chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

১৮ বছরেও উন্মোচন হয়নি চট্টগ্রামে ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলার রহস্য

২০০৪ সালের পহেলা এপ্রিল চট্টগ্রামে সরকারি সার কারখানা সিইউএফএলের জেটি ঘাটে খালাসের সময় ধরা পড়ে দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় অবৈধ অস্ত্রের চালান। তবে ১৮ বছর পার হলেও ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলার রহস্য এখনও উন্মোচন হয়নি।

জানা যায়, তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের নির্দেশে ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উলফার জন্য চীন থেকে আনা হয় ১০ ট্রাক অত্যাধুনিক অস্ত্র। আর তাতে পূর্ণ সহযোগিতা দিয়েছিল ডিজিএফআই এবং এনএসআইয়ের শীর্ষ নেতৃত্বের কয়েকজন। ১০ বছর পর ঘোষিত রায়ে জামায়াত নেতা নিজামী, বিএনপির বাবরসহ ১৪ জনের ফাঁসি হলেও, অমীমাংসিত রয়ে গেছে এই অস্ত্র চালানের অনেক রহস্য।

বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের প্রথম তদন্তে দাবি করা হয়েছিল মরিয়ম বেগম ওরফে বদনী বেগমসহ স্থানীয়রা এনেছিল শত কোটি টাকার এই অস্ত্রের চালান। একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার জজ মিয়ার মতো কাহিনীও সাজানো হয়েছিল দশ ট্রাক অস্ত্র মামলায়। এখানে জজ মিয়ার জায়গায় ছিলেন তৎকালীন ইউপি সদস্য মরিয়ম বেগম। এমনকি গ্রেফতার হয়ে চার মাস জেল খাটার পর ১০ বছরের বেশি সময় ধরে টানতে হয়েছিল বিশ্বজুড়ে আলোচিত অস্ত্র চালান মামলার বোঝা। অবশ্য শেষপর্যায়ে ঘোষিত রায়ে আদালত থেকে খালাস পেলেও, সেই মরিয়ম বেগম ওরফে বদনী বেগম আজও জানেন না কেন তাকে মামলায় জড়ানো হয়েছিল।

মরিয়ম বেগম ওরফে বদনী বেগম বলেন, ‘মামলা কে বা কারা দিছে তা কিচ্ছু জানি না। মামলার আসামিরা সবাই এখানে ছিলেন না। এ মামলায় আমাকে কেন জড়ানো হয়েছে আমি সেটাও জানি না।’

তদন্তে উঠে আসে, অস্ত্র মামলায় গ্রেফতার হওয়া আসামি অস্ত্রের চালান আটকের পর স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের নির্দেশে তড়িঘড়ি করে দুটি মামলা দায়ের হয় কর্ণফুলী থানায়। অফিসার ইনচার্জ আহাদুর রহমান বাদী হয়ে অস্ত্র এবং চোরাচালান আইনে দায়ের করা মামলা দুটিতেই আসামি করা হয় বদনী বেগমসহ নৌকার মাঝি-মাল্লা এবং ট্রাকের হেলপার ও চালকদের। কিন্তু অস্ত্র রহস্যের তথ্য উন্মোচন না করেই চার্জশিট দেয় পুলিশ, শুরু হয় মামলার বিচার। যে দুজন পুলিশ সার্জেন্ট হেলাল উদ্দিন এবং আলাউদ্দিনের দৃঢ়তায় অস্ত্রের চালান জব্দ করা হয়েছিল, সেই দুজনকে পরবর্তীতে অস্ত্র মামলায় ফাঁসিয়ে চাকুরিচ্যুত করে জোট সরকার।

পুরো পরিস্থিতি ১৮০ ডিগ্রিতে ঘুরে যায় সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় আসার পর। শুরু হয় বহুল আলোচিত মামলা দুটির পুনঃতদন্ত। আর তদন্তভার পেয়েই সিআইডি একে একে গ্রেফতার করে এনএসআইয়ের ফিল্ড অফিসার আকবর হোসেন খান, উপপরিচালক মেজর লিয়াকত, পরিচালক উইং কমান্ডার শাহাবুদ্দিন, মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুর রহিম, ডিজিএফআইয়ের পরিচালক মেজর জেনারেল রেজ্জুকুল হায়দার, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরকে। গ্রেফতার দেখানো হয় মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত জামায়াত নেতা ও শিল্পমন্ত্রী মতিউর রহমান নিজামীকে। নতুন করে বিচার শুরু হয় এই মামলার। ঘোষিত রায়ে বদনী বেগমসহ মাঝি-মাল্লাদের খালাস দিয়ে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় মূল ১৪ জনকে।

তৎকালীন মহানগর পিপি অ্যাডভোকেট কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বিএনপির আমলে মামলাটি করা হয়। এখানে অপরাধীদের আসামি করা হয়নি। এখানে মাঝি-মাল্লা ও লেবারদের আসামি করা হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘পরবর্তীতে তদন্তে এটা অনেক গোপনভাবে আনা হয়েছে। বিশেষ করে পরবর্তীতে ট্রায়ালে দেখা গেছে এখানে এনএসআই, ডিজিএফআইয়ের লোকজন জড়িত আছেন। সবার যোগসাজশে বিশাল অস্ত্রের চালান এখানে এসেছিল।’

উদ্ধার করা অস্ত্রের মধ্যে আদালতের নির্দেশে ৭৯০টি অস্ত্র ব্যবহারের জন্য র‌্যাবকে দেয়া হয়েছিল।

চখ/জুইম

এই বিভাগের আরও খবর