্থের বৃদ্ধি, মস্তিষ্কের কোষের সংযোজক ফাইবার সমন্বিত হওয়ার মাধ্যমে প্রাপ্তবয়স্ক অবস্থায় মস্তিষ্কের আকার শীর্ষে পৌঁছায়। গবেষকরা মনে করেন, এটি কেবল ডিমনেশিয়া নয় বরং একটি মানুষের সামগ্রিক স্বাস্থ্য এবং বিকাশে প্রভাব ফেলে।

 

শেশাদ্রি বলেন, ‘২০২৩ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, গত ৫০ হাজার বছরে মানুষের মস্তিষ্ক উষ্ণ অঞ্চলের তুলনায় শীতল অঞ্চলে আকারে ছোট হয়। তবে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে মানুষের আবির্ভাবের পর থেকে ৭ মিলিয়ন বছরে আমাদের মস্তিষ্কের আকার তিনগুণ হয়েছে।’

দ্য ইউনিভার্সিটি অফ কেমব্রিজের একজন স্নায়ু বিজ্ঞানী এবং এপিডেমিওলজিস্ট ক্যারল ব্রেইন বলেন, ‘বিশ্বজুড়ে, এমন অনেক শিশু জন্ম নেয় যারা ছোট বেলা থেকেই ডিমেনশিয়া হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তবে এখন আমরা প্রাপ্ত বয়স্কদের মস্তিষ্কে যে পরিবর্তন দেখছি তা নিয়ে আরও গবেষণা প্রয়োজন। যাতে আমরা ভবিষ্যতের কঠিন কোনো সমস্যা থেকে সচেতন হতে পারি।’

 

সূত্র- সাইন্টিফিক আমেরিকান

এই বিভাগের আরও খবর