chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

চট্টগ্রামে রাস্তায় “শৃঙ্খলায় ফেরাতে” ৯ মাসে সাড়ে ৩১ হাজার মামলা

চট্টগ্রাম নগরের সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে মামলা ও জরিমানার হার বাড়লেও দূর করা যায়নি দীর্ঘ দিনের চেপে বসা বিশৃঙ্খলা। গত ৯ মাসে চট্টগ্রাম নগরে ৩১ হাজার ৬৫২ টি মামলা করেছে সিএমপির ট্রাফিক বিভাগ। ৩৫ হাজার ৪৭৮টি গাড়ি আটক করে জরিমানা আদায় করেছে  ১২ কোটি ৬৪ লাখ টাকা।

এরপরও বাস্তব অবস্থা হচ্ছে- নগরীতে সড়কে বিশৃঙ্খলা চলছেই। সড়কে এখনও চলছে লক্কড়-ঝক্কড় বাস। যেখানে-সেখানে বাস থামিয়ে যাত্রী উঠানো, পাল্লা দিয়ে গাড়ি চালানো, সিটিং সার্ভিসের নামে বাড়তি ভাড়া আদায়, প্রাইভেট কার চালানোর লাইসেন্স নিয়ে বাধাহীনভাবে চালাচ্ছেন বড় বাস। বেপরোয়া গাড়ি চালানোর প্রবণতা তো আছেই। সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে পুলিশ ও মালিক পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময়ে নানা প্রতিশ্রুতি দেয়া হলেও বাস্তবে এর কোনো প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না।

নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের নেতারা বলছেন,শুধু মামলা ও জরিমানা করে আচরণে পরিবর্তন আনা সম্ভব নয়।

চট্টগ্রাম নগরে ট্রাফিক ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা আনতে চট্টগ্রাম মেট্রেপলিটন পুলিশের (সিএমপি) ট্রাফিক বিভাগ ৪টি জোনে ভাগ হয়ে কাজ করছে। ৪ জোনে খবর নিয়ে জানা গেছে, গত ৯ মাসে ৩১ হাজার ৬৫২ টি মামলা করা হয়েছে নগরে চলাচলরত গাড়িগুলোর বিরুদ্ধে। এছাড়া একই বিষয়ে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) এর ভ্রাম্যমান আদালত ১ হাজার ৭৮৮ টি মামলা করে। এতে ৪৮ লাখ ৭৯ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।

সিএমপির ট্রাফিক বিভাগের মামলা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৯ মাসে সিএমপির ট্রাফিক দক্ষিণ জোনে মামলা রেকর্ড করা হয়েছে ১২ হাজার ১০৪ টি। একই সময়ে  ১০ হাজার ৬৬৭টি গাড়ি আটকের মাধ্যমে ৩ কোটি  ৬৯ লাখ ৩৬ হাজার  টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।

ট্রাফিক উত্তর বিভাগে ৯ মাসে মামলা হয়েছে ৮ হাজার ৩৮৩টি। তারা গাড়ি আটক করেছে ৮ হাজার ১৯০টি। এতে জরিমানা আদায় করেছে  ৩ কোটি ১২ লাখ ৭৯ হাজার ১৭৫ টাকা।

সিএমপির ট্রাফিক পশ্চিম বিভাগে ৬ হাজার২৮টি মামলা হয়েছে গেল ৯ মাসে। এসময় ১০ হাজার ৩৪৫ টি গাড়ি আটকের মাধমে ৩ কোটি ৫০ লাখ ৯১ হাজার ১৫০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে।

সবচেয়ে কম মামলা দায়ের হয়েছে ট্রাফিকের বন্দর বিভাগে। সেখানে ৫ হাজার ১৩৭টি মামলায় রুজু হয়েছে। তারা ৬ হাজার ২৭৬ টি গাড়ি আটকের মাধমে ২ কোটি ৩০ লাখ ৩ হাজার ৫০ টাকা জরিমানা করেছে।

৯ মাসে ৪ জোনে মোট সাধারণ মামলা ৩১ হাজার ৬৫২টি।  ৩৫ হাজার ৪৭৮টি গাড়ি আটক করে মোট ১২ কোটি ৬৩ লাখ ৯ হাজার ৫২৫ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে।

চট্টগ্রাম নগরে কর্মরত একাধিক ট্রাফিক সার্জেন্ট জানান, ট্রাফিক ব্যবস্থায় জরিমানা বিশ্বব্যাপী। এটা একটা বৈধ পদ্ধতি। এটা আছে বলেই চট্টগ্রাম  শহরে হাজার হাজার গাড়ি চলে, শৃঙ্খলা ধরে রাখা গেছে, তা না হলে আরও খারাপ অবস্থা হতো। দুর্ঘটনা ও অনিয়ম আরও বেশি হতো।

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থার কারণেই সড়কে শৃঙ্খলা ফিরছে না। উন্নত বিশ্বেও মামলা ও জারিমানা হয়। তবে উন্নত বিশ্বে মামলার টাকা পরিশোধ করতে হয় চালককে, আর আমাদের দেশে তা পরিশোধ করেন মালিক পক্ষ।  তিনি বলেন, যতক্ষণ চালককে লাগাম লাগানো না যাবে ততক্ষণ এর সুফল মিলবে না।

এমনিতে চট্টগ্রাম নগরের রাস্তাঘাটের সংখ্যা ও পরিসরের তুলনায় যানবাহনের সংখ্যা

মাত্রাতিরিক্তভাবে বেশি। এ শহরে চলাচলকারী  বাস-মিনিবাসের পাশাপাশি  ব্যক্তিগত গাড়ি, ট্যাক্সি ক্যাব, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, টেম্পো, হিউম্যান হলারজাতীয় ছোট যানবাহন, মোটরসাইকেল, রিকশা ইত্যাদি হরেক রকম ও আকারের যানবাহনের সংখ্যা মোট রাস্তাঘাটের ধারণক্ষমতার তুলনায় অনেক বেশি। তা ছাড়া যান্ত্রিক ত্রুটিযুক্ত, পুরোনো ও চলাচলের অনুপযুক্ত ফিটনেসবিহীন যানবাহনের সংখ্যাও প্রচুর। এ রকম পরিস্থিতিতে যানবাহন চলাচলে শৃঙ্খলা নিশ্চিত করা এবং সামগ্রিক সুব্যবস্থাপনা প্রয়োজন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

চট্টগ্রাম অটো রিকশা অটোটেম্পু শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম খোকন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এ সেক্টরে অরাজগতা চলে আসছে। ইচ্ছা করলেই রাতারাতি সবকিছু বদলে দেয়া সম্ভভ নয়। সবাই মিলে এ সেক্টর নিয়ে কাজ করতে হবে। তাহলেই পরিবহনে বিশৃঙ্খলা নিয়মে আনা সম্ভব।

একাধিক ট্রাফিক সার্জেন্ট বলেন, গাড়ির ফিটনেস সনদ দিয়ে থাকে বিআরটিএ। আমরা নিয়মিত সড়কে অভিযান চালিয়ে থাকি। ফিটনেসবিহীন গাড়ি পেলে ডাম্পিং করা হয়, মামলাও দেয়া হয়। আমরা রাস্তায় বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছি। তবে অভিযানের পাশাপাশি চালকদের দক্ষ প্রশিক্ষণ যেমন জরুরি তেমনি রাস্তাও বাড়াতে হবে।

নচ/চখ

এই বিভাগের আরও খবর