কুকুর নিধনে অনুমতি, সমালোচনায় পৌর মেয়র
খাগড়াছড়ি পৌরসভা কর্তৃপক্ষ শহরের কুকুর নিধনের অনুমোদন দেওয়ায় তীব্র সমালোচনা করছেন প্রাণী প্রেমীরা। তারা বলছেন, প্রাণী কল্যাণ আইন ভেঙে এই অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
সমালোচনার মুখে পৌর মেয়র বলছেন, তিনি সচেতনভাবে এই অনুমতি দেননি।
কিন্তু এর মধ্যেই সেই অনুমোদনের কপি হাতে নিয়ে সনাতনী ফাঁদ দিয়ে পৌরসভা এলাকা থেকে কুকুর ধরছে একটি চক্র। নিধনের পর সেসব কুকুর সীমান্তবর্তী উপজেলা পানছড়ির দুধকছড়া হয়ে পাচার হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
খাগড়াছড়ি পৌরসভার অনুমোদনের চিঠির সূত্রে জানা যায়, আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ৬ সেপ্টেম্বর পানছড়ি উপজেলার কলজয় ত্রিপুরাকে কুকুর নিধনের অনুমোদন দেওয়া হয়।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, “খাগড়াছড়ি পৌর এলাকায় যত্রতত্র ভাসমান বেওয়ারিশ কুকুর লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এদের জন্য গৃহপালিত পশু, সাধারণ মানুষের জনজীবনের নানা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। জনস্বার্থের কথা চিন্তা করে পৌর এলাকা থেকে বেওয়ারিশ কুকুর ধরে নিয়ে যাওয়ার অনুমতি প্রদান করা হলো।”
তবে সেপ্টেম্বরে অনুমতি পেলেও সম্প্রতি শহর থেকে কুকুর ধরা শুরু করেছেন কলজয় ত্রিপুরা। তিনি বলেন, “এ পর্যন্ত পৌর শহর থেকে ২০টা কুকুর ধরেছি। “
তিনি আরও বলেন, “এসব কুকুর দুধক ছড়া হয়ে সীমান্তের ওপারে পাঠানো হয়। এখানে কুকুর পরিবহন বাবদ আমি আড়াই হাজার টাকার মতো গাড়িপ্রতি ভাড়া পাই। আর যারা কুকুর নিধন করে তারা দৈনিক ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা পায়। “
পিপলস ফর অ্যানিম্যাল ওয়েলফেয়ারের প্রতিষ্ঠাতা রাকিবুল হক এমিল জানান, ২০১৯ সালে করা প্রাণী কল্যাণ আইনে মালিকাবিহীন কোনো প্রাণী নিধন বা স্থানান্তর দণ্ডনীয় অপরাধ। এ ছাড়া ২০১৪ সালে করা একটি প্রাণী প্রেমী সংগঠনের রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কুকুর নিধনে নিষেধাজ্ঞাও রয়েছে আদালতের।
“সেখানে একজন জনপ্রতিনিধি এবং সরকারের দায়ত্বিপ্রাপ্ত মেয়র কিভাবে অবৈধ কাজের প্রকাশ্য অনুমোদন দেন? প্রাণী কল্যাণ আইন, ২০১৯ মেয়রকেও এই অনুমোদন দেওয়ার অধিকার দেয়নি।”
তিনি আরও বলেন, “একইসঙ্গে কোনো প্রাণীকে বাংলাদেশের প্রকৃতি থেকে ধরে নিয়ে ভারতে পাচার করা অবৈধ। মিজোরাম সরকারও কুকুরের মাংস বিক্রি অবৈধ ঘোষণা করেছে।”
এদিকে কুকুর নিধনের অনুমোদন দেয়া নিয়ে খাগড়াছড়ি পৌরসভার মেয়র নির্মলেন্দু চৌধুরী বলেন, “আমি সচেতনভাবে কুকুর নিধনের অনুমোদন দিইনি। এটা অনিচ্ছাকৃত। অফিসের বিভিন্ন ফাইল স্বাক্ষর করার সময়ে কখন যে কুকুর নিধনের অনুমোদনের কপিতে স্বাক্ষর করেছি তা আমার জানা নেই।
“আমি এর জন্য দুঃখ প্রকাশ করছি। রাষ্ট্র যে প্রাণী কল্যাণ আইন করেছে আমি তার পক্ষে আছি।’
এদিকে কুকুর পাচার হওয়া নিয়ে খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, ”আমাদের জেলা থেকে কুকুর ভারতে নিয়ে যাচ্ছে এ তথ্যটি আমার জানা নেই। তথ্যটি আমরা ভেরিফাই করে দেখব। আমাদের লেভেল থেকে কিছু করার থাকলে আমরা তার ব্যবস্থা নেব।”